জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী ॥ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ২৬ নভেম্বর থেকে টানা ৫২৫ ঘণ্টার অবরোধ ও দীর্ঘ হরতালে রাজশাহীতে মাঠের সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে সবজি নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে কৃষকদের।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন টমেটো চাষীরা। মাঠ থেকে ওঠার শুরুতে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি হয়েছে টমেটো। আর টানা অবরোধের কবলে পড়ে সে টমাটো ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
অবরোধের কারণে ক্রেতা কমে যাওয়া ও পরিবহন না পাওয়ায় দেশের অন্য স্থানে পাঠাতে না পারায় মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন টমেটো চাষিরা।
জেলায় টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি পরিবহনের অভাবে মাঠে পচে যাচ্ছে। রবি মৌসুমে লাভের আশায় সবজি চাষ করে এখন কাঁদছে কৃষক।
মাঠে ফসল দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলেও বিরাট লোকসানের ঝুঁকিতে পড়েছেন সবজি চাষিরা। বিশেষ করে জেলার গোদাগাড়ী, তানোর ও পবায় টমেটো চাষিরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। পরিবহন না থাকায় মাথায় হাত পড়েছে টমেটো চাষিদের। পরিবহন না পাওয়ার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে লোকসানে টমেটো বিক্রি করে দিচ্ছেন।
গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি টমেটো চাষ হয়। এবার এই এলাকায় তিন হাজার ৩৩৪ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। টমেটো চাষিরা জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তা পর থেকেই টমেটো উঠতে শুরু করে। কিন্তু একের পর এক অবরোধ ও হরতালের কারণে টমেটো চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কৃষি বিভাগ ও চাষীরা জানান, টমেটো মাঠ থেকে ওঠার শুরুতে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি হয়েছে। তবে গত প্রায় একমাস ধরে টানা অবরোধের কারণে সে টমাটো ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করতে হচ্ছে। অবরোধের কারণে ক্রেতা কমে গেছে। পরিবহন না পাওয়ায় টমেটো দেশের অন্য স্থানে পাঠানো যাচ্ছে না। আর তাতেই মাথায় হাত টমেটো চাষিদের।
টমেটো চাষিরা জানান, মাঠে টমেটো পারিপক্ব হয়ে গেলে বেশি দিন আর রাখা যায় না। এক মাস আগে টমেটোর মৌসুম শুরু হয়েছে। এখন প্রতিদিনই ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে আনতে হয়। অবরোধের কারণে পরিবহন সঙ্কটও দেখা দিয়েছে চরম আকারে। যেখানে এক ট্রাক টমেটো ঢাকা পাঠাতে ১৪ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হতো, সেখানে অবরোধের কারণে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ি এলাকার টমেটো চাষি নাজমুল জানান, মাঠের সবজি তো আর অবরোধ আর হরতাল দেখে পাকছে না। টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে টমেটো মাঠ থেকে উঠছে। কিন্তু তা বিক্রি করা যাচ্ছে না।
উপজেলার রামনগর এলাকার কৃষক ইব্রাহিম জানান, প্রথমের দিকে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করেছিলেন তিনি। সেই লাভটা বেশি দিন ধরে রাখতে পারেন নি তিনি। অবরোধ ও হরতাল নামের খড়গ তাদের মাথায় নেমে আসে। এ কারণে দেড় হাজার টাকার টমেটো এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়।
এছাড়া জেলার পবা, মোহনপুর ও বাগমারা এলাকায় মাঠভরা আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও শিমের ক্ষেত। প্রতিবছর এসময়ে কৃষকরা সবজি বিক্রি করে হাসিমুখ নিয়ে ঘরে ফেরেন। কিন্তু এবার টানা অবরোধ-হরতাল এবং অতি উচ্চ পরিবহন খরচের কারণে তাদের সেই হাসি মিলিয়ে গেছে।
এবার রাজশাহী জেলায় ৩৩ হাজার ৪০৯ জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপরিচালক নূরুল আমীন জানান, এ মৌসুমে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সবকিছু ঠিক মতো থাকলে কৃষকরা এবার লাভের মুখ দেখবেন।
শীতের অনেক সবজি এখন কৃষকের ক্ষেতে। এগুলো অনেক আগে থেকে বাজারে আসতে শুরু করেছে। জেলার বাইরে এসব সবজি পাঠাতে না পারার কারণে লোকসানে পড়েছেন সবজি চাষিরা।
গত মৌসুমে ক্ষেত থেকেই প্রতি কেজি শিম ২০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০ থেকে ২২ টাকা দরে নিয়ে গেছে পাইকাররা। এবার বাজারে এনেও মিলছে না সে দাম। গতবারে মাঠ থেকে পাইকারদের যে দামে কৃষকরা সবজি বিক্রি করেছে ঠিক সেই দাম এবার খুচরা বাজারে। খুচরা বাজারে এবার শিমের প্রতি কেজি মূল্য ২০ টাকা। বাঁধাকপি ১০ থেকে ১৫ টাকা ও ফুলকপি ১০ থেকে ১২ টাকা দমে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, পাইকারি বাজারে প্রতি মণ শিমের দাম ২০০ টাকা। শুধু প্রতি মণ শিম ক্ষেত থেকে তুলতে মজুরি খরচ হয় ১০০ টাকা। সবজি বাজারে আনা থেকে বিক্রি পর্যন্ত আরো ৪০ থেকে ৫০ টাকা খরচ হয়। কৃষকদের লাভ তো দূরের কখা উৎপাদন খরচটাও জুটছে না তাদের।
এসব সবজির পাশাপাশি বেগুন, করলা, মুলা, পেঁপে, শসা, গাজর, ধনে পাতা, লাউ, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, সবুজ শাক, কলমি শাক চাষিরাও লোকসানের মধ্যে পড়েছে।