আটক রোহিঙ্গা শিশুদের মুক্তি দিতে মিয়ানমারকে জাতিসংঘের চাপ

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ মিয়ানমারকে অবিলম্বে আটক রোহিঙ্গা শিশুদের মুক্তি দেওয়ার আহবান জানিয়েছে। দেশটির রাখাইন অঞ্চলে সামরিক অভিযান চলাকালে এসব শিশুকে আটক করা হয়। অন্তত ৬’শ শিশুকে আটক করে রেখেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গত বছরের অক্টোবর মাসে একটি পুলিশ চৌকির ওপর হামলার পর হতাহতের ঘটনায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের আবাসস্থলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। মিজিমা

এ অভিযানের পর অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের তদন্তে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট সহ এমনকি কারাগারে আটক রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের তথ্য মেলে। এর পাশাপাশি শিশুদের আটক করে রাখার ঘটনাটি ধরা পড়ে।

ইউনিসেফের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জাস্টিন ফরসিথ বলেন, মিয়ানমারের অবিসংবাদিত নেত্রী অং সাং সুচিকে বুথিডং কারাগারে শিশু কিশোরদের আটকের বিষয়টি জানানো হয়েছে। কারাগারে আটক শিশুদের মুক্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে। জাস্টিন ফরসিথ সম্প্রতি মিয়ানমার সফর করে এসেছেন। গত শনিবার এএফপিকে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলেন। জাস্টিন ফরসিথ বলেন, যে কোনো শিশুকে আটক আমাদের জন্যে উদ্বেগের ব্যাপার।

জাস্টিন ফরসিথ এও জানান, নোবেল বিজয়ী সুচি ও মিয়ামারের সেনাবাহিনী প্রধান দেশটির কারাগারে শিশুদের আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও তাদের মুক্তির ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেননি।

মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও হতৈ এব্যাপারে এএফপির কাছে গত রোববার কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ মিয়ানমারে একটি মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ মিশন রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যাযজ্ঞের অভিযোগ তদন্ত করে দেখবে। এর আগে জাতিসংঘের তরফ থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে তদন্ত করে এধরনের জাতিগত দাঙ্গা ও হত্যাযজজ্ঞের অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি মিয়ানমার অস্বীকার করে আসছে। সুচি গত সপ্তাহে বিবিসি’কে বলেন, রাখাইনে যা ঘটছে তাকে জাতিগত নির্মূল বলা অতিরিক্ত কথন মাত্র। মিয়ানমার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তদন্তে রাখাইনে আটক অবস্থায় মাত্র ৮ জনের মৃত্যুর খবর উদঘাটিত হয়েছে।

মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার দূত ইয়াংঘি লি বলেন, বুথিডং কারাগারে সাড়ে ৪’শ রোহিঙ্গা মুসলমান আটক রয়েছে। স্বজন বা আইনজীবীদের সঙ্গে তাদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের জন্যে আন্তর্জাতিক বিশ্বে মিয়ানমারকে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসতে হচ্ছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে দাবি করছে তারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে অবৈধভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসছে।

এদিকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভ্যাশন আর্মি নামে একটি গ্রুপ গত অক্টোবরে মিয়ানমারে পুলিশ চৌকির ওপর হামলার দায় স্বীকার করে বলছে, রোহিঙ্গদের ওপর হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ অমানবিক আচরণের প্রতিবাদেই তারা ওই হামলা করেছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তা জাস্টিন ফরসিথ জানান, মিয়ানমারের বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে এটুকু উপলব্ধি এসেছে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর বৈষম্যই তাদের জঙ্গি মনোভাব হয়ে উঠতে সাহায্য করছে। ফরসিথ আরো বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে যদি আপনি রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না করেন, বিশেষ করে তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের কোনো সুরাহা না হয় তাহলে তারাও পাল্টা আঘাত দিতে শুরু করবে এবং আংশিকভাবে হলেও তা ঘটতে শুরু করেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫