জেলা প্রতিনিধি, সিলেট ॥ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী ১৫ জানুয়ারি বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে সার্বিক পরিস্থিতি জাতির কাছে তুলে ধরে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। সোমবার রাতে ১৮ দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে না পাড়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ।
দেশে প্রচুর জনসমর্থন থাকার পরও সেভাবে বিরোধী দলের আন্দোলন জমে ওঠছে না। অতীতে বারবার কর্মসূচি ঘোষণা করেও ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, রংপুরসহ সর্বত্রই ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যার্থ হচ্ছে বলে মনে করছে তৃণমূল। এমন অবস্থায় দলের ভবিষ্যৎ ও নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছে তারা।
১৮ দলীয় একটি সূত্রে জানা যায়, ইংল্যান্ড থেকেও রাজনৈতিক বিষয়গুলো পর্যক্ষেণ করছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু দলের এই দুঃসময়ে কারও প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না তিনি। দশম সংসদ নির্বাচনকে প্রহসন ও অবৈধ উল্লেখ করে তীব্র আন্দোলন করার নির্দেশ দেন তারেক রহমান। এমনকি আন্দোলনে যারা সক্রিয় থাকবেন তাদের বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। কিন্তু খালেদা ও তারেকের এমন আশ্বাসেও কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে।
কেন্দ্রের পাশাপাশি সিলেটেও আন্দোলন ধরে রাখছেন নেতাবিহীন কর্মীরা। আর নেতারা দায়সাড়াভাবে সময় কাটাচ্ছেন। কয়েক মাস ধরে প্রায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বিএনপির সিলেট জেলা ও মহানগরের দুই সাধারণ সম্পাদক। তবে একেবারে নিষ্ক্রিয় না হলেও আন্দোলনে জোড়ালো ভূমিকা নেই খোদ সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর।
গত দুই মাসের হিসাবে সর্বসাকুল্যে তিন দিন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বিএনপির সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফ্ফার ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকী। এমনকি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র ডাক দিলেও সাড়া দেননি এই দুই সম্পাদক। একইভাবে রাজপথে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান জামান। তিনিও ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে যাননি। ১৮ দলের কর্মসূচি তিনি সিলেটে এককভাবে পালন করায় স্থানীয় নেতারাও তার উপর ক্ষুব্ধ।
১৮ দলের তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা সারাদেশের মানুষের কাছে লজ্জা পাচ্ছি। কর্মসূচি ঘোষণা করে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে স্থানীয় নেতারাও রাজপথে নামেন না। জোড়ালো ভূমিকা রাখা দূরের কথা আন্দোলনে অংশগ্রহণেই অনেক নেতা অনিয়মিত। এতে ১৮ দলের উপর সাধারণ মানুষের যে রকম বিশ্বাস ছিল তা অনেকটাই বিলুপ্ত হচ্ছে।’
তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, ১৮ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা পর্দার আড়ালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেই সরকার বিরোধী আন্দোলনে জোড়ালো ভূমিকা রাখছেন না।
নাম প্রকাশে ১৮ দলের এক নেতা বলেন, ‘আমাদের নেত্রী আন্দোলন ঘোষণা করার পরও নেতারা মাঠে আসেন না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তাদের এতোই যদি ভয় থাকে তাহলে রাজনীতি করা প্রয়োজন কিসের। আর রাজনীতি করতে হলে সাধারণ মানুষের জন্য রাজপথে প্রাণ দিতে হবে।’
আমাদের নেতারা এখন সুবিধাভোগী হয়ে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিজের স্বার্থের জন্য রাজনীতি করেন অনেক রাজনীতিকই। আর এটা দলের কর্মীবাহিনীর উপর প্রভাব পড়ে। এ কারণেই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।’