বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা : ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে মানুষ। একটি স্মৃতিস্তম্ভের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের রক্ত, উৎসর্গ আর শ্রদ্ধাভরা ইতিহাস। সেখানে মানুষ ফুল দেয়, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ওই বীর শহীদদের।
চলছে ভাষার মাস। আর মাত্র ক’দিন পরেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। ওই দিন প্রভাতফেরিতে শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধার্ঘ জানাবেন কোটি জনতা। স্মরণ করবেন তাদের, যাদের জন্য আজ আমরা মাতৃভাষায় কথা বলতে ও লিখতে পারছি। গাইবেন একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’…
না, বাঙালি জাতি পৃথিবীতে যতদিন থাকছে, ততদিন একুশকে ভুলবে না। শোক-শক্তি-গৌরবের সেই দিন বাঙালির চির প্রেরণা। কারণ, ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা।
আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ১৯৫২ সালের ২১ ফ্রেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যে এই স্তম্ভ নির্মিত হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়ার প্রথম নজির এটি। সেদিন তাদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা। আর এর মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক।
আর তাই প্রতিবারের মতো এবারও একুশে ফেব্রুয়ারির আগে সাজছে শহীদ মিনার। সারাবছর অবহেলার ধুলোয় মোড়ানো প্রাণের শহীদ মিনারে চলছে রঙের কাজ। রংশ্রমিকেরা সেখানে সাদা রং দিয়ে মুছে দিচ্ছেন পুরনো ধুলো।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। পাকিস্তানকে আমরা ইসলামী রাষ্ট্ররূপে গঠন করতে যাচ্ছি।’
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রদেশের ভাষা কী হবে, তা প্রদেশবাসীই স্থির করবেন, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। একাধিক রাষ্ট্রভাষা থাকলে কোনো দেশ শক্তিশালী হতে পারে না।’
খাজা নাজিমুদ্দিনের ওই মন্তব্যটুকুই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টির পক্ষে ছিল যথেষ্ট। এর প্রতিবাদে ৩১ জানুয়ারি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের সকল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা এবং আরবি হরফে বাংলা ভাষার প্রচলনের চেষ্টার বিরুদ্ধে ধর্মঘট পালন করে।
২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার। এতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য পিছিয়ে গেলেও ছাত্রদের দৃঢ়তায় ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভের মুখে পুলিশ ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালায়। এতে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, সফিউরসহ নাম না জানা অনেকে নিহত হন।
এর পর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। ছাত্রদের প্রবল প্রত্যাশার মুখে ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকদের হিসাব-নিকাশের রাজনীতি উড়ে গিয়েছিল সেদিন। রক্তের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছিল তার মুক্তির, তার গন্তব্যের দিশা।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয় এ দিনটি। একুশের চেতনা নিয়েই বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
অনেকেই বাঙালিকে বিস্মৃতিপ্রবণ জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি এলেই শহীদ মিনারে রং ও সজ্জার হিড়িক আর সারাবছর অবহেলার ধুলো। সারাবছরই শহীদ মিনার শুভ্র থাকবে, একুশের চেতনায় শানিত হবে সবার হৃদয়, এমনটাই আশা দেশপ্রেমী মানুষের। সূত্র- বাংলামেইল২৪ডটকম