স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী মার্চের আগে এককভাবে কঠোর কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে জামায়াতে ইসলামী। এ সময়ে সাংগঠনিক সমৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফের সরকারবিরোধী তৎপরতা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে গত মহাজোট সরকারের শাসনামলে নিহত নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিরোধকে ‘নির্যাতন’ হিসেবে দেখিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি ভিডিওচিত্র।
বুধবার কাছে এ সংক্রান্ত খতিয়ান সম্বলিত একটি তালিকা এসেছে। বহির্বিশ্বে আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘নিপীড়ক’ হিসেবে তুলে ধরাই এ কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে দলটির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে।
দলীয় সূত্র জানায়, সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এই মুহূর্তে শক্ত কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে জামায়াত। দলীয় সাংগঠনিক পক্ষকাল চলায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তৈরি করা তালিকা ও ভিডিওচিত্রসহ চলবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারবিরোধী প্রচারণা। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের দূতাবাস, মিশনগুলোর সামনে চলবে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ।
একটি অসমর্থিত সূত্র মতে, ইতিমধ্যে বিদেশ সফররত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের হাতে তালিকা পৌঁছে গেছে। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলটির তিনটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক শাখা একযোগে কাজ শুরু করেছে। শাখাগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র , ব্রিটেন ও মক্কা-মদীনা।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি, যুদ্ধাপরাধীদের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত জামায়াত শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে নাশকতা চালানোর সময় সারাদেশে নিহতদের সংখ্যা নিরূপণ করে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এই তালিকার পাশাপাশি করা হয়েছে গত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়ে সারাদেশে মানুষ নিহতের আরেকটি খতিয়ান।
তালিকায় দেখা যাচ্ছে, গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রংপুর অঞ্চলে ৩১ জন, রাজশাহী অঞ্চলে ৫৭ জন, ঢাকা অঞ্চলে ৩ জন, ফরিদপুর অঞ্চলে ২ জন, বরিশাল অঞ্চলে ১ জন, সিলেট অঞ্চলে ৩ জন, কুমিল্লা অঞ্চলে ২১ জন, ঢাকা মহানগরীতে ৬ জন, খুলনা অঞ্চলে ৩৩ জন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২৭ জন জামায়াত-শিবির নিহত হয়েছে। এতে নিহতকে ‘শহীদ’ আখ্যা দিয়ে নাম, ঠিকানা, নিহত হওয়ার স্থান ও সাংগঠনিক অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে।
তালিকায় রয়েছে মামলা, গুমের খতিয়ান। এতে দাবি করা হয়েছে, ৫ বছরে মামলা হয়েছে এক লক্ষাধিক, আসামি করা হয়েছে ৮ লক্ষাধিক। এসব মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে ৫ লাখ। পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ববরণ করেছে ৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে হেফাজতের গত ৫ মে শাপলা চত্বরে যৌথবাহিনীর অভিযানে আহতরাও রয়েছে। আটক হয়েছে এক লাখের বেশি। তবে নিয়মিত মুক্তি পাওয়ায় বর্তমানে সংখ্যাটি ৩০ হাজারের কিছু বেশি। গুম ও অপহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ১ হাজার ১০২ জন। যৌথবাহিনীর মাধ্যমেএক হাজারের বেশি বসতভিটা ধ্বংস করা হয়েছে বলেও তালিকায় দাবি করা হয়েছে।
সূত্রমতে, গত ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে সাংগঠনিক পক্ষকাল। চলবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, নির্বাহী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের দায়িত্বশীলরা সারাদেশে সফর করছেন। জেলার দায়িত্বশীলরা থানায়, থানার নেতারা ওয়ার্ডে গিয়ে এ সাংগঠনিক সপ্তাহের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। চলমান এ কার্যক্রমে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ, তাদের প্রশ্নের উত্তরসহ স্থানীয় মামলাগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে থানা কমিটিগুলো পুনর্গঠিত করা হবে। এ কারণে, চলতি মাস ও আগামী মাসে জামায়াতের একক কোনও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থাকছে না।
ইতিমধ্যে দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটিও গঠিত হয়েছে। নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারি হিসেবে আতিকুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। ২৭ জানুয়ারি গঠিত হয়েছে জামায়াতপ্রভাবিত ইসলামী ছাত্রীসংস্থারও কেন্দ্রীয় কমিটি। মাসুদুল কারীম সুইটিকে সভাপতি ও রেহানা আকতারকে সেক্রেটারি জেনারেল করে এ কমিটি হয়।
তবে একক কর্মসূচি না থাকলেও আঞ্চলিকভাবে আন্দোলন-কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এবং ১৯ দলীয় জোটের যেকোনও কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এ ব্যাপারে সাবেক ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় ও বর্তমানে মহানগর জামায়াতের এক নেতা বলেন, ‘সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ১৯ দলীয় জোটের কর্মসূচি দেয়া হলে সেগুলোও জামায়াত সফল করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী কর্মসূচির ধরন। তবে সাংগঠনিক পক্ষকাল থাকায় সাদামাটা কর্মসূচি থাকবে।’