সবজি চাষীদের মাথায় হাত

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ হরতাল আর লাগাতার অবরোধে পাল্টে গেছে দেশের সবজি বাজারের চিত্র। রীতিমত শনিরদশা লেগেছে এ ব্যবসায়। শীতকালীন সবজির এ ভরা মৌসুমে যখন কৃষকের মুখে থাকবে হাসি কিন্তু সেসময় শুধুই হতাশা। টানা অবরোধের কারণে সবজির মোকামগুলোতে ক্রেতা নেই। দাম না পাওয়ায় অনেক চাষী ক্ষেত থেকেই সবজি তুলছেন না। ফলে হাজার হাজার একর জমির সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি যশোর, বগুড়া, নরসিংদী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বড় বড় সবজির মোকামগুলোতে খোঁজ নিয়ে সবজি বাজারের এ চিত্র পাওয়া যায়। সবজি চাষী ও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক সবজি রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। কিন্তু অবরোধের কারণে এসব সবজি কোথাও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কৃষক ও সবজি ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন তারা।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, কৃষক যদি তার কষ্টার্জিত ফসলের নায্যমূল্য না পায় তাহলে এর বিরূপ প্রভাব পুরো অর্থনীতিতেই পড়বে। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে।

পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, হরতাল-অবরোধের বিরূপ প্রভাব ইতিমধ্যে অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমন জায়গায় এসে দাঁড়াবে যে, সেখান থেকে টেনে তোলা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, অর্থনীতি নিয়ে কোন রাজনীতি হতে পারে না। এ ব্যাপারটি আমাদের নেতৃবৃন্দকে বুঝতে হবে।

এদিকে মোকামে পানির দরে সবজি বিক্রি হলেও রাজধানীতে উল্টো চিত্র। রাজধানীতে সবজির দাম চড়া। অবরোধের কারণে ব্যবসায়ীরা মোকাম থেকে সবজি আনতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিশেষ করে পিঁয়াজের কেজি আবার ১’শ টাকা ছুঁয়েছে।

তবে অবরোধের কারণ দেখিয়ে পিঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিঁয়াজের কোন সংকট নেই। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কেউ কারসাজি করে দাম বাড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে সবজি

দেশে চলমান হরতাল অবরোধে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষির উপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় উত্পাদিত কৃষি পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারছে না। ফলে অনেকটা পানির দরে বিক্রি হচ্ছে সবজি।

দেশের অন্যতম প্রধান সবজি উত্পাদনকারী জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। প্রতিদিন এ অঞ্চল থেকে ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান যায়। হরতাল অবরোধের কারণে ব্যাপারীরা সবজি কিনতে পাইকারি বাজারগুলোতে আসছে না। যশোরের প্রধান সবজি হাট বারিনগর থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। হরতালের কারণে এ সবজি যেতে পারছে না। সোমবার বারিনগরে ফুলকপি প্রতিকেজি ১২ থেকে ১৩ টাকা, শিম প্রতিকেজি ৩ থেকে ৪ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৮ থেকে ৯ টাকা, বেগুন প্রতিকেজি ৮ থেকে ১০ টাকা, মূলা প্রতি মণ (৪০ কেজি) ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

নরসিংদীর সবজি চাষীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে

টানা হরতাল অবরোধের কারণে নরসিংদীর সবজি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় শত শত টন শাক-সবজি উত্পাদন হয়। তার মধ্যে লাউ, আলু, শিম, বেগুন, ফুল কপি, বাঁধা কপি, পেঁপে, কাঁচাকলা, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা মরিচ, টমেটো, শশা, লেবু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। হরতাল, অবরোধের কারণে কৃষকরা জমি থেকে তরিতরকারি উত্তোলন করলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সঠিকভাবে সরবরাহ করতে পারছে না। কারণ হরতাল অবরোধের আগে প্রতি ট্রাক মাল পাঠাতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পরিবহন খরচ লাগত। কিন্তু হরতালের কারণে রাতের বেলায় ট্রাক প্রতি ৬ হাজার টাকা পরিবহন খরচ দিতে হয়। এতে কৃষকদের উত্পাদিত শাক-সবজি দাম উত্পাদন খরচের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় লোকসান দিতে হচ্ছে। অপরদিকে একশ্রেণীর দালাল-ফড়িয়া পরিবহন খরচ অত্যধিক দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে পানির দামে শাক-সবজি তরিতরকারি ক্রয় করছে। গতকাল মঙ্গলবার শিবপুরের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ফুলকপি ৬ থেকে ৭ টাকা, লাউ প্রতিটি ১৫ থেকে ১৬ টাকা, বেগুন প্রতিকেজি ৮ থেকে ১০ টাকা, পেঁপে প্রতিকেজি ৮ থেকে ১০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০ টাকা, সিম প্রতিকেজি ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি দালাল-ফড়িয়ারা ক্রয় করছে। কিন্তু তারা আবার উচ্চ দরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের ব্যাপারীদের কাছে বিক্রয় করছে।

সবজি এখন গলার ফাঁস

সবজি চাষে বিপ্লব ঘটিয়ে সংসারে সুদিন এনেছে বগুড়া অঞ্চলের কৃষকরা। প্রতিবছরই তাই সবজির চাষ বাড়ছেই। কিন্তু এবার লাগাতার অবরোধ আর হরতাল সবজি চাষীদের সব স্বপ্নকে বিষাদে পরিণত করেছে। সবজি এখন তাদের গলার ফাঁস হিসেবে দেখা দিয়েছে। পাইকাররা হাটে আসেন না। সবজির দাম নেমে এসেছে।

এদিকে বগুড়ায় বেড়েছে শুধু পিঁয়াজের দাম। কারণ বগুড়াসহ উত্তরের জেলাগুলোতে পাবনা থেকে বেশি পিঁয়াজ অসে। পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ থাকায় পাবনা জেলার পিঁয়াজ বাজারে না আসায় সংকট দেখা দিয়েছে। আগে যে পিঁয়াজ (নতুন) বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় তা এখন প্রতিকেজি ১শ’টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন বগুড়া ফতেহ আলী বাজারের কাঁচামাল বিক্রেতা আলতাফ। পানির দামে বিক্রি হচ্ছে মূলা। কাঁচামরিচের কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকার জায়গায় এখন নেমে এসেছে ১০ থেকে ১২ টাকায়।

এদিকে যেসব কৃষক এনজিও কিংবা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সবজি উত্পাদন করেছেন তাদের অবস্থা আরো করুণ।

সবজির বাজারে বাইরের পাইকার না থাকায় দাম পড়ে গেছে। স্থানীয় বাজারে যে সামান্য চাহিদা তার তুলনায় বগুড়ার সবজির উত্পাদন কয়েক শতগুণ বেশি। আর কাঁচামাল হওয়ায় এবং সবজি সংরক্ষণের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় সবজি চাষীরা লোকসান দিয়ে হলেও তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

কুমিল্লার সবজি চাষীরা দিশেহারা

হরতাল আর লাগাতার অবরোধের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কুমিল্লার সবজি চাষীরা। পরিবহন সংকটের কারণে পাইকার ও ব্যবসায়ীরা না আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চাষীর হাজার হাজার একর জমির কষ্টার্জিত সবজির বেশিরভাগ জমিতেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন তারা।

কুষ্টিয়ায় সবজি চাষীদের মাথায় হাত

লাগাতার হরতাল-অবরোধে কুষ্টিয়ার পান ও সবজি চাষীদের মাথায় হাত উঠেছে। পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার ফলে পাইকারী ব্যবসায়ীরা মোকামে আসতে না পারায় এ অঞ্চলের পান ও সবজি চাষীসহ ব্যবসায়ীরাও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সবজি কিছুটা বেচা-বিক্রি হলেও চরম বিপাকে পড়েছেন পান চাষীরা। পাইকারী ক্রেতা না আসায় পানের হাটে বেচা-কেনা বন্ধ হয়ে গেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫