লাইফস্টাইল ডেস্ক ॥ বাইক চালানোটা এখন যত না ফ্যাশন, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন। দুই চাকার এই বাহন চালানোর জন্য দক্ষতার সঙ্গে চাই পূর্ণ মনোযোগ আর কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা। একটু ভুল কিংবা মনোযোগের কমতি হলেই ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। হতে পারে প্রাণহানিও। বাইক চালানোর আদবকেতা ও নিয়মকানুনের কথা জানাচ্ছেন রিদওয়ান আক্রাম
হেলমেট
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশির ভাগ মৃত্যুই হয় মাথায় আঘাতের কারণে। এ ক্ষেত্রে বাঁচাতে পারে হেলমেট। হেলমেট কেনার সময় নিশ্চিত হন এটা আপনার মাথায় যথাযথভাবে আঁটে কি না। আটসাঁট হেলমেটে এক ধরনের অস্বস্তি হতে পারে। অস্বস্তি নিয়ে বাইক না চালানোই ভালো। শুধু সুন্দর বা স্টাইলিশ দেখে হেলমেট কেনা ঠিক নয়। বেশি খরচ হলেও ভালো মানের হেলমেট কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। হেলমেট যেন মাথা থেকে চোয়াল পর্যন্ত হয়।
মনোযোগ
বাইক চালানোর সময় চালকের চোখ-কান অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। যানবাহনের চালকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনেক সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যখন আপনি লাইন পরিবর্তন করবেন, সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য ডান ও বাঁয়ের ভিউ মিররের দিকে লক্ষ করবেন। অন্যমনস্ক হয়ে মোটরসাইকেল চালাতে যাবেন না। মানসিকভাবে চাপে থাকলে বাইক চালানো থেকে বিরত থাকুন।
যাত্রী
আমাদের দেশে একসঙ্গে তিন, কোনো কোনো সময় আরো বেশি যাত্রী এক বাইকে চড়তে দেখা যায়। একসঙ্গে দুজনের বেশি চড়া ঠিক নয়। আর যাত্রী বেশি থাকলে বাইক চালানোর ধরনেও পরিবর্তন আনা উচিত। এ ক্ষেত্রে কম গতিতে বাইক চালানো উচিত। পেছনের যাত্রী সঠিকভাবে বাইক ধরে বসেছেন কি না নিশ্চিত হন। বাইক চলন্ত অবস্থায় তাকে বেশি নড়তে নিষেধ করুন। একান্তই যদি নড়তে হয় তাহলে যেন আপনাকে আগেই বলে নেয়। হঠাৎ করে যাত্রী নড়েচড়ে বসলে বাইকের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। আরেকটি কথা, মোটরসাইকেলে যাত্রী বহনের আগে অবশ্যই এর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে। যাত্রীর নিরাপত্তার জন্য বাড়তি হেলমেট রাখুন।
আবহাওয়া
খারাপ আবহাওয়ায় বাইক চালাতে বাড়তি সাবধানতা নিতে হবে, বিশেষ করে ঝড়বৃষ্টিতে। ঝোড়ো হাওয়ায় বাইকের ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় ধীরে ধীরে বাইক চালাতে হবে। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার, বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে অনেক সময় বোঝা যায় না রাস্তার অবস্থা কেমন। ভাঙা জায়গায় হঠাৎ করে বাইক পড়লে বিপদ হতে পারে। শীতের সময় কুয়াশা বুঝে বাইক চালানো উচিত। এ সময়টায় বাইকে শক্তিশালী হেডলাইট ব্যবহার করুন এবং গতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখুন।
হেডফোনকে ‘না’
অনেকে গান শুনতে শুনতে বা কথা বলতে বলতে বাইক চালান। এতে মনোযোগ নষ্ট হয়। এটা পরিহার করা উচিত। না হলে বাইকের স্টিয়ারিং থেকে শুরু করে ব্রেক, গতিবৃদ্ধি ও গিয়ার পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও ঝামেলা হতে পারে।
দক্ষতা
প্রত্যেক বাইক চালকেরই নিজস্ব কিছু ধরন থাকে। একে নিজস্ব স্টাইলও বলতে পারেন। দক্ষ হয়ে ওঠা পর্যন্ত সেটাই অনুসরণ করা উচিত। আপনার অন্যান্য বাইকার বন্ধুর মতো বাইক চালানোর চেষ্টা করবেন না। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাইকের গতি ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। এতে বাইক অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পেছন থেকে কোনো বাইক ওভারটেক করলে অনেকে এটাকে ব্যক্তিগত অপমান হিসেবে নিয়ে রেস প্রতিযোগিতা শুরু করে দেন। মনে রাখবেন, ব্যস্ত রাস্তা কখনো রেসের ট্র্যাক হতে পারে না।
পোশাক-আশাক
বাইক চালানোর ক্ষেত্রে পোশাক একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ছোট ও ঢিলেঢালা কাপড় পরাটা নিরাপদ নয়। এ ক্ষেত্রে লেদারের (চামড়ার) পোশাক পরা বেশি নিরাপদ। দুর্ঘটনায় পড়লে এসব কাপড় ছোটখাটো কাটাছেঁড়া থেকে রক্ষা করতে পারে। গরমের সময় পরতে পারেন ছিদ্রযুক্ত জ্যাকেট, যা একই সঙ্গে আপনাকে নিরাপদ ও ঠাণ্ডা রাখবে।
কাপড়ের পাশাপাশি সঠিক জুতা পরাটাও অপরিহার্য। অনেক বাইকের গিয়ার পায়ের সাহায্যে পাল্টাতে হয়, তাই পায়ে স্যান্ডেল পরা থাকলে ব্যথা লাগতে পারে। বাইক চালানোর সময় শক্ত জুতা আবশ্যক, কারণ নরম জুতার সোল পিছলে যেতে পারে। লেদারের জুতা নিরাপত্তার জন্য ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় স্নিকার-জাতীয় জুতা। এগুলো সাধারণত সমতল হয়। এ-জাতীয় জুতা ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
জেনে নিন আইন
বাইক চালাতে পারেন- এই যুক্তিতে রাজপথে নেমে গেলেন এটা ঠিক নয়। ট্রাফিক আইনকানুন আপনার জানা উচিত। খানিকটা সময় বাঁচানোর জন্য ফুটপাতে উঠে যাবেন না। এটা শিষ্টাচারের মধ্যেও পড়ে না।
ট্রাফিক সিগন্যালে পড়লে অপেক্ষা করুন। ট্রাফিক সিগন্যালের মধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে যেমন রাস্তায় জ্যাম বেড়ে যেতে পারে, তেমনি আপনি বিপদেও পড়তে পারেন।