গ্যাসসংকটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চট্টগ্রামের শিল্পখাত

জেলা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ॥ বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে দেখা দিয়েছে মারাত্মক গ্যাসসংকট। গ্যাসসংকটের কারণে তৈরি পোশাকসহ চট্টগ্রামে বিভিন্ন শিল্প খাতে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাসের অভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করছেন তারা

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার এবং সিইউএফএল চালু রাখতে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হয় প্রায় ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ফলে যখনই সার কারখানা দুটি চালু করা হয়, তখনই চট্টগ্রামে গ্যাসসংকট তীব্র হয়ে ওঠে। এদিকে সম্প্রতি সাঙ্গু ক্ষেত্রে গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সাঙ্গুর গ্যাস সরাসরি সরবরাহ করা হতো চট্টগ্রামে। সাঙ্গু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং সিইউএফএল চালু করায় চট্টগ্রামে গ্যাসসংকট দেখা দিয়েছে।

কেজিডিসিএল সূত্রে আরো জানা গেছে, চট্টগ্রামে গ্যাসসংকট সামাল দিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নতুন কম্প্রেসার স্থাপন জরুরি। বর্তমানে এর কাজ চলছে। আগামী মাসে এটি চালু হলে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা দূর হবে।

কেজিডিসিএলের এমডি ইঞ্জিনিয়ার জামির আহমেদ আলিম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস আনতে হয়। অনেক দূর থেকে গ্যাস আনার ফলে চট্টগ্রামে চাপ কমে যায়। এতে গ্রাহকরা যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার কথা, তা পান না। ডিসেম্বরের মধ্যে কম্প্রেসার বসিয়ে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এছাড়া সরকার দুই বছরের মধ্যে এলএনজি আমদানি করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্যাসসংকট মোকাবেলা করতে চাইছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে চট্টগ্রামে শিল্প খাতে দৈনিক প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। ভয়াবহ এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারকে একদিকে নতুন গ্যাসের সন্ধান করতে হবে, অন্যদিকে গুরুত্ব অনুযায়ী শিল্পকে গ্যাস দিতে হবে। এছাড়া দ্রুত এলএনজির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের কাছে আমরা এ দাবি জানিয়েছি।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে বিদ্যমান লাইনের পাশাপাশি আলাদা একটি লাইন স্থাপনের প্রস্তাব অনেক দিন ধরে ফাইলবন্দি। দ্রুত আলাদা আরেকটি সরবরাহ লাইন না বসালে চট্টগ্রাম তার উন্নয়ন সক্ষমতা হারাবে।

অন্যদিকে পোশাকশিল্পে গ্যাসসংকটের প্রভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত প্রথম সহসভাপতি মোহম্মদ ওয়াহাব বলেন, প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকারও বেশি রফতানি কম হচ্ছে গ্যাসসংকটের কারণে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সার কারখানায় সরবরাহ বন্ধ রেখে রফতানিমুখী শিল্পে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

স্টিল রি-রোলিং মালিক সমিতির নেতা আনামুল হক ইকবাল বলেন, সার কারখানা চালু রাখলে বড়জোর ৬০ হাজার টন বেশি সার উৎপাদন হয়। কিন্তু গ্যাসের অভাবে অন্য সেক্টরে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা দিয়ে এর কয়েক গুণ সার আমদানি করা যায়। তাই অবিলম্বে লাভজনক শিল্পে গ্যাস সরবরাহ করা উচিত। গ্যাস না পাওয়ায় উত্পাদন কমে যাওয়ায় গত সপ্তাহে প্রতি টন রডের দাম বেড়েছে ৬ হাজার টাকা। সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে দাম আরো বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান শওকত ওসমান বলেন, গ্যাসসংকটে প্রতিদিন ২০০ টন কাপড়ের ডায়িং বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিন কর্মবঞ্চিত হচ্ছেন ৭০ হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫