স্টাফ রিপোর্টার ॥ সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন রেস্টুরেন্টে। গ্যাসের অভাবে অনেকে তিন বেলার রান্না করছেন একবারে। বাধ্য হয়েই বাসি খাবার খেতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। দিনের অধিকাংশ সময়ই গ্যাসের দেখা মিলছে না রাজধানীর অনেক এলাকায়। তাই অনেকে রান্না করছেন রাইস কুকার, কেরোসিনের চুলা বা কাঠ জ্বেলে। সাধারণত সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা, কোথাও কোথাও বিকাল ৩টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না।
আবার কোথাও সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ থাকে না। এ অবস্থা রাজধানীর কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, দক্ষিণ মুগদা, মিরপুর, বনশ্রী, বাসাবো, খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, জাফরাবাদ, শঙ্কর, রায়েরবাজার, ধানমন্ডি. রায়েরবাজার, মধুবাজার, ঝিগাতলা, রূপনগর, শেওড়াপাড়া, সেনপাড়া পর্বতা, উত্তর ইব্রাহিমপুর, মাদারটেক, দনিয়া, দক্ষিণখানের আশকোনা ও কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন এলাকায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে এ দুর্ভোগের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। কোন কোনো এলাকায় অন্যান্য দিন গ্যাসের চাপ কম থাকলেও শুক্রবারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গ্যাসের দেখা মিলে না।
গ্যাসের অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কল্যাণপুরের বাসিন্দা গৃহিণী ফারহানা জামান। তিনি জানান, ওই এলাকায় ভোর ৫টা থেকে সকাল ১১ কখনও দুপুর ১২টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এ নিয়ে দীর্ঘদিন দুর্ভোগ পোহানোর পর অনেকের মতো রাইস কুকার কিনে তাতেই রান্নাবান্না করেন এই গৃহিণী। তবে গ্যাস না থাকলে কেরোসিনের স্টোভই ভরসা গৃহিণী শিউলি বেগমের। তিনি থাকেন রামপুরার উলন এলাকায়। শিউলি জানান, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। দুপুরের পর যখন গ্যাস আসে তখনও নিভু নিভু আগুনে কোনও রান্নার কাজ করা যায় না। গার্মেন্ট কর্মকর্তা স্বামী জুয়েল আহমেদ বাসায় নাস্তা করতে পারছে না।
একই অবস্থা রামপুরা বনশ্রী এলাকার বাসিন্দাদের। দীর্ঘ দিন ধরেই গ্যাস সমস্যা বিরাজ করছে এখানে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গ্যাস আসে না। বিকাল ৩টার পর গ্যাস সরবরাহ করা হলেও গ্যাসের চাপ কম থাকে। এ সময়ের মধ্যে রান্না করতে হয় কষ্ট করে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে সকালে রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে অফিসে যান মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট-কাঁচাবাজার এলাকার ৬বি/৩ নম্বর বাসার মফিজুল ইসলাম। তিনি জানান, রেস্টুরেন্টে নাস্তা করা ছাড়া উপায় নাই। তবে এ এলাকার কেউ কেউ আগের রাতে সকালের খাবার তৈরি করে রাখেন। পরিদিন ওই খাবার খেতে হয় তাদের। এই এলাকার বাসিন্দারা জানান, এ গ্যাস সঙ্কট নতুন কিছু নয়।
তা চলছে প্রায় কয়েক বছর ধরে। মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নামকাওয়াস্তে গ্যাস থাকে। দেখলে মনে হয় মোমবাতি জ্বলছে।’ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতের মওসুমে রাজধানীতে গ্যাস সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। রামপুরার মহানগর প্রকল্প এলাকায় অন্য সময়ে গ্যাস সঙ্কট না হলেও সমপ্রতি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ এলাকার বাসিন্দাদের। প্রকল্পের ৫ নম্বর সড়কের ৭২ নম্বর বাসার বাসিন্দা নাসরিন আক্তার সুস্মি বলেন, ‘সাধারণত ভাত ফুটাতে সময় লাগে ১৫ মিনিট। কিন্তু এখন প্রায় দিনই গ্যাসের চাপ কম থাকায় সময় লাগছে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট।’ কয়েক মাস আগেই বাসায় নাস্তা করা ছেড়ে দিয়েছেন রাজধানীর শ্যামলীর দুই নম্বর সড়কের বাসিন্দা ডা. শহীদুল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা। কয়েক সপ্তাহ যাবত গ্যাসের অভাবে দুপুরের রান্নাও সময়মতো করা যাচ্ছে না। ভোর থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না ওই এলাকায়।
গ্যাস সঙ্কটের জন্য শীত মওসুমকেই দায়ী করেন রাজধানীর গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৗশলী নওশাদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন গ্যাসের চাপ কম হওয়াটা স্বাভাবিক। শীত মওসুমে প্রাকৃতিক গ্যাসের সহজাত তরল হাইড্রোকার্বন জমার কারণে চাপ কম হয়। এ কারণে পাইপলাইনে গ্যাস থাকলেও তা কাজে লাগছে না।
সঙ্কটের আরও একটি কারণ শীতে গ্রাহকের গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়া। এখন চাহিদা বৃদ্ধির হার ১০ থেকে ২০ শতাংশ।’ শীতের কারণেই গ্যাসের চাপ কমেছে এবং হঠাৎ চাহিদা বেড়ে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া তিতাস সূত্রে জানা গেছে, অনেক এলাকায় অবৈধ সংযোগ বেড়ে যাওয়ার কারণেও গ্যাস সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তিতাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহজাহান জানান, রাজধানী এবং আশপাশের এলাকায় তিতাসের প্রায় ১৭ লাখ গ্রাহকের মধ্যে আবাসিক গ্রাহক সাড়ে ১৫ লাখ। এর মধ্যে রাজধানীতে তিতাসের গ্রাহক রয়েছেন ৪ লক্ষাধিক। রাজধনীর এসব গ্রাহকের চাহিদা ১৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ১৫০০ ঘনফুট গ্যাস।