বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ইতিহাসের মহানায়ক, বর্ণবাদবিরোধী কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে আজ চিরবিদায় জানাবে শোকাহত বিশ্ব। দক্ষিণ আফ্রিকার গণ্ডি পেরিয়ে শোকের ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের আনাচে কানাচে। ৫ই ডিসেম্বর নেলসন ম্যান্ডেলা আমাদের মাঝ থেকে চিরপ্রস্থান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১০ দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালন শেষে আজ নিজ গ্রাম কুনুতে সমাধিস্থ করা হবে ম্যান্ডেলাকে। গতকাল ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস শেষবারের মতো শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। এএনসি’র কমপক্ষে ১০০০ সদস্য এতে উপস্থিত ছিলেন। এর পরপরই প্রিটোরিয়া থেকে ম্যান্ডেলার মৃতদেহ আকাশপথে পৈতৃক বাসস্থান কুনুতে স্থানান্তর করা হয়।
গত তিন দিন ধরে কমপক্ষে ১ লাখ মানুষ ম্যান্ডেলাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার সুযোগ পেয়েছেন। অনেকের মেলেনি দেখার সুযোগ। লক্ষ লোকের ভিড়ে তাদেরকে ফিরতে হয়েছে আশাহত হয়ে। ম্যান্ডেলার মৃতদেহবাহী বিমানকে আরও দুটি ফাইটার জেট প্রহরা দিয়ে নিয়ে যায়। এয়ারপোর্ট থেকে কুনু পর্যন্ত শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেবে সশস্ত্র বাহিনী। ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে ম্যান্ডেলার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে তারা। সেই সঙ্গে বিমান বাহিনী আকাশে মহড়া দেবে। এয়ারপোর্টে গার্ড অব অনার দিয়ে ম্যান্ডেলাকে নিয়ে আসা হবে কুনুতে। তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য পুরো রাস্তায় মানববন্ধন করতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাজির হচ্ছে মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকানদের দৃষ্টিতে নেলসন ম্যান্ডেলা তাদের জন্য মুক্তির প্রতীক। সত্যিকার অর্থেই শত বছরের শোষণের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন অবিসংবাদিত এ নেতা।
শুধু দক্ষিণ আফ্রিকাকে নয় বিশ্বের মানবতাকে মুক্তিদানের জ্বলন্ত প্রতীক তিনি। ইতিহাসের গতিধারা একাই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। অর্জিত হয়েছে বৈষম্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি। ইতিমধ্যে আজ অনুষ্ঠেয় শেষকৃত্য অনুষ্ঠানকে শতবছরের সব থেকে বড় শেষকৃত্য বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আর যথার্থই তাই। বর্ণাঢ্য জীবনে সংগ্রামের প্রতিটি ক্ষণ দিয়ে এটা অর্জন করেছেন নেলসন ম্যান্ডেলা। রক্ত পানি করা সংগ্রামের পথে জেল খেটেছেন ২৭ বছর। এরপর প্রথম সুযোগেই ক্ষমা করে দিয়েছেন নিষ্পেষণকারীদের। কি অনন্য দৃষ্টান্ত। গোটা বিশ্ব তাকে সম্মান প্রদর্শন করবে না তো কাকে করবে। আজ নেলসন ম্যান্ডেলার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কমপক্ষে ৫০০০ ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দু’ঘণ্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠান স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হবে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা)। পুরো বিশ্ব উপস্থিত হতে না পারলেও নিঃসন্দেহে চেয়ে থাকবে টিভির পর্দায়, যার যার স্থান থেকে মহান এ নেতাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য।