স্টাফ রিপোর্টার ॥ দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন ২৯ জানুয়ারি হরতাল পালন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে জোটনেত্রী খালেদা জিয়া দেশবাসীকে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। সেখানেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তিনি। তবে এ মাসে কঠোর আর কোনো কর্মসূচি দেয়ার সম্ভাবনা নেই।
সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। বৈঠক সূত্র বাংলামেইলকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৈঠক শেষে জোটের শীর্ষ নেতা ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৮ দলের বৈঠকে আমাদের ভুলত্রুটি, আন্দোলনে ব্যর্থতা, নতুন আন্দোলন এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করবেন।’
পরবর্তী কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে। জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
এদিকে বৈঠক সূত্র জানান, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে চলমান রাজনীতি, আন্দোলনের ভূলভ্রান্তি, সমন্বয়হীনতা, পরবর্তী কর্মসূচি, সরকারের একতরফা নির্বাচন, সরকার গঠন, সরকারের আলোচনার প্রস্তাব, নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের দৃষ্টিভঙ্গিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৮ দলের নেতাদের কাছ থেকে তাদের মতামত জানাতে চান। একে একে প্রত্যেকেই তাদের মতামত ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এসময় প্রত্যেকেই কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দেন। এজন্য তৃণমূলের চাপের বিষয়টিও তুলে ধরেন নেতারা। কর্মসূচি না দিলে আন্দোলনের গতি স্থবির হয়ে পড়বে, আর এতে সরকারও বিরোধী দলের প্রতি পেয়ে বসবে বলে জানান তারা। তবে কঠোর কর্মসূচি না দেয়ার জন্য বিদেশি চাপের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। তাই এ মাসে প্রতিবাদ স্বরূপ দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন ২৯ জানুয়ারি হরতাল দেয়ার পক্ষে মত দেন প্রায় সবাই।
এছাড়া প্রহসনের নির্বাচনকে বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ‘সমর্থন’ না দেয়া, জোটরে নেতাকর্মীদের আটক, মামলা ও গুমের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে আন্দোলন জোরদার হলেও ঢাকা মহানগরীতে তা একেবারে মুখথুবরে পড়ায় এর সমাধান বের করার জন্য জোটনেত্রীর প্রতি দাবি জানান জোট নেতারা। এজন্য বিএনপির ঢাকা মহানগরী কমিটি পুনর্গঠনের জন্য পরামর্শ দেন তারা। বিএনপি চেয়ারপারসনও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন বলে জানান নেতাদের।
বৈঠক সূত্র জানান, আপাতত কঠোর কর্মসূচি না দিলেও দেশব্যাপী গণসংযোগ, বিক্ষোভ, রোডমার্চ, সমাবেশ ও ঢাকায় জনসভা করার বিষয়ে বৈঠকে জোর দেয়া হয়। তবে জোটের পক্ষ থেকে সব কর্মসূচি চূড়ান্ত করার জন্য জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
এদিকে অলি বলেন, ‘বৈঠক মনে করে, বর্তমান সরকার জনগণের অংশগ্রহণবিহীন একটি একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। জনগণ জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার ভোট বর্জনের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভোট পড়েছে মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ। শুধুমাত্র ভারত ও রাশিয়া ছাড়া পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এই সরকারকে সমর্থন দেয়নি। এটাও ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলনে সফলতা বলে আমরা মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘নবম সংসদের মেয়াদ ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আছে। এ সংসদ রেখে আবার নতুন সংসদ শপথ ও নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।’
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ১৮ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়া। বৈঠকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য ড. রেদোয়ান উল্লাহ শাহীদী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গণী, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান অংশ নেন।
উল্লেখ্য, এর আগে সর্বশেষ ১৮ নভেম্বর জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকেই সরকার পতনে লাগাতার কর্মসূচি দেয় বিরোধী জোট।