বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ রোববার দুপুর। হাইকোর্টে একটি রিটের ওপর আদেশ হলো নারায়ণগঞ্জে অপহরণ ও ৭ খুনের ঘটনায় র্যাব ১১’র চাকুরিচ্যুত সাবেক তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হোক।
লে: কর্ণেল তারেক সাইদ, মেজর আরিফ হোসেন, লে: কমান্ডার এমএম রানার বিরুদ্ধে এই আদেশের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতা কতটুকু বেড়েছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে সংবাদকর্মীদের তৎপরতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কখন গ্রেফতার হতে পারেন এই সাবেক কর্মকর্তারা? সেই প্রশ্ন সামনে নিয়ে গ্রেফতারের তাজা ব্রেকিং নিউজ দিতে, লাইভ ছবিতে খবর প্রচার করতে উদ্যোগ চলতে থাকে।
এরপরে পার হয়ে গেছে ৪৮ ঘণ্টা। গ্রেফতার করা হয়নি তিন সাবেক ৠাব কর্মকর্তাকে। কিন্তু যে কোনো সময়ে আটক হতে পারেন এমন গুঞ্জনে দুটি নির্ঘুম রাত কেটে গেছে সংবাদকর্মীদের।
রোববারের সেই দুপুর গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নামে গ্রেফতারের বিষয়ে সংবাদকর্মীদের মধ্যে বাড়তে থাকে আগ্রহ আর উত্তেজনা। বিশেষ বিশেষ সময়ে পুলিশের রাতে অভিযান চালানোর অভিজ্ঞতা থেকেই সংবাদকর্মীদের মাঝে গুঞ্জন ছড়িয়ে যায় রাতের যে কোন সময় আটক হবেন সাবেক ৠাব কর্মকর্তারা। এই গুঞ্জনের মাঝেই রাত সাড়ে ৯ টার দিকে হাইকোর্ট থেকে গ্রেফতারের বিষয়ে আদেশটি পুলিশ সদর দফতরে ফ্যাক্স যোগে পাঠানো হয়। খবরটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গুঞ্জনের মাত্রাটাও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সূত্রের বরাতে সংবাদ কর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলতে থাকে, রোববার রাতেই গ্রেফতার হচ্ছেন আলোচিত তিন কর্মকর্তা। এ নিয়ে খবরও পরিবেশন করে সবগুলো টেলিভিশন, অনলাইন। এতে সংবাদ কর্মীরা তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেন। অনেক টেলিভিশন মিডিয়া লাইভ কাভারেজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন বীরশ্রেষ্ট শহীদ জাহাঙ্গীর গেটের সামনে এবং মিন্টু রোডস্থ মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে।
শুরু হয় অপেক্ষার পালা। এই বুঝি পুলিশের টিম বের হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতে গড়ায় সময়। গুঞ্জনটি আরও প্রবল হতে থাকে। ডেডলাইনের নিয়মে বাধা বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্রের কর্মীরা শেষবারের মতো ঘুরে যান, কেউ কেউ ফোন করে সর্বশেষ খবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। রাত কেটে যায় আসে ভোর। গুঞ্জন গুঞ্জনই থেকে যায়। পরের দিন সোমবারের নতুন সকাল। কিন্তু পুলিশের কোন ধরনের মুভমেন্ট লক্ষ্য করা যায়নি।
তবে সাংবাদিকের মুভমেন্ট থামেনি। সোমবার সকাল থেকে আবারও শুরু হয় সেই অপেক্ষা। কর্ম দিবসের প্রথম ঘণ্টাতেই পুলিশ সদর দফতরের হাতে পাওয়া উচ্চ আদালতে সেই গ্রেফতার আদেশের কপিটি পাঠানো হয় নারায়নগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে।
গুঞ্জন নতুন রূপ নেয় গুজবে। ছড়াতে শুরু করে নতুন ডালপালা।
খবর রটায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ডিএমপির সহায়তায় গ্রেফতার করতে যাচ্ছেন সেই তিন কর্মকর্তাকে। এবার দে ছুট নারায়ণগঞ্জের দিকে। কিন্ত সেখানেও কিছু নেই।
এদিকে দুপুর নাগাদ স্বয়ং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রি আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেই ফেললেন যে কোন সময় গ্রেফতার করা হবে তিন কর্মকর্তাকে।
এবার আর সূত্রের তথ্যে ভর নয়, খোদ মন্ত্রীর বাণী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সংবাদ কর্মীদের তৎপরতা বেড়ে যায় নতুন করে। এবার আর সন্ধ্যার অপেক্ষা নয়, বিকেলেই জাহাঙ্গীর গেটের সামনেই জড়ো হতে থাকেন রিপোর্টার, ফটো সাংবাদিকরা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা যথন নামে তখন নতুন গুজব, পুলিশের একটি টিম জাহাঙ্গীর গেটের দিকে রওনা হয়েছে।
ক্যামেরা ফিট, সাটারে হাত রেখে ফটো সাংবাদিকরা প্রস্তুত। রিপোর্টাররাও অবস্থান নিলেন। আসছে পুলিশ, সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত-হত্যার তিন অভিযুক্ত ৠাব কর্মকর্তা। কিন্তু কোথা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, এরপর মধ্যরাত, মধ্যরাত কেটে যখন ভোরের আলো দেখা দেয় তখনও সাংবাদিকরা জাহাঙ্গীর গেটে।
ভোরের দিকে বিষয়টিকে গুজব বলে ভেবে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া ঘোষণা মতে, যেকোনও সময়ে গ্রেফতারের, যে কোনো সময়টি ঠিক কখন আসবে, সেই প্রতিক্ষায়ই থাকবে সংবাদমাধ্যম। হতে পারে তাতে কেটে যেতে পারে সাংবাদিকদের আরও কয়েকটি নির্ঘুম রাত! বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম