সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য সরাতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥
সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে গ্রিক ভাস্কর্যটি নিয়ে বিক্ষুব্ধ ওলামাদের একাংশ। তারা চাইছেন, ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়া হোক। তারা এ ইস্যুতে কর্মসূচি দিতে চাইছেন। সরকারের উপর চাপ দিচ্ছেন ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার। তবে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে এধরনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আস্থা রাখতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও মনে করেন ভাস্কর্যটি ওখানে থাকা উচিত নয়। তিনি ওলামাদের বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে গ্রিক ভাস্কর্যটি এল কি করে। আমি নিজেও এটি পছন্দ করিনি। এটা বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কথা বলবেন।

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে একদমই হঠাৎ করে। তারা এটি স্থাপন করার আগে বিভিন্ন দিক বিচার বিবেচনা করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেখানে ঘাটতি থাকতে পারে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে এই ধরণের একটি ভাস্কর্য রাখা উচিত হবে না। এটা সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে এই বিষয়ে একটি সুরাহা হবে।

আইন মন্ত্রণালয়ের এই ব্যাপারে কোন কিছু করনীয় আছে কিনা কিংবা কোন উদ্যোগ নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের করণীয় কিছু নেই। এই কারণে আইন মন্ত্রণালয় কোন উদ্যোগও নিবে না। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে ওলামাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদেরকে বলেছেন। ধৈর্য্য ধরতেও বলেছেন। তিনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কথা বলবেন বলেছেন। এখন অপেক্ষা করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের ভেতরকার বিষয়টি প্রধান বিচারপতির এখতিয়ারাধীন। এখানে মন্ত্রণালয়ের কোন কিছু করার নেই।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টে স্থাপিত ভাস্কর্যটি একটি প্রতীকি ভাস্কর্য। এরমাধ্যমে ন্যায় বিচারের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। ন্যায় বিচার হচ্ছে কালো কাপড়ে বাঁধা চোখ। যেটা সত্য সেটাই বিচার করা হবে। আর এক হাতে নিক্তি ও অন্য হাতে তলোয়ার। নিক্তিতে বোঝানো হয় বিচার সবার জন্য সমান। এটি একটি প্রতীকি ভাস্কর্য হলেও এটা কবে কখন কে কিভাবে স্থাপন করেছে তা আমার জানা নেই। আর এটা করার সময়ে আমরা একটি মুসলিম দেশ হিসাবে যেভাবে বিষয়টি বিশ্লেষণ ও বিবেচনা করা দরকার ছিল তা করা হয়েছে কিনা এটা আমার জানা নেই। তবে এই ধরনের ভাস্কর্য ইরানে রয়েছে। অমুসলিম দেশের বেশ কয়েকটি দেশের আদালত চত্বরে এই ধরণের ভাস্কর্য রয়েছে। মুসলিম দেশে তেমন নেই। এই কারণে আমাদের এখানেও থাকবে কিনা সেটা দেখতে হবে।

যদিও এই বিষয়টি নিয়ে ওলামারা আপত্তি জানিয়েছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে ভাস্কর্য সরানোর বিষয়েও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী আর প্রধান বিচারপতির মধ্যে কবে কথা হয় তা দেখতে হবে। তাদের মধ্যে কথা হলে একটি সিদ্ধান্তে হয়তো পৌঁছাবেন।

এটি এখানে রাখা উচিত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের উচিত অনুচিতের বিষয় না। এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি চলে গেছে তারাই সিদ্ধান্ত নিবেন।

আপনার কোন সাজেশন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন সাজেশন নেই। তবে এটুকু বলতে পারি প্রধানমন্ত্রী সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন। এই ক্ষেত্রেও নিবেন।

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট এলাকার চত্বরে স্থাপিত ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছেন ওলামারা। তাদের দাবি এটা সরাতে হবে। তদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এনিয়ে মঙ্গলবার রাতে কওমী মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে কওমি মাদ্রাসাগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধি ও  হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সরকারের নীতি নির্ধারক মন্ত্রীদের বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আবদুল হালিম বোখারি,  শোলাকিয়া মসজিদের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা নূর  হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আবদুল বাসিত বরকতপুরী, মুফতি রুহুল আমীন, মাওলানা সুলতান যওক নদভী, মাওলানা  জোবায়ের আহমদ  চৌধুরী।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বলেছেন, হাইকোর্টের চত্বরে গ্রিক এমএসিসের একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। এটি আমাদের এখানে কেন আসবে? এটা আমাদের দেশে আসার কথা নয়। গ্রিকদের পোশাক ছিল এক রকম। ওই ধরণের একটি ভাস্কর্য তৈরি করে  সেখানে শাড়ি পরানো হয়েছে। এটা হাস্যকর ব্যাপার।

তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন বলে তাদেরকে বলেন, এই ভাস্কর্যটি  এখানে  কেন করা হলো, কারা, কিভাবে করল  সেটা জানি না। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতিকে খবর দিয়েছেন। শিগগিরই তার সঙ্গে বসবেন ও আলোচনা করবেন।  তিনি এর কারণও ব্যাখ্যা করে বলেছেন, আমিও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এ ভাস্কর্যটি এখানে থাকা উচিত হবে না।

কওমি মাদ্রাসার আলেমরা ভাস্কর্য সরানোর জন্য সরকারকে বলে আসছিল। সরকার এখনও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আর বৈঠকে উপস্থিত ওলামাদের তিনি ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। বলেন, আপনারা ধৈর্য ধরুন। এ নিয়ে কোনো কিছু করবেন না। একটা ডিসিশন হয়েছে। এটি এখন সরাতে হবে। তিনি তাদেরকে বলেন, আপনারা আমার ওপর ভরসা রাখুন।  যা করা দরকার আমি তা করব।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫