স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাড়ারন রেল ক্রসিং থেকে বরমী বাজার পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার আধা সংষ্কার সড়ক। এ সড়কে জনদুর্ভোগ স্থায়ী হয়ে পড়েছে। সড়কে যাতায়াতকারী মানুষ, পরিবহন সব কিছু আধা সড়ক সংস্কারের কাজে ব্যবহৃত ইটের লাল ধুলিকণায় রঙিন হয়ে যাচ্ছে।
শ্রীপুর-বরমী সড়কের গাড়ারন, সোনাকর, বড়পানি, শিমুলতলী, তাঁতীসুতা, বরামা, কায়েতপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ নিত্য দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তারা আফসোস করছেন ভাঙ্গা রাস্তাই ভাল ছিল। সংষ্কার করতে গিয়ে মাঝপথে থেমে যাওয়ায় ভাঙ্গা রাস্তার দুর্ভোগের চাইতে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
সড়কটি গত তিন বছর যাবত চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় ছোট খাট দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। গত আট মাস আগে সড়কটি সংষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। দুই কিলোমিটার অংশ সংষ্কার করা হয়। বাকি অংশে ইটের খোঁয়া বিছিয়ে রাখা হয় প্রায় আট মাস যাবত। পিচ ঢালাই না দেওয়ায় ইটের খোয়া ধুলোবালিতে পরিণত হয়েছে। যানবাহন চলাচলের ফলে তা উড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফসলি জমি, বাড়ি ঘরে পড়ছে।
গত প্রায় আট মাস যাবত এ সড়কে যাতায়াতকারীদের সঙ্গী হয়ে উঠেছে এ দুর্ভোগ। সড়ক থেকে ইটের বালি উড়ে ঘরের ভিতর, ঘরের চাল, সব্জী ক্ষেত, বীজতলা, ধান ক্ষেত, সড়কের পাশে সারি সারি গাছের ওপর পড়ে সব লাল হয়ে গেছে। লাল বালির মোটা আবরণ জমে স্তুপ হয়ে পড়েছে।
গাড়ারন এলাকায় বসবাসকারী পিয়ার আলী কলেজের সহকারী অধ্যাপক সোহরাব হোসেন বাদল বলেন, বাসা থেকে পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়ে বের হই। কর্মস্থলে যাওয়ার আগেই লাল রঙে রঙিন হয়ে যেতে হয়। গৃহিণীরা এখন আর বাড়িতে থাকতে চায় না।
সোনাকর এলাকার কামরুজ্জামান জানান, এ ধুলোর কারণে দু’সন্তানসহ স্ত্রী শ্বাসকষ্টে ভুগছে। চিকিৎসক ধুলো থেকে নিরাপদে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে নিজ বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে থাকতে পারছি না।
গাড়ারণ মাদ্রাসার শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, শিম, লাউসহ সব্জীর ফলন ভাল হয়েছে। কিন্তু খাওয়ার উপায় নেই। কাঁঠাল গাছে মুচি ধরেছে। কাঁঠাল গাছ ও সব্জী বাগানে লাল বালির স্তর পড়েছে। বোরো ধানের বীজতলা, ধান ক্ষেত সড়ক থেকে উড়ে আসা বালিতে একাকার হয়ে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আশিক বলেন, ধূলো-বালিতে এলাকার মানুষের ঠান্ডা, সর্দি, কাশি লেগেই রয়েছে। ঘরের বিছানাপত্র, আসবাবপত্র সারাদিনে চারবার পরিষ্কার করতে হয়। একদিন পরিষ্কার না করলে দেখে মনে হয় হাজার বছরের পুরনো।
গৃহিণী তাছলিমা আক্তার বলেন, রান্না ঘরের চারপাশে কাপড় ঝুলিয়ে ধূলো বালি থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। খাবার দাবারে ইটের ধূলো বালি পড়ছে নিয়মিত।
তাঁতীসুতা নতুন বাজারের ব্যবসায়ী কাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, গত সাত মাস যাবত ব্যবসায়িক মন্দা দেখা দিয়েছে। সড়ক থেকে প্রতিদিন দোকানের আসবাবপত্রে ধুলাবালির স্তর পড়ছে। ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে বাজারের ব্যবসায়ীরা মিলে চাঁদা উঠিয়ে সড়কে পানি ছিটিয়েছি। এখন আর পারছি না। তাই দোকানপাটও খুলি না।
শ্রীপুরে রানার গ্যারেজ থেকে অটো ভাড়ায় চালান আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, একবার এ সড়ক দিয়ে গেলে ফেরার পথে খালি আসতে হয়। ধুলোবালির কারণে এ সড়কে অটোরিক্সার যাত্রী পাওয়া যায় না। গত সাত মাস যাবত এ অবস্থা চলছে।
এসব বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেন বলেন, সাত কিলোমিটার সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ সংষ্কার করা হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন বেশি চলাচল করে। সড়কে ইটের খোয়া দেয়ার পর কাজের ধরণ পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে আগের ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। নতুন নকশা ও পরিকল্পনা তৈরী করে সপ্তাহ দু’এক আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। টেন্ডার হলে সংষ্কার কাজ শুরু হবে।