পদ্মা সেতু নির্মাণে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীভাঙন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পদ্মা সেতু নির্মাণে নতুন করে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীভাঙন। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সরকার যখন নিজস্ব অর্থায়নেই এ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছে, ঠিক তখনই নতুন এই বিপত্তি দেখা দিয়েছে। যেখানে সেতু নির্মাণ হওয়ার কথা, সেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারও উদ্বিগ্ন। নিজেই নদীভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ফাস্ট ট্রাক মনিটরিং কমিটির’ এক বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

সভার বিষয়বস্তু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে নতুন ঝুঁকি দেখা দিয়েছে নদীভাঙনে। বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। নদীভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, মূল সেতু শুরুর আগে নদী শাসন করতে হয়। কিন্তু নদীভাঙনের কারণে সে কাজটি করা যাচ্ছে না। তাই নদীভাঙন রোধে ৭০০-৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন প্রকল্প নিতে হবে। এ ছাড়া যেসব স্থানে চর উঠেছে, সেগুলো কেটে ভাঙন রোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সচিব জানান, যেসব মানুষ চরে উঠেছে, তাদের পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু এলাকায় নদীভাঙন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে মাওয়া ঘাটকে জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তাবিত সেতু এলাকার বাইরে নিয়ে যেতে হচ্ছে। কান্দিরপাড়ায় এ ফেরিঘাট স্থানান্তরের বিষয়ে গতকালের সভায় আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর থেকেই সেতু এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। এটি এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসে সরকার বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প অনুমোদন দেয়। কিন্তু অর্থ সংকট, দুর্নীতির অভিযোগসহ নানা কারণে এসব প্রকল্পের কাজ গত পাঁচ বছরে শুরুই করতে পারেনি সরকার। তাই এসব প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের জুনে। গত বছরের অক্টোবরে এ কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর গতকাল ছিল এ কমিটির প্রথম বৈঠক। সভাপতি ছাড়াও এ কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্যসচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব, পরিকল্পনাসচিব প্রমুখ। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে ইআরডি।

জানা গেছে, গতকালের সভায় পদ্মা সেতুসহ ছয়টি প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু ছাড়া অন্য পাঁচ প্রকল্প হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রো রেল প্রকল্প, কক্সবাজারে সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প।

পরিকল্পনাসচিব জানান, ছয়টি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে নকশা তৈরি করেছিল, তা সঠিক হয়নি। কারণ পদ্মা নদীর আচরণ সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল না। তাই বাংলাদেশ এখন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নদী ব্যবস্থাপনা ভালো নয়। নদীভাঙন রোধে পর্যাপ্ত টাকাও নেই।

রূপপুর পারমাণবিক ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে গতকালের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বহুমুখী উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছে। ভারত, ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয় প্রক্রিয়াধীন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫