ব্রিটিশ কিশোরীর বাল্য বিবাহ ঠেকানো যাচ্ছে না সিলেটে

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ সিলেটে বাল্য বিবাহ প্রথা আগের মতই রয়ে গেছে।এখানেই একমাত্র বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে যত আইনই থাকুক না কেন কোন বাধাই মানা হয় না। এরকমই এক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানাধীন ভূইগাঁও গ্রামের সাবিনা আক্তারের(১৭) জীবনে।সস্প্রতি সাবিনার বাবা মা তার বাল্য বিয়ে আয়োজনে সুমামগঞ্জে অবস্থান করছেন।

জানা গেছে ব্রিটিশ আমলে মরহুম হাজী সিকান্দার আলী এই এলাকার প্রভাবশালী একজন লোক ছিলেন।

তার পরিবারের সব মেয়েদেরই বাল্যকাল থেকে এ প্রথায় বিয়ে হয়েছে।সাবিনা, তার বাবাও সেই পরিবারেরই সন্তান।

এই প্রথায় গোপনে বাল্য বিবাহ দেওয়ার পেছনে একটি বড় স্বার্থ কাজ করে। সাবিনার বিয়েতেও সেই স্বার্থটি একই ভাবে কাজ করছে।স্বার্থটি হলো এ বিয়েতে যে পক্ষ ব্রিটিশ নাগরিক তাকে প্রচুর টাকার বিনিময়ে কিনে নেয় অপর পক্ষ। তাতে লাভবান হয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পাত্র বা পাত্রীর বাবা মা এবং কিছু মধ্যস্বত্বভোগীরা।

সাবিনার বিয়েতেও প্রায় বিশ লক্ষ টাকার লেনদেন হচ্ছে। ছেলের বাবা আকরুজ আলী মেয়ের বাবা সমুজ আলীকে নগদ বিশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই বাল্য বিবাহটির চুক্তিতে সম্মত হয়।

একজন ব্রিটিশ নাগরিক বিয়ে করে তার স্পাউজকে ব্রিটেনে নিয়ে যেতে ১৮হাজার ৬শ পাউন্ড আয় সেই দেশের সরকারকে প্রমান করার পর ব্রিটিশ সরকার স্পাউজকে ভিসা দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করে থাকে। কিন্ত অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন স্পাউজকি ব্রিটেনে ১৮হাজার ৬শ পাউন্ড আয় করতে পারে?

বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধশালী বিভাগ সিলেট। এ বিভাগের প্রতিটি বাড়ীর কেউ না কেউ ব্রিটশ নাগরিক। আবার কেউ বা নাগরিক না হয়েও আতœীয় স্বজনের আশ্রয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন দীর্ঘদিন ধরেই। এর মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে তাদের আনেক কিছুরই। কিন্ত পরিবর্তন হয়নি একটা নিয়মেরই। তা হলো সর্বনাশা বাল্য বিবাহপ্রথা।

সিলেটে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকালো বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এক ব্রিটিশ কিশোরী মা সহ অন্য আত্মীয়স্বজনরা তাকে একটি বাড়ীতে জোর করে আটকে রেখে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। প্রত্যত্পন্নমতি ফাতেমা বিবি (১৭)মোবাইল থেকে এসএমএস করে র্যাব-৯ কে জানালে গত ৫ আহষ্ট ২০১৩ রাত পৌঁনে ১টায় তাকে উদ্ধার করে র্যাব।

শুধু তাই নয় এ রকম হাজার হাজার সাবিনা ও ফাতেমার বাল্যকালেই তাদের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে ফেলছেন সনাতনী বাবা মায়েরা।

বাল্য বিবাহ প্রতিরোধের ব্যাপারে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলাম আম্ভস্ত করে বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ-বিষয়ক ১৯২৯ সালের আইনটি যুগোপযোগী করতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ ক্ষেত্রে তাঁরা বেসরকারি ও দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে সহযোগিতাও চেয়েছেন।

জানা গেছে, ১৯২৯ সালের আইনটি দেশ বিদ্যমান থাকলেও তার প্রকৃত বাস্তবায়ন নেই। অন্যদিকে আইনটি বর্তমানের জন্য উপযোগীও নয়। আইনে জরিমানার বিধান আছে মাত্র এক হাজার টাকা মাত্র।

তাঁরা বলেন, সরকার, বেসরকারি সংগঠন ও দাতা সংস্থাগুলোর বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজের অন্ত নেই।

বাল্যবিবাহের কারণ এবং এর কুফল সম্পর্কেও বেশির ভাগ লোক অবগত।

কিন্ত তার পরও বাল্যবিবাহের হারের দিক থেকে বিশ্বে নাইজার ও সাদের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

এ দেশের ৬৬% পরিবারই বাল্যবিবাহের শিকার। এ পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, মেয়ে শিশুকে বিয়ে দেওয়ার পর তার ঘাড়ে দায়িত্ব পড়ে বড় সংসার সামলানোর। কিন্ত এ কাজে শিশুর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার অভাবে সংসারের পদে পদে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

জরিপে আরো দেখা যায়, বাল্যবিবাহের ফলে শুধু পারিবারিক সহিংসতা নয়, রাষ্ট্রেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলেই দেখা যায় একজন কিশোরীকে স্বাভাবিকভাবে বড় হতে দিলে তার কাছ থেকে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র অনেক কিছু পেতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫