উৎপাদিত শিল্প পণ্য নিয়ে সংকটে মালিকরা

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ চলমান রাজনৈতিক সংকটে উদ্যোক্তাদের মনে ক্রমেই নৈরাশ্য ভর করছে। অবরোধ-হরতালে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে পড়ায় উত্পাদিত পণ্য নিয়েও সংকটে রয়েছে শিল্পকারখানার মালিকরা। সরবরাহ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এবং ক্রেতাদের অর্থসংকট বেড়ে যাওয়ায় অনেক কারখানায়ই এখন পণ্যের স্টক বাড়ছে। বিশেষত শিল্পজাত পণ্যের ক্ষেত্রে খুবই ত্রাহি অবস্থা চলছে।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে কারখানার উত্পাদন বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তাতে কর্মচারিরাও চাকরি হারাবে, আটকা পড়বে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ। তারা দ্রুতই রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমাধান দাবি করে বলেন, ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে দেয়া রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাজনীতির কি আদৌ কোন ক্ষতি হচ্ছে? অবরোধের মত ভাঙচুরের কারণে অর্থনীতিই বরং ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

অথচ ব্যাংকের কিস্তি গুণতে হচ্ছে। উত্পাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারলে ব্যাংকের টাকা দেয়াও দু:সাধ্য। এ অবস্থায় বেশি বিপাকে পড়েছে শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল উত্পাদকরা। যারা প্রাথমিক কাঁচামাল আমদানি করে মধ্যবর্তী কাঁচামালে রূপান্তর করে এবং পরবর্তীতে ফিনিশড প্রোডাক্ট তৈরির কারখানায় বিক্রি করে। বর্তমান পরিস্থিতি গোটা উত্পাদন প্রক্রিয়ার স্বাভাবিকত্বকে নষ্ট করে দিয়েছে উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, শিল্পের চাকা সচল রেখে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হবে। সেজন্যে দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অর্থনীতিকে ধ্বংস করে এমন কর্মসূচি পরিহার করা উচিত। তাতে দীর্ঘমেয়াদে দেশের কোন লাভ হবে না। যারা এ ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে তাদেরও কোন লাভ হবে না।

বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তারা জানান, উইভিং ও স্পিনিং উপখাতের কারখানাগুলোতে উত্পাদিত পণ্যের মজুদ ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি হস্তচালিত তাঁতকলগুলোরও অবস্থাও বেশ সঙ্গীন। ওসব তাঁতকল বাংলাদেশি সুতার বড় গ্রাহক। কিন্তু তাদের ব্যবসা খারাপ হওয়ায় আগের মত চাহিদা নেই। নরসিংদীর তাঁত শিল্প উদ্যোক্তাদের অনেকেই জানান, স্টক রেখে ব্যবসা করার মত পরিস্থিতি নেই। আর্থিক সংকটের কারণে সুতা কিনে স্টক করা যাচ্ছে না। বরং রাজনৈতিক এই সংকট অব্যাহত থাকলে তাঁত বন্ধ করে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোতে বেকারত্ব ও দুর্দিনের আশংকায় রয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, পণ্যের বিপণনের ক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যবস্থা বড় ব্যাপার। অবরোধ-হরতালে সরবরাহ ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা ক্রমেই বাড়ছে। কারণ, আগে পণ্যসামগ্রীর ট্রাক হরতাল-অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এবারে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এই সহিংসতার ফলে যারা কাঁচামাল আমদানি করেন তারা বন্দর থেকে কিংবা যারা স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করেন তাদেরও সমস্যা হচ্ছে। ট্রাক মালিকরা দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়া হাঁকছেন। যা স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আর উত্পাদন খরচও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানমালিক সমিতির হিসাবে, সারাদেশে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি এবং পিকআপ আছে এক লাখের মতো। গত এক মাসে সারাদেশে এক হাজার গাড়ি অগ্নিকাণ্ড এবং ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ গাড়ি আংশিক কিংবা পুরোপুরি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ৬০০ গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ফলে, গাড়িমালিকরাও ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। সব স্তব্ধ করে দিয়ে অর্থনীতির দীপশিখা নিভিয়ে দেয়াই কি সহিংসতাকারীদের লক্ষ্য- এমন প্রশ্ন এখন শিল্প উদ্যোক্তামহলের।

বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, হরতাল-অবরোধে সকল খাত উপখাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে সময়মতো অর্ডারগুলো শীপমেন্ট করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থা চলতে থাকলে শ্রমিক-কর্মচারীদের সময়মতো বেতন ভাতা দেয়া ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫