স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুনভাবে আন্দোলনের নামে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত-শিবিরের দুই সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। তারা বিভিন্ন স্থানে হামলা, পেট্রোল বোমা, ককটেল ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এ তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনাকারীদের গতিবিধি নজরদারি এবং প্রয়োজন বিবেচনায় গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে গোয়েন্দাদের তরফ থেকে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে এ গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা নাশকতার নেতৃত্ব দিতে পারে তাদের নাম, দলের পদবীসহ বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে গোয়েন্দারা তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে নাশকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন এলাকায় কারা নাশকতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে তার খোঁজ-খবর রাখছি আমরা। তাদের তালিকা করা হচ্ছে।’
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াত শিবির সংগঠিত হয়ে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীও রয়েছে। সম্ভাব্য নাশকতার স্থান টার্গেট এবং কারা নেতৃত্ব দেবেন তাদের নামও জানতে পারছে গোয়েন্দারা।
জামায়াত- শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা আগের মতো সারাদেশে আন্দোলন কর্মসূচির নামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করবে বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। এবার আন্দোলনেও তারা সরকারি অফিস-আদালত, থানা, বিদ্যুৎ অফিস, কেপিআই, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টার্গেট করবে। তারা এ সময় গাড়িতে আগুন, ভাংচুর ও ককটেল ও পেট্রোল বোমা হামলা, গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ, অন্ধকারে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পুলিশ বহিনীর সদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর ককটেল নিক্ষেপ, মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত দলের নেতাকর্মী ও তাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করতে পারে বলে গোয়েন্দারা ধারণা পেয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন নয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় প্রদান এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপি জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতেও নাশকতার টার্গেট আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় সম্ভাব্য নাশকতার স্থানগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারী বৃদ্ধি করার জন্য সরকারকে গোয়েন্দারা পরামর্শ দিচ্ছেন।
যেমন পরিকল্পনা: গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশের ৬৪টি জেলায় কারা কীভাবে আন্দোলনের নামে সহিংসতার ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে তার খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা ও সাতক্ষীরায় যাদের নেতৃত্বে হামলা হবে তাদের ক’জনের নাম জানা গেছে।
নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলা জামায়াতের আমির আবদুল গণির নেতৃত্বে কর্মীরা নিলফামারীর ভোগদাবুড়ী, ধরনীগঞ্জ, চিলাহটি, বোড়াগাড়ি, কেতকীবাড়ি, চাদঁখানা, গোমনাতি, মীর্জাগঞ্জ, জোড়াবাড়ি, পাঙ্গামটকুপুর, বড় রাউতা, নাউতারা, হরিণচড়া এলাকায় নাশকতা ঘটাতে পারে। তারা সড়ক অবরোধ, ব্রিজের পাটাতন তুলে ফেলা, ট্রেন লাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলা, যানবাহনে ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঘটাতে পারে।
এসব সহিংসতায় দয়িত্ব পালন করবে জলঢাকার ছাত্র শিবির সভাপতি বেলাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, জামায়াত কর্মী মোসাদ্দেকসহ ১০-১২ জন। কুড়িগ্রামের জেলা শাখার জামায়াতের আমির আজিজুর রহমান স্বপন, সাধারণ সম্পাদক মাও. আব্দুল মতিন ফারুকী, জেলা শাকার কর্মপরিষদ সদস্য মাও. নিজাম উদ্দিন, মাও. হাবিবুর রহমানদের নেতৃত্বে হামলার পরিকল্পনা চলছে। তাদের নেতৃত্বে রৌমারী উপজেলার দাতভাঙ্গা, রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ বাজার এলাকা। নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ও ধাউরার কুড়ি, সদর উপজেলার ঘোগাদহ, পাঁচগাছি এলাকায় নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে। জয়পুরহাট জেলা শহর জামায়াতের অমির মো. হাসিবুর রহমান লিটন, জামায়াত নেতা মো. শামছুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম সবুজ, ডা. ফজলুর রহমান সাইদের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ডিসি অফিস, রেল স্টেশন, বিআরটিসি অফিসসহ আওয়ামী লীগ ও এর অংগসংগঠনসমূহের অফিসে হামলা চালাতে পারে। এ ছাড়া জয়পুরহাটের আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতার বাসায়ও হামলার পরিকল্পনা করছে। তারা হাতবোমা, পেট্রলবোমা, ককটেল, তীর, ধনুক, বাটুল, লাঠি, বাঁশ, কুড়াল, রাম দা, চাপাতি, ড্যাগার, ইট, পাটকেল, সুইসাইড স্কোয়াডসহ সব ধরণের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে লক্ষ্য বস্তুতে হামলা চালাতে পারে।
গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম লেবুর নেতৃত্বে স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপি নেতা- কর্মীরা একত্রিত হয়ে পলাশবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনসহ ওই এলাকার আরো ক’জন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরার জয়নগর ইউনিয়ন জামাতের আমির মাও. কামরুজ্জামান এবং কলারোয়া উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. বুলবুল হামলায় নেতৃত্ব দিতে পারে। তারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলাসহ তাদের এবং সংখ্যালখুদের ঘরবাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করার পরিকল্পনা করছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের জয়নগর, খোর্দ্দবাটরা, ক্ষেত্রপাড়া গ্রাম এবং যুগিখালী ইউনিয়নের ওফাপুর গ্রাম ও দেয়াড়া ইউনিয়নের দেয়াড়া ও মাঠপাড়া এলাকায় জামাত শিবির হামলা করতে পারে। হামলাকারীদের মধ্যে জয়নগর ইউনিয়ন ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম, ছদোর উদ্দীন মোড়ল, ওজিয়ার মোড়ল, মালেক গাজী, গফফার গাজীরা হামলা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে।
জানতে চাইলে র্যাবের অতিরিক্ত মহা-পরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘আন্দোলনের নামে যদি কেউ নাশকতার চেষ্টা চালায় তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে র্যাবের নজরদারি আছে।’