মোদি আসবেন এপ্রিলে

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এপ্রিলে বাংলাদেশ সফর করবেন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তার বিশেষ অতিথি হিসেবে আসার কথা ছিলো। কিন্তু ভারতের পার্লামেন্টে স্থলসীমানা চুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদন এবং তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করার আগে মোদি বাংলাদেশ সফর করতে চাননা বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রমতে, মোদি বাংলাদেশে সুখবর নিয়ে আসতে চান বলে ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদকে ভারত সফরের সময় জানিয়েছিলেন। এর আগে তিনি নেপালে অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ বিষয়ে বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ইতিবাচক সায় দিয়েছেন মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে। এ বিষয়ে নিজের সম্মতি জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। ১৯ ফেব্র“য়ারি তিন দিনের সফরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
২০ ফেব্র“য়ারি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত অভিন্ন নদী তিস্তার পানি চুক্তির বিষয়ে তার ওপর আস্থা রাখতেও বলেছিলেন।
ঢাকা থেকে ফিরে মাত্র ১০ দিনের মাথায় বুঝি মমতা তার কথার সঙ্গে কাজের মিল রাখলেন। ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, তিস্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরে এই দুটি চুক্তি সম্পাদন হতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথাই বলছে সূত্রগুলো। আর নরেন্দ্র মোদি এপ্রিলে ঢাকা আসবেন সে বিষয়টিও এখন প্রায় নিশ্চিত। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই আভাস দিয়েছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শংকর সুব্রামনিয়াম এক দিনের সফরে ঢাকা এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোদির চিঠি তুলে দিয়েছেন ২ মার্চ। তাতে মোদি লিখেছেন- অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশ সফরের।
আর এরও আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘সুখবর নিয়ে আসছি।’ সূত্রগুলো বলছে, মোদি চাইছেন তিস্তা ও ছিটমহল চুক্তি মমতার উপস্থিতিতেই সম্পাদন করবেন।
১৯৯৬ সালে যখন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পানি বণ্টন চুক্তি হয়, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার সঙ্গে দিল্লিতে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকতারা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত বা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদনে আগেই সায় দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রশ্ন হল ভারততো দুটি বিষয়ে সমাধান করবে। কিন্তু এর বিনিময়ে বাংলাদেশ কী দেবে তা নিয়েই চলছে দেনদরবার। হতে পারে, উত্তর পূর্ব রাজ্যে যেতে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ট্রানজিট পেতে ভারতকে আর কোন শর্তেই আটকে রাখা যাবে না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, বিষয়টি খুবই আনন্দের। মমতা যখন এসেছিলেন তখন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের একটি অনুষ্ঠানে একান্ত আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, দেশে ফিরেই তিনি এটির ব্যবস্থা নেবেন। দ্রুতই তিনি তা নিয়েছেন।
‘আমি এতে অবাক নই কারণ মমতা বন্দোপাধ্যায় তার প্রতিশ্র“তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি যে প্রতিজ্ঞা বাংলাদেশে করছিলেন তার প্রমাণ রাখলেন, বলেন ওয়ালিউর রহমান।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীতায় ছিটমহল বিনিময় ও তিস্তা চুক্তি নিয়ে জটিলতার যে বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে বেরিয়ে আসতে তার ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, অনেকের মনে প্রশ্ন আছে তিস্তা নিয়ে। আমার ওপর আস্থা রাখুন। ভরসা রাখুন। আমাদের কিছু সমস্যা আছে। আপনাদেরও কিছু সমস্যা আছে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি হাসিনাদির (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলোচনা করব। আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না।
মমতা এখন তিস্তা ইস্যুতে ইতিবাচক অবস্থান দেখালেও ২০১১ সালে তার বিরোধীতার কারণেই সে সময়ের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহনের সফরকালে শেষ মুহূর্তে ঝুলে যায় চুক্তিটি। ওই সময় মমতা বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ‘স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে’ এই চুক্তিকে তিনি সমর্থন করতে পারেন না। তবে মনমোহনের সেই সফরে স্থলসীমান্ত একটি চুক্তির প্রটোকল সই হয়, যার মধ্য দিয়ে ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী দুদেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের পথ খোলে। কিন্তু এই প্রটোকল কার্যকর করতে ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে থাকে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধীতার কারণেই।
ভারতের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি বিষয় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শুরু করলে জট খোলার আশা তৈরি হয়।
তার উদ্যোগে সম্প্রতি স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকরে মমতার সরকারের সায় পাওয়া যায়। বিষয়টি এখন ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদনের অপেক্ষায়। এদিকে, গত বছর নেপাল ও নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা চুক্তি সইয়ের বিষয়ে জোর চেষ্টা চালানোর আশা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে তিস্তা চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে এগিয়ে চলেছে দুদেশ। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম ডেস্ক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫