বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
নয়াদিল্লি: তিন দিনের ভারত সফরে এসে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। দুই দেশে রেল ও বাস চলাচলের নতুন পথ খুলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেনজির সৌজন্য দেখিয়ে তাঁকে বিমানবন্দরে গিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। তবু এ বারও খালি হাতেই ঢাকা ফিরছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে মোদি ও হাসিনাকে। হাসিনা দেশে ফেরার পর তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল তাঁর দল আওয়ামি লীগ। কিন্তু হাসিনার নির্দেশেই সেই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনবার মমতা ও মোদির সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হওয়ার পরও তিস্তার বরফ গলাতে পারেননি হাসিনা।
হাসিনার এ বারের সফরের আলোচ্যসূচিতে তিস্তা চুক্তি ছিল না। কিন্তু অলক্ষ্যে হাসিনার গোটা সফরেই ছায়া ফেলেছে তিস্তা। প্রধানমন্ত্রী তিস্তার জলের আশ্বাস নিয়ে দেশে ফিরলে আগামী নির্বাচনে তা বড় হাতিয়ার হত আওয়ামি লীগের কাছে। শনিবার মোদি প্রকাশ্যেই এ নিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন হাসিনাকে। সেই কারণেই সম্ভবত তাঁর দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি সংবর্ধনার আয়োজন করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সে সবেই জল ঢেলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনড় অবস্থান। রোববার রাতে রাষ্ট্রপতি ভবনে হাসিনার সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে এসে মমতা জানিয়ে দিলেন , ‘তিস্তা নিয়ে নতুন করে কোনও কথা হয়নি। যা বলার আগেই বলেছি। ‘তবে তিস্তার তিক্ততা অন্তত ভোজসভার উষ্ণ পরিবেশকে ব্যাহত করতে পারেনি। নৈশভোজ থেকে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ফিরে রীতিমতো উচ্ছসিত কণ্ঠে মমতা বলেন , ‘হাসিনাদির সঙ্গে অনেক গল্প হল। দিদি আমায় বললেন যে আমি এত কম কেন খাচ্ছি!
আমি ওঁকে বললাম আমি তো কমই খাই। হাসিনাদি বলেছেন ঢাকায় গেলে আমায় নিজের হাতে রান্না করে আমায় খাওয়াবেন। আমিও বলেছি তা হলে আমিও আপনাকে রান্না করে খাওয়াব। ‘ রাষ্ট্রপতি ভবনে মোদির সঙ্গে সাধারণ সৌজন্য বিনিময় ছাড়া বিশেষ কথা হয়নি মমতার। মোদির টেবিলের থেকে বেশ কিছুটা দূরেই বসেছিলেন তিনি। ভোজসভায় হাজির ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, পীযূষ গোয়েল , প্রধান বিচারপতি জে এস কেহর। তৃণমূলের পক্ষে মমতার সঙ্গে ছিলেন সাংসদ সৌগত রায়। আজমির শরিফ থেকে ফিরে এ দিনই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলেন হাসিনা। নৈশভোজে কংগ্রেসের পক্ষে হাজির ছিলেন গুলাম নবি আজাদ।
রাষ্ট্রপতির ডাকে প্রোটোকলে ঘেরা এই সরকারি নৈশভোজে হাসিনার সঙ্গে তিস্তা নিয়ে আর কোনও আলোচনার অবকাশ ছিল না হাসিনা -মমতার। চল্লিশ কোর্সের এলাহি ডিনারে মাছের পদই ছিল ছয় রকম। বাঙালি পদের দাপটই বেশি ছিল এই ভোজসভায়। মমতা নিজেই জানিয়েছেন ১৪ থেকে ১৫ বার প্লেট বদল করা হয়েছে। তবে শনিবারের তিক্ততা অন্তত বিদায়বেলায় মনে রাখেননি হাসিনা বা মমতা কেউই। বাঙালি রাষ্ট্রপতির নিবাসে নিখাদ বাংলায় হাসি -ঠাট্টা এবং গল্পে মেতে ওঠেন দুই নেত্রী। ভোজের আগে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে একদিকে যেমন ছিল জীবনানন্দের ‘আবার আসিব ফিরে ‘ এবং লোকগান ‘হৃদ মাঝারে রাখিব। ‘ তিস্তা নিয়ে তাঁর এই কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা ভালোই জানেন মমতা। ভোজসভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপে মমতা তাঁদের বারেবারে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি বাংলাদেশের ভালো চান , বাংলাদেশকে তিনিও ভালোবাসেন। কিন্তু রাজ্যের স্বার্থেই তিস্তার জল তাঁর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এই সময় থেকে নেওয়া