স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই সেশনজটের কবলে পড়েছেন লাখ লাখ শিক্ষার্থী। গত বছরের ৩রা আগস্ট এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ৮টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডে সব মিলে পাসের হার ৭৪.৩০ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ১৯৭ জন। সব বোর্ড মিলে ১০ লাখ ২ হাজার ৪৯৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯১ জন।
পরীক্ষার পাসের পর তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে কোচিং করেন অনেকে। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রায় ৬ মাস হতে চললেও ভর্তি পরীক্ষাই শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে একের পর এক পরীক্ষার তারিখ স্থগিত করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ভর্তির আগেই ৬ মাসের সেশনজটে পড়েছে ৭ লাখ শিক্ষার্থী। দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৩৪টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি ৩১টিতেই অনার্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর বাইরে মেডিকেল কলেজ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। টানা হরতাল-অবরোধের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ও জীবনের ঝুঁকি থাকার পরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গেছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ক্যাম্পাসে পৌঁছালেও পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার কারণে ফিরে আসতে হয়েছে। নতুন করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার অপেক্ষায় অনেকে। অনেকে আবার সিদ্ধান্ত বদলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৪। এর মধ্যে ২০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত অবস্থায় আছে। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা তিনবার পিছিয়ে শেষ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পেরেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়া বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে তারা এখনও ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। আর ভর্তি কার্যক্রম শেষ করেও ক্লাস শুরু করতে পারেনি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটের সাক্ষাৎকার এখনও স্থগিত অবস্থায় আছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরিয়েন্টেশন ৮ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও হরতালের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পৌঁছতে না পারায় তা পেছানো হয়।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এখন সেশনজটের কবলে। যে কারণে নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। তার উপর এখন পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা নিতে না পারায় প্রশাসনের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী জানান, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারেনি তাদের দ্রুত পরীক্ষা নেয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া তাদের বিভিন্ন বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সৃষ্ট হতাশার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে হয়তো সাময়িক হতাশার সৃষ্টি হতে পারে। তবে তাদের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়নি। আমরা তা হতে দিতে পারি না।
নতুন একটি শিক্ষাজীবনে তারা যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা পুষিয়ে দেয়ার জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করবেন তারা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় যাচ্ছেন বা ক্ষমতায় যেতে চান তাদের উচিত হবে না ছেলেমেয়েদের ক্ষতি করা। জাতি গঠনের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। দেশ ও দেশের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে রাজনীতি হতে পারে না। আমাদের রাজনীতিবিদদের এ ব্যাপারে বোধোদয় হওয়া উচিত।