সাকার রিভিউ শুনানি পিছিয়েছে

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে। আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানিটি ‘আজ হচ্ছে না (নট টুডে)’ বলে আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ আপিল বেঞ্চেই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

তবে এর আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষ হয়। বুধবার (১৮ নভেম্বর) এর আদেশের দিন ধার্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

মঙ্গলবারের (১৭ নভেম্বর) কার্যতালিকায় আবেদন দু’টি যথাক্রমে ২ ও ৩ নম্বরে ছিল। মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে দু’জনের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সময়ের আবেদন জানিয়ে বলেন, একটি শুনানি শেষ করেছি। আজকের মতো অন্যটির শুনানি মুলতবি চাইছি। এরপর ‘নট টুডে’ বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

গত ১৪ অক্টোবর আপিল বিভাগে পৃথকভাবে রিভিউ আবেদন করেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী। পরদিন আবেদন দু’টির দ্রুত শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষ। ২০ অক্টোবর রিভিউ শুনানির দিন ০২ নভেম্বর ধার্য করেন আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এরপর রিভিউ শুনানি পেছাতে সময়ের আবেদন জানান মুজাহিদ। অন্যদিকে নিজের পক্ষে কয়েকজন সাফাই সাক্ষীকে সমন জারি করার আবেদন জানান সাকা চৌধুরী।

গত ০২ নভেম্বর কার্যতালিকায় এলেও ১৭ নভেম্বর রিভিউ দু’টির শুনানির দিন ধার্য করেন সর্বোচ্চ আদালত। শুনানি পেছাতে মুজাহিদের আবেদনটি গ্রহণ করে এ দিন ধার্য করা হয়। তবে নিজের পক্ষে কয়েকজন সাফাই সাক্ষীকে সমন জারি করতে সাকা চৌধুরীর আবেদন খারিজ করে দেন।

মুজাহিদের মতোই সাকা চৌধুরীরও প্রধান আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদনটির শুনানিতে আসামিপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা।

অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপিল মামলাগুলোর মতোই সাকার রিভিউ আবেদনের শুনানিতেও রাষ্ট্রপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন।

সাকা চৌধুরীর মোট ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে।

গত ১৬ জুন আলী একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ ও গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ওই দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। পরদিন ০১ অক্টোবর তাদেরকে আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা।

নিয়ম অনুসারে সে থেকে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী।

যদি এ রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে দু’জনেরই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা। তবে সর্বোচ্চ সাজার প্রেক্ষিতে আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন সাকা চৌধুরী। পরে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

গত ১৬ জুন শুরু হয়ে ১৩ কার্যদিবসে আপিল শুনানি শেষ হয় গত ৭ জুলাই। ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর ফাঁসির চূড়ান্ত রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।

এ রায়ে ট্রাইব্যুনাল সাকা চৌধুরীকে অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ যে চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছিলেন সেগুলোর সাজাই বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। ফলে চূড়ান্ত রায়েও অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা (৩ নম্বর অভিযোগ), রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে তিনজনকে গণহত্যা (৫ নম্বর অভিযোগ), রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৫০-৫৫ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যার(৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ফাঁসির আদেশ হয়েছে তার।

অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত নয়টি অভিযোগের মধ্যে অন্য তিনটি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে ২০ বছর এবং আরো দু’টি অভিযোগের প্রতিটিতে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল তাকে। সব মিলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি মোট ৭০ বছরের কারাদণ্ড পান তিনি। এর মধ্যে শুধু রাউজানের সতীশ চন্দ্র পালিতকে হত্যার (৭ নম্বর অভিযোগ) দায় থেকে আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেয়েছেন তিনি, যে অভিযোগে তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এর ফলে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি মোট ৫০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রয়েছে।

বহাল থাকা অন্য চার অভিযোগের দণ্ডাদেশের মধ্যে রাউজানের গহিরা গ্রামের হিন্দুপাড়ায় গণহত্যা(২ নম্বর অভিযোগ) ও জগৎমল্লপাড়ায় ৩২ জনকে গণহত্যার(৪ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ২০ বছর করে ৪০ বছর এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে নির্যাতন(১৭ নম্বর অভিযোগ) এবং চান্দগাঁওয়ের সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করে সাকা চৌধুরীর পারিবারিক বাসভবন গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতনের (১৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ৫ বছর করে আরো ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাকাকে।

ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ১৭টির পক্ষে সাক্ষী হাজির করেন রাষ্ট্রপক্ষ। সেগুলোর মধ্যে দোষী সাব্যস্ত করা নয়টি বাদে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়া বাকি আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ যে ছয়টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করেননি সেগুলো থেকেও সাকা চৌধুরীকে খালাস দেওয়া হয়। এ ১৪টি অভিযোগের বিষয়েও ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫