স্টাফ রিপোর্টার ॥ একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রায় দেড়শ’ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে রাত ৯টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ১০৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন। এসব প্রার্থীর বিপক্ষে কেউ মনোনয়ন জমা না দেয়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।
একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে করতে যাচ্ছে সরকার।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, প্রায় দেড়শ’ আসনে কমিশনকে নির্বাচন করতে হবে না।
এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ৪৯টি আসনে ৪৮ জন এবং ২০০৭ সালের বাতিল হওয়া ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে শুক্রবার ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুসহ ১০ জনকে নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াজুল কবির কাওসার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাতে পৌঁছে দেন বলে জানা গেছে।
১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে যাদের নৌকা প্রতীক দিতে বলা হয়েছে, তারা হলেন রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পাটির্র প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা, নড়াইল-২ আসনে ওয়ার্কার্স পাটির্র প্রার্থী শেখ হাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা-১ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী মো. মোস্তফা লুৎফুল্লা, ঢাকা-৮ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী রাশেদ খান মেনন, কুষ্টিয়া-২ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী হাসানুল হক ইনু, নরসিংদী-২ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী জাহেদুল কবির, ফেনী-১ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী শিরীন আক্তার, চট্টগ্রাম-৮ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী মইনুদ্দিন খান বাদল, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী এম এ আউয়াল, চট্টগ্রাম-২ আসনে তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী মজিবুল বশর মাইজভান্ডারি।
এ ১০ জনকে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক দেয়ার জন্য ওই চিঠিতে বলা হয়।
ঢাকা থেকে যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যাচ্ছেন, তারা হলেন : ঢাকা-২ এডভোকেট কামরুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ), ঢাকা-৩ নসরুল হামিদ বিপু (আওয়ামী লীগ), ঢাকা-১০ ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস (আওয়ামী লীগ), ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খান (আওয়ামী লীগ), ঢাকা-১৩ জাহাঙ্গীর কবীর নানক (আওয়ামী লীগ), ঢাকা-১৯ ডা. মো. এনামুর রহমান (আওয়ামী লীগ) এবং ঢাকা-২০ এম এ মালেক (আওয়ামী লীগ)।
এদের মধ্যে এরশাদের জাতীয় পার্টির (জাপা) চারজন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপির দুইজন, ওয়ার্কার্স পার্টির একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে বাকিরা সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতারা হলেন : ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আলহাজ্ব মো. দবিরুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ), দিনাজপুর-২ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), লালমনিরহাট-২ নুরুজ্জামান আহমেদ (আওয়ামী লীগ), রংপুর-২ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), রংপুর-৪ টিপু মুনশি (আওয়ামী লীগ), রংপুর-৫ এইচ এন আশিকুর রহমান (আওয়ামী লীগ), গাইবান্ধা-৫ মো. ফজলে রাব্বী মিয়া (আওয়ামী লীগ), বগুড়া-১ আব্দুল মান্নান (আওয়ামী লীগ), বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ (জাতীয় পার্টি), বগুড়া-৩ মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার (জাতীয় পার্টি-জেপি), বগুড়া-৫ মো. হাবিবর রহমান (আওয়ামী লীগ), চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ মোহা. গোলাম রাব্বানী (আওয়ামী লীগ), চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ মো. আব্দুল ওদুদ (আওয়ামী লীগ), নওঁগা-৬ মো. ইসরাফিল আলম (আওয়ামী লীগ), রাজশাহী-১ ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-২ ফজলে হোসেন বাদশা (ওয়ার্কার্স পার্টি), রাজশাহী-৪ এনামুল হক (আওয়ামী লীগ), নাটোর-১ মো. আবুল কালাম (আওয়ামী লীগ), নাটোর-২ মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল (আওয়ামী লীগ), নাটোর-৪ মো. আব্দুল কুদ্দুস (আওয়ামী লীগ), সিরাজগঞ্জ-১ মোহাম্মদ নাসিম (আওয়ামী লীগ), সিরাজগঞ্জ-২ মো. হাবিবে মিল্লাত (আওয়ামী লীগ), সিরাজগঞ্জ-৩ মো. ইসহাক হোসেন তালুকদার (আওয়ামী লীগ), সিরাজগঞ্জ-৪ তানভীর ইমাম (আওয়ামী লীগ), সিরাজগঞ্জ-৬ মো. হাসিবুর রহমান স্বপন (আওয়ামী লীগ), যশোর-১ শেখ আফিল উদ্দিন (আওয়ামী লীগ), বাগেরহাট-১ শেখ হেলাল উদ্দিন (আওয়ামী লীগ), বাগেরহাট-২ মীর শওকত আলী বাদশা (আওয়ামী লীগ), বাগেরহাট-৩ তালুকদার আব্দুল খালেক (আওয়ামী লীগ), ভোলা-১ তোফায়েল আহমেদ, ভোলা-৪ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব (আওয়ামী লীগ), বরিশাল-১ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ (আওয়ামী লীগ), বরিশাল-৬ আবদুল হাফিজ মল্লিক (আওয়ামী লীগ), ঝালকাঠি-২ আমির হোসেন আমু (আওয়ামী লীগ), পিরোজপুর-১ একেএমএ আউয়াল (সাঈদুর রহমান) (আওয়ামী লীগ), পিরোজপুর-২ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (জাতীয় পার্টি), টাঙ্গাইল-১ মো. আব্দুর রাজ্জাক (আওয়ামী লীগ), টাঙ্গাঈল-৩ আমানুর রহমান খাঁন রানা (আওয়ামী লীগ), টাঙ্গাইল-৪ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (আওয়ামী লীগ), টাঙ্গাইল-৭ মো. একাব্বর হোসেন (আওয়ামী লীগ), টাঙ্গাইল-৮ শওকত মোমেন শাহজাহান (আওয়ামী লীগ), জামালপুর-৩ মির্জা আজম (আওয়ামী লীগ), ময়মনসিংহ-১ প্রমোদ মানকিন (আওয়ামী লীগ), ময়মনসিংহ-২ শরীফ আহমেদ (আওয়ামী লীগ), ময়মনসিংহ-৫ সালাহউদ্দিন আহমেদ (মুক্তি) (জাতীয় পার্টি), ময়মনসিংহ-৯ আনোয়ারুল আবেদীন খাঁন তুহিন (আওয়ামী লীগ), কিশোরগঞ্জ-১ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ), কিশোরগঞ্জ-২ মো. সোহরাব উদ্দিন (আওয়ামী লীগ), কিশোরগঞ্জ-৪ রেজওয়ান আহমদ তৌফিক (আওয়ামী লীগ), কিশোরগঞ্জ-৫ আফজাল হোসেন (আওয়ামী লীগ), কিশোরগঞ্জ-৬ নাজমুল হাসান (আওয়ামী লীগ), মানিকগঞ্জ-২ মমতাজ বেগম (আওয়ামী লীগ), মানিকগঞ্জ-৩ জাহিদ মালেক (আওয়ামী লীগ), মুন্সিগঞ্জ-৩ মৃণাল কান্তি দাস (আওয়ামী লীগ), ঢাকা-২ মো. কামরুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ), ঢাকা-৩ নুরুল হামিদ (আওয়ামী লীগ), ঢাকা-১৯ ডা. মো. এনামুর রহমান (আওয়ামী লীগ), ঢাকা-২০ এম এ মালেক (আওয়ামী লীগ), গাজীপুর-১ আকম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ মো. জাহিদ আহসান রাসেল (আওয়ামী লীগ), গাজীপুর-৩ আলহাজ্ব এডভোকেট মো. রহমত আলী (আওয়ামী লীগ), গাজীপুর-৫ মেহের আফরোজ (আওয়ামী লীগ), নরসিংদী-৪ নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (আওয়ামী লীগ), নরসিংদী-৫ রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু (আওয়ামী লীগ), নারায়ণগঞ্জ-২ মো. নজরুল ইসলাম বাবু (আওয়ামী লীগ), নারায়ণগঞ্জ-৪ শামীম ওসমান (আওয়ামী লীগ), রাজবাড়ী-১ কাজী কেরামত আলী (আওয়ামী লীগ), রাজবাড়ী-২ মো. জিল্লুল হাকিম (আওয়ামী লীগ), ফরিদপুর-১ মো. আব্দুর রহমান (আওয়ামী লীগ), ফরিদপুর-২ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), ফরিদপুর-৩ খন্দকার মোশাররফ হোসেন (আওয়ামী লীগ), মাদারীপুর-১ নূর-ই-আলম চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), মাদারীপুর-২ শাজাহান খান (আওয়ামী লীগ), মাদারীপুর-৩ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম (আওয়ামী লীগ), শরীয়তপুর-১ বিএম মোজাম্মেল হক (আওয়ামী লীগ), শরীয়তপুর-২ শওকত আলী (আওয়ামী লীগ), শরীয়তপুর-৩ নাহিম রাজ্জাক, সিলেট-১ আবুল মাল আব্দুল মুহিত (আওয়ামী লীগ), মৌলভীবাজার-৩ সৈয়দ মহসিন আলী (আওয়ামী লীগ), মৌলভীবাজার-৪ মো. আব্দুস শহীদ, কুমিল্লা-৭ অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ (আওয়ামী লীগ), কুমিল্লা-১০ আ হ ম মুস্তফা কামাল (আওয়ামী লীগ), চাঁদপুর-১ ড. মহিউদ্দিন খাঁন আলমগীর, চাঁদপুর-২ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), চাঁদপুর-৩ ডা. দীপু মনি (আওয়ামী লীগ), চাঁদপুর-৪ ড. মো. শামছুল হক ভূঁইয়া (আওয়ামী লীগ), চাঁদপুর-৫ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) (আওয়ামী লীগ), ফেনী-২ নিজাম উদ্দিন হাজারী (আওয়ামী লীগ), নোয়াখালী-২ মোরশেদ আলম (আওয়ামী লীগ), নোয়াখালী-৫ ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগ), লক্ষীপুর-৩ একেএম শাহজাহান কামাল (আওয়ামী লীগ), চট্টগ্রাম-৭ মো. হাসান মাহমুদ (আওয়ামী লীগ), কঙবাজার-২ আশেক উল্লাহ রফিক (আওয়ামী লীগ), কঙবাজার-৩ সাইমুম সরওয়ার কমল (আওয়ামী লীগ)।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নির্বাচন বর্জনের জন্য দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পক্ষে মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়েছেন।