বিজয়ের ৪২ বছর

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ মহান বিজয় দিবস আজ। রক্তস্নাত বিজয়ের ৪২তম বার্ষিকী। আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিন। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে বহু প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে এদিনে দামাল বাঙালি ছিনিয়ে আনে বিজয়ের লাল সূর্য। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মুক্তিকামী মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের পর এদিন আত্মসমর্পণ করে মুক্তিকামী মানুষের কাছে। হানাদার বাহিনীর এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘ দুই যুগের পাকিস্তানি শোষণ আর বঞ্চনার। নির্যাতন আর নিষ্পেষণের কবল থেকে মুক্ত হয় জাতি। এবার ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে বিজয় দিবস। যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে বিজয়ের এ মাসেই। বিজয়ের এ দিবসে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি ফের উচ্চারিত হবে সমবেত কণ্ঠে। আজ পরম শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় পুরো জাতি স্মরণ করবে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী লাখো শহীদদের। যাদের জীবন উৎসর্গে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। একই সঙ্গে প্রত্যয় ব্যক্ত হবে সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ গড়ার। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনভর পালন করবে বিজয় দিবসের কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকালে সারা দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এবারের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে নির্বাচন ও রাজনৈতিক অবস্থার কারণে। তবে সেখানে সেনাবাহিনীর সহায়তায় মোবাইল ফোন কোম্পানি রবি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলোকে সাজানো হয়েছে জাতীয় ও রঙ-বেরঙের পতাকা দিয়ে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আজ জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে সূচনা হবে বিজয় দিবসের কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে প্রত্যুষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামবে সাধারণ মানুষের। বিজয় আবেগে উদ্বেলিত সাধারণ মানুষের ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ আর সকল শহীদ মিনার। দেশ জুড়ে উচ্চারিত হবে বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকণ্ঠ। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালিত হবে। ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের শাসন থেকে এদেশ মুক্ত হলেও ফের বাধা হিসেবে দেখা দেয় পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠীর অন্যায় শাসন। বাঙালি বঞ্চিত হতে থাকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে। পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ লুট করে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে তোলা হয় সম্পদের পাহাড়। তাদের সে অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদে ধীরে ধীরে জেগে ওঠে দামাল বাঙালি। ধাপে ধাপে আঘাত হানতে থাকে শাসনযন্ত্রে। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৫৪’র নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ’৫৭-র স্বায়ত্তশাসন দাবি, ’৬২ ও ’৬৯-এর গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মার্চে দুরন্ত বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তির সংগ্রামে। ২৫শে মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী শুরু করে নির্মম নিধনযজ্ঞ। এরপর আসে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা। দখলদার বাহিনীকে বিতাড়নে শুরু হয় অদম্য সংগ্রাম। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে জীবন দান করেন লাখ লাখ বাঙালি। অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত বিজয়। সে সময়ের রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতের মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।

আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশের সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল দশটায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। বিকাল ৩টায় ঢাকা মহানগরের সকল থানা ও শাখা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জাতীয় সংসদ সদস্যগণ স্ব স্ব এলাকা থেকে বিজয় র‌্যালিসহ পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক স্থানে সমবেত হবেন এবং সেখানে স্থাপিত শিখা চিরন্তনে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। আগামীকাল বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন বিরোধী নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ ভোর ৬টায় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বিরোধী নেতা। এরপর সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর শেরেবাংলানগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির কর্মসূচিগুলো হলো- ভোর ৬টায় বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সকাল সাড়ে ৭টায় শেরেবাংলানগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও ফাতেহা পাঠ, বেলা ২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দেশব্যাপী চলমান নাশকতা পর্যবেক্ষণ করেই বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও কূটনৈতিক এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তার প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল ঢাকার আকাশে র‌্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে মহড়া দেয়া হয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান জানান, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানসমূহের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দেশব্যাপী র‌্যাবের ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া সকল ব্যাটালিয়নসমূহ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন আয়োজকদের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক মহান বিজয় দিবসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এরমধ্যে রয়েছে, র‌্যাবের বোম ও ডগ স্কোয়াড কর্তৃক ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থানে সুইপিং করা, চেকপোস্টের মাধ্যমে তল্লাশি করা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নে বিশেষ স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স স্ট্যান্ডবাই থাকবে। এছাড়া জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিনোদন কেন্দ্র ও অন্যান্য স্থান যেখানে জনসমাগম হবে সেসব স্থানে সাধারণ জনগণ যাতে হয়রানি অথবা সন্ত্রাসীর কবলে না পড়ে সে ব্যাপারে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষপাঞ্জলি অর্পণ অনুষ্ঠান চলাকালে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছে। বিজয় দিবসের প্রত্যুষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন ও প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে গাবতলী হয়ে সাভার স্মৃতিসৌধে যাবেন। এজন্য ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বাস, ট্রাক, লরিসহ বড় গাড়ি বিকল্প সড়কে চলাচল করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক সূত্র জানায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে গাবতলী আমিন বাজার ব্রিজ-সাভার রোড পরিহার করে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ঢাকা এয়ারপোর্ট রোড-উত্তরা-আবদুল্লাহপুর ক্রসিং-আশুলিয়া সড়ক হয়ে চলাচল করবে। আরিচা হতে আমিনবাজার হয়ে ঢাকাগামী ওই যানবাহনসমূহ নবীনগর বাজার হতে আশুলিয়া হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। টাঙ্গাইল হতে আশুলিয়া হয়ে ঢাকাগামী যানবাহনসমূহ কালিয়াকৈর-গাজীপুর চৌরাস্তা-টঙ্গী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। এছাড়া বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, সামরিক, আধা-সামরিক, দেশী-বিদেশী কূটনৈতিকবৃন্দ, খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ওই অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দের যানবাহন সুষ্ঠুভাবে চলাচলের জন্য বঙ্গভবনের আশপাশ এলাকায় চলাচলরত গাড়ি ১৬ই ডিসেম্বর বেলা ১২টা থেকে বঙ্গভবনের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিরো পয়েন্ট থেকে গুলিস্তান আন্ডারপাস-রাজউক ক্রসিং পর্যন্ত সকল প্রকার বাণিজ্যিক যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫