ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে রাজনৈতিক কারণে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি ও হত্যাকাণ্ড বাড়ছে দিনের পর দিন। আশঙ্কা আর উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ। লাগাতার হরতাল-অবরোধে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজধানী। জরুরি প্রয়োজনেও মানুষ যেতে পারছে না কোথাও। এমনকি মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল-ক্লিনিকে পৌঁছতেও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এ নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। রাজনীতির প্রতি বাড়ছে বিতৃষ্ণা। রাস্তাঘাটে চলতে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করছেন অনেকেই।

রাজধানীর জিগাতলা থেকে মিরপুর-১ নম্বরের যাওয়ার পথে একটি লেগুনায় প্রসঙ্গক্রমে যাত্রীদের মধ্যে শুরু হয় রাজনৈতিক আলাপ। আলাপে তাদের চরম হতাশা আর ক্ষোভ ঝরে পড়ে। দেশের বর্তমান রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বোঝা গেল বিজয় দিবসের পরদিন থেকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণায় তারা অসন্তুষ্ট। আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক গুঁয়েমিতেও তারা বিরক্ত। দুই নেত্রীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এক যাত্রী বলেই বসলেন, ‘এক জনের বাপের দেশ, আরেক জনের স্বামীর দেশ। আমরা তো কিছুই না।’

ব্যাস, শুরু হয়ে গেল। ওই ব্যক্তির কথা শেষ হতে না হতেই আরেক জন বলে বসলেন, ‘আরে ভাই, আমাদের অবস্থা হচ্ছে পিতৃপরিচয়হীন সন্তানের মতো। ভালো-মন্দ দেখার কেউ নাই।’

প্রথম ব্যক্তি এবার তার সাথে যোগ করে বলেন, ‘সরকার হচ্ছে একটা রাষ্ট্রের অভিভাবক। দেশের নাগরিকদের ভালো-মন্দ দেখভাল করা তার দায়িত্ব। কিন্তু দেশের বর্তমান সংকট নিরসনে আমাদের সরকারের তো কোনো পদক্ষেপই নাই। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই গো ধরে বসে আছে। আমাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করেও কেউ কোনো ছাড় দিচ্ছে না।’

চুপচাপ বসে দুই জনের কখা শুনলেও এরপর মুখ খোলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্র। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই তো আহম্মক। তা না হলে কি আর তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করি। আমরা যারা দল করি, কী লাভ হয় দল করে। এমন তো নয়, যারা সরকারি দল করেন তাদের জন্য পিঁয়াজ ২০ টাকা আর বিরোধী দলের জন্য ১২০ টাকা।’

এবার মুখ খুললেন লেগুনার হেলপার, ‘যাগো লাইগা আমরা এত মারামারি-কাটাকাটি করতাছি তারা তো সুখেই আছে। প্রত্যেক দিনই হরতাল দেয় আর গাড়ি পোড়ায়। আমরা গাড়ি নিয়া বাড়াইতে পারিনা। না খায়া থাহন লাগে। হেরা যে গাড়ি পোড়ায়, গাড়ি কি হেগোর বাপের?’

এভাবে কথার পিঠে চলতে থাকে কথা। এক একটা কথা যেন এক একটা বুলেট। যা থেকে রেহাই পায় না সরকারি দল, বিরোধী দল বা নাশকতা সৃষ্টিকারী দল কেউই। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় তাদেরই কারো মুখ থেকে উচ্চারিত হয় হুঁশিয়ারী। কেউ বলে ওঠেন, আমাদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আর বসে থাকলে চলবে না। অনেক সহ্য করেছি আর না। এবার একটা বিহীত করতেই হবে।

লেগুনার যাত্রীরা কেউ কারো পরিচিত নয়। কেউ কাউকে চেনেন না, জানেন না। কখনো দেখা হয়নি, ভবিষ্যতেও দেখা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অথচ সবার সমস্যাগুলো এক। সবার চাওয়ার জায়গাটা এক। এমন কি সবার ক্ষোভের জায়গাও এক। একটা পরিবারে কোনো সমস্যা হলে পরিবারের সবার ওপর যেমন এর প্রভাব পড়ে। তেমনি দেশের এই দুর্দিনে অপরিচিত এই মানুষগুলোও ঠিক ততটাই চিন্তিত দেশ নিয়ে। সবাই সমান ভুক্তভোগী, অসহায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫