স্পোর্টস ডেস্ক ॥ জ্যাক ক্যালিস সেই ডিসেম্বর, সেই ডারবান। সেদিন প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড, এবার ভারত। মাঝে পেরিয়ে গেছে ১৮ বছর। সেদিন ম্যাকমিলান-রিচার্ডসন আর ডোনাল্ডদের দলে ২০ বছরের যে তরুণের অভিষেক হয়েছিল, তাঁর শেষের শুরু হচ্ছে আজ। ভারতের বিপক্ষে এই টেস্ট খেলেই সাদা পোশাক চিরদিনের জন্য তুলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন জ্যাক ক্যালিস!
টুইটারে প্রথম ‘ব্রেকিং নিউজ’টা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর কাল ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে ক্যালিসের বিদায় ঘোষণা, ‘অভিষেকের পর ১৮ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট দলের অংশ হয়ে থাকা ছিল আমার জন্য দারুণ সম্মান ও গৌরবের। আমি এর প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। তবে আমার মনে হচ্ছে সাদা পোশাক তুলে রাখার এটাই সঠিক সময়।’
ডারবানে আজ মাঠে নামার আগ পর্যন্ত এ বছর ১৩ টেস্ট খেলে ১৭.৬৩ গড়ে ১৯৪ রান, ৩১.৩০ গড়ে ১০ উইকেট। নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে বছর। দলের পারফরম্যান্স ভালো হলেও নিজের এই ফর্মটাই হয়তো বিদায়ের সিদ্ধান্তটা নিতে সাহায্য করেছে ক্যালিসকে, ‘এটা খুব একটা সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ সামনে, দলও সাফল্য পাচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে আমার যা দেওয়ার ছিল আমি সেটা দিয়ে ফেলেছি।’
তবে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বললেও ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে যাবেন আরও কিছুদিন। বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি এটাকে একেবারে বিদায় হিসেবে দেখছি না। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপে খেলার ক্ষুধাও আছে আমার, যদি তখন ফিট থাকি এবং ফর্ম থাকে।’
মাস দেড়েক আগেই বিদায় বলে দিয়ে ক্রিকেট-বিশ্বকে আবেগে ভাসিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার। তাঁর বিদায়টা অবশ্য অপ্রত্যাশিত ছিল না। বিশেষ করে শেষ দিকে টেন্ডুলকারের অবসর নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে। এত পূর্বানুমানের পরও সেই ঘোষণা আর বিদায়টা যেন একটা ধাক্কা হয়ে এসেছিল প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে।
জ্যাক ক্যালিস টেন্ডুলকারের মতো ক্রিকেটপাগল দেশের ‘ক্রিকেট-ঈশ্বর’ নন। তাঁর বিদায় নিয়ে আগে থেকে এত জল্পনা-কল্পনাও হয়নি। তার পরও কাল যখন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যালিসের বিদায় ঘোষণাটা জানাল তখন সেটা টেন্ডুলকারের মতো না হলেও কিছুটা আবেগাপ্লুত তো করেছে সবাইকেই। চিয়ারলিডারের নাচ আর টি-টোয়েন্টির ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটের দিনে যে অল্প কয়েকজন ধ্রুপদি ক্রিকেটার টিকে আছেন শেষ হচ্ছে তাঁদের আরও একজনের পথচলা।
ব্যাট হাতে ক্যালিস কখনো টেন্ডুলকার বা লারার মতো জাদুকরি হয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তিনি চতুর্থ (টেন্ডুলকার, পন্টিং, দ্রাবিড়ের পরে, লারার ওপরে)। বল হাতে তাঁরই সমসাময়িক শন পোলক, অ্যালান ডোনাল্ড, ব্রেট লি কিংবা শোয়েব আখতারের মতো খুনে চেহারা দেখা যায়নি খুব বেশি। কিন্তু ১৬৫ টেস্টে ২৯২ উইকেট বলছে ‘নীরব ঘাতক’ হয়ে কাজটা ঠিকই করে গেছেন। জন্টি রোডস, রিকি পন্টিংদের মতো দুর্র্ধষ ফিল্ডার বলে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়নি। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর চেয়ে (১৯৯) বেশি ক্যাচ আছে কেবল একজনের, রাহুল দ্রাবিড়ের (২১০)। গ্যারি সোবার্সের মতো নতুন বলে পেস, পুরোনো বলে অর্থোডক্স স্পিন, ব্যাট হাতে ২১ বছর বয়সে ৩৬৫—এত বৈচিত্র্য আর প্রতিভার মিশেল নন তিনি। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে অলরাউন্ডার হিসেবে ক্যালিস সোবার্সের চেয়েও এগিয়ে। টেস্ট-ওয়ানডে দুই ধরনের ক্রিকেটেই ১১ হাজার রান আর আড়াই শর ওপর উইকেট পাওয়া একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। অন্য অনেকের মতো শোরগোল ফেলে নয়, নিভৃত নায়ক হয়ে নিজের কাজটা করে গেছেন সব সময়। এমন একজনের বিদায়বেলায় তাই দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলছেন, ‘আমি নিশ্চিত নই, এই মাপের ক্রিকেটার শিগগিরই আর আসবে কি না!’
ডমিঙ্গোর মতো এই সন্দেহ কিন্তু আরও অনেকের। ওয়েবসাইট।
ক্যালিসের টেস্ট ক্যারিয়ার
ব্যাটিং টেস্ট ইনিংস রান সর্বোচ্চ গড় ১০০/৫০
১৬৫ ২৭৯ ১৩১৭৪ ২২৪ ৫৫.১২ ৪৪/৫৮
বোলিং বল রান উইকেট সেরা গড় ৫ উই.
২০১৬৬ ৯৪৯৯ ২৯২ ৬/৫৪ ৩২.৫৩ ৫