বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ দুদক আইন সংশোধনী অবৈধ বলে আদালত যে রায় দিয়েছেন,তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে রায়ের আলোকে ওই সংশোধনী বাতিলের প্রক্রিয়া অবিলম্বে চূড়ান্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায় টিআইবি।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিতে হবে-এমন বিধান রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছিল, সেই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুদকের ক্ষমতা খর্বকারী ধারাটি ‘অবৈধ’ এবং ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করায় একদিকে এর সাংবিধানিক যৌক্তিকতা যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,তেমনি অন্যদিকে সংবিধান অনুযায়ী আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক যে সমান, সেটিও সমুন্নত হয়েছে।”
ড.ইফতেখারুজ্জামান, “উল্লিখিত কালো ধারাগুলোসহ দুদক বিলটি আইনে পরিণত হওয়ায় একদিকে দুদকের কার্যকর হওয়ার যা-ও সম্ভাবনা ছিল, তা যেমন পদদলিত হয়েছিল, তেমনি অন্যদিকে সরকার কাঠামোয় ক্রমবর্ধমানভাবে প্রভাবশালী এক অশুভ চক্রের তৎপরতায় দেশে দুর্নীতির গভীরতর ও ব্যাপকতর বিস্তার ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রসারের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস, হাইকোর্টের এই রায়ে সরকারের এ বিষয়ে বোধোদয় ঘটবে।”
ড.জামান বলেন, “মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অন্যায়ের ক্ষেত্রে শূন্য-সহনশীলতা প্রদর্শন এবং দুর্নীতিকে বরদাশত করা হবে না বলে ঘোষণা দেন। সংসদীয় দলের বৈঠকেও একই ধরনের সাবধানবাণী উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী দলীয় সংসদ সদস্যদের দুর্নীতি ও অনিয়মের বাইরে থেকে কাজ করার নির্দেশ দেন। দুদক আইনের উক্ত বৈষম্যমূলক ও আত্মঘাতী ধারা বাতিল করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের ঘোষণা যে ফাঁকা বুলি নয়, তার বাস্তব প্রমাণ দেখার জন্য দেশের জনগণ উদগ্রীব।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “মেয়াদের শেষপর্যায়ে সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক এই সংশোধনী পাস করা ছিল হতাশাজনক। কারণ দুদকের যতটুকুই ক্ষমতা ছিল, তা-ও এই আইনের মাধ্যমে খর্ব করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে পূর্বানুমতি নেয়ার এই বিধান ছিল সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক। সংবিধানমতে, একই অপরাধের জন্য কোনো বিশেষ শ্রেণীর জন্য বিশেষ মাপকাঠি প্রয়োগের সুযোগ নেই।”
গত ১৭ নভেম্বর পাঠানো এক পত্রের মাধ্যমে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগপূর্বক দুদক (সংশোধনী) বিল পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠাতে রাষ্ট্রপতির কাছে টিআইবির পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। এরপর ১৯ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে সংবাদমাধ্যমের সহায়তায় বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরে এ দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। সংশোধনীটি যে সংবিধান পরিপন্থী,সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের সঙ্গ সাংঘর্ষিক ও জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন, এ বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।
কিন্তু তা সত্ত্বেও একরকম তড়িঘড়ি করে বিলটিতে রাষ্ট্রপতির সম্মতি সংগ্রহ করা হয়। টিআইবি, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীজনের প্রতিবাদ এবং আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে সরকার একতরফাভাবে কমিশনকে অকার্যকর করার যে পথ বেছে নিয়েছিল, দেশবাসীর মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি করে।বেঙ্গলিনিউজটোয়োন্টিফোর.কম