বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
প্রতিষ্ঠার পর পাঁচবার আল্টিমেটাম দিয়েও স্থায়ী ক্যাম্পাসে নেয়া যায়নি ৩৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে। এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে করণীয় ঠিক করতে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে শিক্ষা মন্ত্রালয়। গত ৯ই ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (্ইউজিসি)কে। ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসের সর্বশেষ প্রতিবেদনসহ না যাওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির মধ্যে এ সম্পর্কে একটি সমন্বয় সভা জর“রি এবং সেটি করতে শিক্ষামন্ত্রী আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গতকাল রাজধানীর উত্তরায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আল্টিমেটার দেয়ার পরও যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাননি, তাদের ছাত্র ভর্তি করতে দেয়া হবে না, সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, তাদের আর কত সময় দেবো। এবার ব্যবস্থা নেয়ার পালা। কী ব্যবস্থা নেয়া হবে? এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সেটা বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে। ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, চিঠির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট শাখাকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি, তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ একাট্টা হয়ে আরও সময় নিতে চান। এজন্য তারা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী সময়ও নির্ধারণ করেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে খোদ সরকারের কাছে নিষ্কটক জমি চাচ্ছেন। এসব বিষয়ে কথা বলতে তারা দুই দফা শিক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে পত্র দিয়েছেন। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত সাক্ষাতের অনুমতি মিলেনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, মালিকপক্ষকে আর সাক্ষাৎ দিতে রাজি নন মন্ত্রী। তিনি অ্যাকশনে যাওয়ার পক্ষে। এরই অংশ হিসেবে জরুরি বৈঠকে করণীয় ঠিক করবেন। প্রাথমিক ধাপে শোকজ, এরপর বিশ্ববিদ্যালয়কে কালো তালিকাভুক্ত করা, শিক্ষার্থী ভর্তিতে সতর্কতাবাণী এবং তাদের বিরুদ্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী আর কী কী অ্যাকশন নেয়া যায়, তা জানতে চাওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ৭ বছরের মধ্যে যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাবে, তাদের পাঠদানের স্বীকৃতি বাতিলসহ কয়েক ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা আছে আইনে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এসব আইন উপেক্ষা করে কয়েক দফা তাদের মৌখিকভাবে সময় দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। আইন ও শর্তানুযায়ী প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ওই শর্ত লঙ্ঘন করেছে। ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হওয়া পর রেড অ্যালার্ট জারি করে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের এই নির্দেশনা আমলে নেয়নি। পরবর্তীকালে দ্বিতীয় দফায় ২০১২ সালে, তৃতীয় দফায় ২০১৩ সালে, চতুর্থ দফায় ২০১৫ সালের জুন এবং পঞ্চম দফায় ২০১৭ সালের ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়া হয়। পাঁচ দফা আল্টিমেটামেও কাজ হয়নি। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করেনি। আইন অনুযায়ী স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এক একর এবং অন্য এলাকায় দুই একর নিজস্ব জমি থাকতে হবে।
যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, সিটি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বিজিসি ট্রাস্ট, এশিয়া প্যাসিফিক। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির চাপে সম্প্রতি দুটি বিশ্ববিদ্যালয় আশুলিয়ায় শুধু জমিতে টিনের শেড করে স্থায়ী ক্যাম্পাস দেখানো হয়েছে। মূলত ওইখানে একাডেমিক কোনো কার্যত্রুম স্থানান্তর হয়নি।
অন্যদিকে ঢাকার আশপাশে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেও সেখানে পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে না ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়। এই ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল, লিডিং, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অব সায়েন্সেস, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি। আর স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে ১০টি। তারা হলো গ্রীন, সাউদার্ন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দি পিপলস, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল, ইস্টার্ন, বাংলাদেশ ইসলামী, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা এবং আশা ইউনিভার্সিটি। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের লক্ষ্যে জমি ক্রয় করেছে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর মধ্যে স্টেট, ভিক্টোরিয়া, প্রাইম এশিয়া, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, মেট্রোপলিটন, সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটি। আর ফাউন্ডেশনের জমিতে ক্যাম্পাস রয়েছে সাউথ ইস্ট এবং মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির। আর এখন পর্যন্ত জমিই কিনেনি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি। আর মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইবাইস ইউনিভার্সিটির। মানবজমিন