বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ টানা হরতাল-অবরোধে তীব্র সার সংকটে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা। বিসিআইসির অনুমোদিত পরিবহন ঠিকাদাররা বাঘাবাড়ী থেকে ট্রাকে বিভিন্ন জেলায় সার সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু সড়কপথ বন্ধ থাকায় কোথাও সার পাঠাতে পারছেন না ঠিকাদাররা। অথচ প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এদিকে টানা হরতাল-অবরোধের অজুহাতে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় সার ও কীটনাশকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ডিলাররা। পাশাপাশি একই অবস্থা ডিজেলেরও।
এদিকে বোরোর বীজতলা প্রস্তুত, গম ও আলু আবাদের শুরুতেই সার সংকটের মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষক। আমন কাটার পর কৃষকরা জমিতে আলু, গম, ভুট্টা ও সরিষা আবাদের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করেছিল। কিন্তু সার সংকটের কারণে কৃষকের সব আয়োজন-প্রস্তুতি যেন হঠাৎ করেই থমকে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাজশাহী অঞ্চলে চলতি মৌসুমে রবিশস্যের আবাদ ব্যাহত হতে পারে।
সূত্র জানায়, রাজশাহী অঞ্চলে বিসিআইসির বাফার স্টকগুদাম রয়েছে ১৪টি। বাঘাবাড়ী নৌবন্দর ও নগরবাড়ী ঘাটের মাধ্যমে ওই সব গুদামে সার সরবরাহ করা হয়। বিসিআইসির অনুমোদিত পরিবহন ঠিকাদাররা সেখান থেকে ট্রাকে এই অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সার সরবরাহ করে। কিন্তু ঠিকাদারদের দাবি, অবরোধে সড়কপথ বন্ধ থাকায় কোথাও সার পাঠাতে পারছেন না। অথচ প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
স্থানীয় কৃষক অভিযোগে বলে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সার ডিলাররা সব ধরনের সার ও কীটনাশকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। কৃষকরা বিষয়টি কৃষি বিভাগকে জানিয়েও ফল পাচ্ছে না। তারা আরও বলেন, বর্তমানে রাজশাহীর সর্বত্র বস্তাপ্রতি সারের দাম ১৫০ থেকে ২০০ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আড়াইশ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি কীটনাশকের দামও বেশি নিচ্ছেন সার ডিলাররা। বাঘা উপজেলার কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিবস্তা ৮০০ টাকা দামের ইউরিয়া সার কিনতে হয়েছে ১০৫০ টাকা দামে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পটাশ, ডিএপি ও ইউরিয়া সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন ডিলাররা। তানোর পৌরসভার বিসিআইসি সার ডিলার প্রণব সাহা, তালন্দ বাজারের ডিলার বাবু ও কাশিমবাজারের ডিলার আকতার আলী জানান, সম্প্রতি জেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সহায়তায় সরাসরি কারখানা থেকে তারা কিছু সার সরবরাহ পেয়েছেন। তবে তা খুবই অপ্রতুল হওয়ায় কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করতে পারছেন না।
জেলা বিসিআইসি ডিলার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানান, তারা নিজ উদ্যোগে যমুনা সারকারখানা (তারাকান্দি) থেকে কিছু ইউরিয়া ও যশোরের নওয়াপাড়া থেকে কিছু নন-ইউরিয়া সার আনতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধে গাড়ি না পাওয়ার অজুহাতে বিসিআইসির ঠিকাদার বাফারগুদামে সার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই বাফারগুদাম থেকে তারা কোনো সার সরবরাহ পাচ্ছেন না। বাফারগুদাম থেকে ডিলারদের সার সরবরাহ করা হলে চলমান সংকট থাকবে না বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া তিনি ডিলার কর্তৃক সারের দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খুচরা ব্যবসায়ী ও বীজ ডিলাররা বেশি দাম নিলে তাদের কিছু করার নেই।
অপরদিকে কৃষি কর্মকর্তারা দাবি করেন, এই মুহূর্তে রাজশাহীতে সারের তেমন সংকট নেই। বাফারগুদাম ডিলারদের সার দিতে না পারলেও জেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সহায়তায় যমুনা সারকারখানা (তারাকান্দি) থেকে প্রায় সোয়া চার হাজার মেট্রিক টন সার রাজশাহীর ডিলারদের সরবরাহ করা হয়েছে। তবে কৃষি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, বাফারগুদাম থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ডিলারদের কোনো সার সরবরাহ করা হয়নি। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক মোঃ নুরুল আমিন জানান, রাজশাহীতে ডিসেম্বর মাসের বরাদ্দ ৮ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন সারের অর্ধেক সম্প্রতি যমুনা সারকারখানা থেকে ডিলারদের সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু বাফারগুদাম থেকে ডিলারদের কোনো সার সরবরাহ করা হয়নি। তবে রাজশাহীতে এখনও আপদকালীন হিসেবে ডিলার পর্যায়ে ১ হাজার ৬৬৭ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৬৮১ মেট্রিক টন টিএসপি, ৭৯৫ মেট্রিক টন এমওপি ও ৭৮০ মেট্রিক টন ডিএপি মজুদ রয়েছে। এদিকে একই অজুহাতে সংকট সৃষ্টি করে বাড়ানো হয়েছে ডিজেলের দাম। ব্যবসায়ীরা হরতাল-অবরোধের দোহাই দিয়ে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি আদায় করছেন। অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে ডিজেল নেই বলেও সাফ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে তানোর উপজেলার ডিজেল ব্যবসায়ী গোলাম রাব্বানী বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে তারা পেট্রল পাম্প থেকে বেশি দামে তেল কিনেছেন। এ কারণে তারা ডিজেলের দাম কিছুটা বেশি নিচ্ছেন। এছাড়া পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিলেজের দাম বেশি নেয়া ছাড়া উপায় থাকছে না।