বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: দেলোয়ার হোসেন ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন চার বছর ধরে। গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়। সেখানে থাকেন স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে। সংসারের খরচ ও ছেলেমেয়ের স্কুল খরচের জন্য নিয়মিত টাকা পাঠান বিকাশ করে।
রাজধানীর বাংলা একাডেমি চত্বরে অনুষ্ঠিত ব্যাংকিং মেলায় অংশগ্রহণকরী মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এর স্টলে বসে কথা হচ্ছিল দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি দেড় বছর আগে একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলি এবং নিয়মিত ব্যাবহার করে বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছি। এতে আমার সময়ও খরচ কম হচ্ছে এবং টাকাও নিরাপদে চলে যাচ্ছে।’
একটি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন মুক্তা। একই স্টলে বসে কথা হলো তার সঙ্গেও। ছয়মাস আগে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তিনি। এখন নিয়মিত বাড়িতে মায়ের কাছে টাকা পাঠান নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করে।
তিনি বলেন, ‘আগে টাকা পাঠাতে নিজেকে বাড়ি যেতে হতো বা কারো মাধ্যমে পাঠাতে হতো। তখন কারখানা থেকে ঠিকমতো ছুটিও পাওয়া যেতো না। কিন্তু এখন বিকাশ থাকায় তাকে আর কাজ ফেলে বাড়ি যেতে হয়না। নিরাপদে এবং মুহূর্তেই নিজের মোবাইল ফোনের বিকাশ অ্যাকাউন্ট দিয়ে টাকা পাঠাতে পারছি। এর ফলে ঝামেলা ও সময় বেঁচে যাচ্ছে।’
দেলোয়ার ও মুক্তার মত লাখ লাখ মানুষের কাছে নিরাপদ ও সহজে টাকা টাকা আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। তবে ২০১১ সালের জুলাই মাসে কার্যক্রম শুরু করা বিকাশ-এর সেবা বর্তমানে শুধু টাকা আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই। যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন সেবা। বেতন প্রদান, কেনাকাটার মূল্য পরিশোধ, মোবাইল ব্যালান্স রিচার্জ, হসপিটালের বিল পরিশোধসহ অনেক কিছুই এখন করা যাচ্ছে বিকাশ দিয়ে।
তবে এজন্য সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ প্রাপ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের। এমনটি জানিয়েছেন বিকাশ কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি যুগান্তকারী গ্রাহক কেন্দ্রিক নীতি প্রণয়ন এবং তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাধ্যমে বিকাশ-এর মত মোবাইল আর্থিক সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে পারছে।
বাংলাদেশ এখন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে থট লিডার হিসবে বিবেচিত। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা জরিগুয়েতা সেরুতি বাংলাদেশ সফরে এসে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্জক্রমের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক দরিদ্র ও ব্যাংক বহির্ভূত একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় আনতে ২৮ টি ব্যাংকে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লাইসেন্স প্রদান করেছে। এর মধ্যে ২০ টি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্জক্রম শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অক্টোবর মাসের ডাটা অনুসারে মোবাইল ব্যাংকিং নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটির বেশি। এর সিংহভাগই বিকাশের। বিকাশ-এ সরাসরি কর্মরত কর্মীর সংখ্যা ৮০০-এর বেশি। বিকাশ সেবা দেশের প্রধান চারটি অপারেটরের নেটওয়ার্কে যুক্ত বলে ৯৮ ভাগ মোবাইল ব্যাবহারকারী সাধারণ মানের ফোন ব্যবহার করেই সেবাটি পাচ্ছেন।
ব্যাংকিং মেলায় বিকাশের স্টল পরিদর্শন করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান
মেলায় অংশগ্রহণের কারণ জানিয়ে বিকাশের মুখপাত্র জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রার শুরু থেকেই বিকাশ-এর মূল লক্ষ্য ছিল ব্যাংকিং সেবা বহির্ভুত একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবা প্রদান করা। মেলাতে বিকাশ সেবা সমূহ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এছাড়াও কেউ চাইলে মেলায় স্টলে এসে বিকাশ অ্যাকাউন্টও খুলতে পারছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিকাশ একাউন্ট খোলা খুবই সহজ। দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা পাসপোর্ট ও তার ফটোকপি নিয়ে যেকোনো বিকাশ এজেন্ট এর কাছ থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। বর্তমানে বাংলালিংক, গ্রামীণফোন, রবি এবং এয়ারটেল নাম্বারে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে।’
বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা এবং ক্যাশ ইন সম্পূর্ণ ফ্রি জানিয়ে জাহেদুল ইসলাম জানান, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি অ্যাকাউন্টে যে কোনো অংকের টাকা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে খরচ মাত্র ৫ টাকা। অন্যদিকে যদি গ্রাহক ক্যাশআউট করতে চান সেক্ষেত্রে চার্জ মাত্র ১.৮৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে কোনো সর্বনিম্ম চার্জ নেই। অর্থাৎ একজন গ্রাহক যদি ৫০ টাকাও ক্যাশ আউট করতে চান, তাহলে তাকে চার্জ দিতে হবে মাত্র ৯২ পয়সা। গ্রাহক বিকাশ-এর যে কোনো এজেন্ট পয়েন্ট থেকে টাকা ক্যাশআউট করতে পারবেন।
তিনি জানান, দেশজুড়ে বিকাশ এর প্রায় ১ লাখেরও বেশি এজেন্ট রয়েছে। বিকাশের এই সেবা দরিদ্র এবং ব্যাংকিং সুবিধা বহির্ভূত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে সহায়তা করছে।
জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে টাকা আদান প্রদান থাকলেও ধীরে ধীরে বিকাশ তার সেবার পরিধি বৃদ্ধি করছে। বর্তমানে বিকাশ দিয়ে বেতন প্রদান ও নানা ধরনের ডিজবার্জমেন্ট হচ্ছে। ১৮০ টি প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এর মাধ্যমে বেতন প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজবার্জমেন্ট সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে এর মধ্যে ১১ টি পোশাক কারখানাসহ ১০৫ টির মতো প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতন প্রদান করছে বিকাশ দিয়ে। এইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বহুজাতিক ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং বেশ কিছু রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা। বিকাশ-এর মাধ্যমে যেসব পোশাক কারখানার শ্রমিক বেতন পাচ্ছেন তাদের মধ্যে ভিয়েলাটেক্স গ্রুপ, রবিনটেক্স গ্রুপ ও স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ অন্যতম।’
তিনি জানান, মানবিক সাহায্য কার্যক্রমেও বিকাশ ভূমিকা রাখছে। ৪৪ টির মত বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি ও দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রম সংক্রান্ত জরুরি সাহায্য তহবিল বিকাশ-এর মাধ্যমে পরিচালনা করে। এর ফলে মুহূর্তেই নগদ সাহায্য পৌঁছে যাচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তি বা পরিবারের কাছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেন-এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থা বিকাশ ব্যবহার করে জরুরি সাহায্য পাঠাচ্ছে।
তিনি আরও জানান বিকাশ দিয়ে বর্তমানে ১১ হাজারেও বেশি মার্চেন্ট পয়েন্ট রয়েছে যেখানে খুচরা পণ্য কেনাকাটা থেকে প্লেনের টিকেট পর্যন্ত কেনা যাচ্ছে বিকাশ দিয়ে।
পেমেন্টের পাশাপাশি মোবাইল এয়ারটাইমও কেনা যাচ্ছে বিকাশ দিয়ে। একজন বিকাশ গ্রাহক তার নিজের বা অন্য কারও গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি এবং এয়ারটেল নাম্বারে মোবাইল ব্যাল্যান্স রিচার্জ করতে পারছেন।
এভাবেই বিকাশ ধীরে ধীরে মানুষের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ‘প্রয়োজনে পাশে’ এসে দাঁড়াচ্ছে- মন্তব্য করেন জাহেদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বিকাশ টাকা লেনদেন করা নিরাপদ এবং বিকাশ-এর প্রতিটি লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতমালা মেনে সম্পন্ন হয় এবং প্রতিটি লেনদেনের তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
বিকাশ ব্র্যাক ব্যাংকের একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান। বিকাশ-এর অন্য অংশীদাররা হচ্ছে ইউএস ভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান আইএফসি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। বাংলামেইল২৪ডটকম