সাড়ে ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥

ঢাকা: এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্বল্প সময়ে ও সহজে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। যে কারণে ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে লেনদেনের পরিমাণ; মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এখন গড় লেনদেন ছাড়িয়েছে সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা; যা কিনা বাংলাদেশের মাঝারি সাইজের একটি ব্যাংকের লেনেদেনের সমান বা কাছাকাছি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৫ সাল জুড়েই প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের প্রথম মাসেই (জানুয়ারি) প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৫৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথম মাসে মোট লেনদেন হয়েছে ১৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। যা আগের মাস ডিসেম্বরে ছিল ১৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।
কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় অবস্থিত একটি শাখায় (যে শাখাগুলোতে বেশি লেনদেন হয়) প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় প্রায় ৩-৪ কোটি টাকা। যেটা ধরে হিসেব করলে একটি শাখার মাসিক লেনদেন দাঁড়ায় ৯০-১২০ কোটি টাকা। যে ব্যাংকের ১০০টি শাখা রয়েছে সে ব্যাংকটির মাসিক লেনদেন দাঁড়ায় ৯-১২ হাজার কোটি টাকা। যেসব ব্যাংকের ১৫০টি বা তার কাছাকাছি শাখা রয়েছে সেগুলোর লেনদেন হয় ১৩ হাজার ৫শ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে সবগুলো ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংকে একক মাধ্যম হিসেবে ধরলে তা মাঝারি মানের একটি ব্যাংকের সমান বা কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমটিতে সহজে লেনদেন করা যায় বলেই এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সবাই যখন এ মাধ্যমে লেনদেনে আসতে শুরু করছে তখনই আসলে এর লেনদেন সাইজ বড় হতে শুরু করেছে।’ ১৬ হাজার কোটি টাকার লেনদেনকে মাঝারি মানের একটি ব্যাংকের লেনদেনের সমান বলেই জানান এ অর্থনীতিবিদ।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা একটি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয় হচ্ছে তিনটি; দ্রুত, সহজ এবং নিরাপদ। এ তিনটি বিষয়ে যখন কারও আস্থা আসবে তখনই সেটার জনপ্রিয়তা বাড়বে। ঠিক এ বিষয়টিই হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে। হুট করে কিন্তু সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা হয়নি। ধীরে ধীরে এ অবস্থায় এসেছে। এই সমস্যা, ওই সমস্যা এসব নিয়ে একটা সময় হইচইও বেশ হয়েছে। একটা সেবা যখন নতুন আসে তখন সেখানে কিছু সমস্যাও তো থাকে। সেসব সমস্যার সমাধান আমরা করতে পেরেছি। মানুষের আস্থা তো এর ফলেই এসেছে।’

জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী শুধু মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ মাধ্যমে লেনদেন করবে। তবে বেশিরভাগ এজেন্ট এ নিয়ম না মেনে নামে-বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা পাঠায়। এর ফলে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতিসহ অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। এরপর এ ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি নিয়ম আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে কয়েক লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় বিভিন্ন এজেন্ট। বাতিল করা হয় অনেকের এজেন্টশিপ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করাকরিতে এখন বেশ স্বচ্ছভাবেই এজেন্ট নিয়োগ দিতে হয় সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তথ্য মতে, সারাদেশে জানুয়ারি শেষে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫৬টি। যা আগের মাস ডিসেম্বরে ছিল ৫ লাখ ৬১ হাজারে।

প্রতিবেদনের তথ্যনুযায়ী, জানুয়ারি মাস পর্যন্ত মোট তিন কোটি ৩১ লাখ ৩৮ হাজার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এর মধ্যে চালু একাউন্টের (এ্যাকটিভ) সংখ্যা এক কোটি ৩২ লাখ বেড়ে এক কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজারে পৌঁছেছে। কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোনো ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-অ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। অবশ্য বড় কোনো অনিয়ম না পাওয়া গেলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক।

সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আগের মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে দৈনিক লেনদেন বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্রতিদিনের লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ, এ্যাকটিভ একাউন্ট বেড়েছে ৩ দশমিক ১৪, এজেন্ট বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ হারে।

মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন সব দিক থেকেই বৃদ্ধি পেলেও ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে এ মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দেয়ার হার কমেছে ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রদান করা হয়েছে ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

আলোচ্য মাসটিতে ক্যাশ ইন তথা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে ঢুকানো হয়েছে ৬ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। যা ডিসেম্বরে ছিল ৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। এ সময়ে ক্যাশ আউট তথা তুলে নেয়া হয়েছে ৬ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। আগের মাসের তুলনায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে লেনদেন করা টাকার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ১৫৮ কোটি টাকার। যা আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। এ সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ প্রায় ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ১১৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অন্যান্য বিল পরিশোধ বেড়েছে আগের মাসের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ খাতে লেনদেন হয়েছে ৫০৯ কোটি টাকারও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অল্প কিছুদিনের মধ্যে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটা সময় শুধু নিম্ন আয়ের মানুষগুলো এ ব্যাংকিং মাধ্যম ব্যবহার করলেও আস্তে আস্তে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। স্বচ্ছ লেনদেনের জন্য আমাদের অনেক কিছু করতে হয়েছে। এখন আমরা অ্যাকাউন্ট খুলতে গ্রাহকের বা এজেন্টের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করছি। একই সঙ্গে সারাদেশে অবৈধ সিম নিবন্ধনের একটা জোয়ার চলছে। এতে করে অবৈধভাবে যারা লেনদেনের সুযোগ খুঁজতো সেটা একেবারে বন্ধ না হলেও অনেকটা কমে আসবে।’

উল্লেখ্য, সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সেবা দিচ্ছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করলেও এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। বর্তমানে ১৮টি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা থাকলেও মোট লেনদেনের উল্লেখযোগ্য অংশ হয় বিকাশের মাধ্যমে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
272829  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫