স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৮ দলের ডাকা অবরোধের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। নাটোরের আহমেদপুরে নাটোর-ঢাকা সড়কে পাথর দিয়ে সড়ক অবরোধ করলে দ্রুতগামী একটি ট্রাক পাথরে ধাক্কা লেগে উল্টে একজন নিহত হয়েছে। রাজধানীতে বুধবার রাতে লেগুনায় লাগানো আগুনে দগ্ধ চালক মোজাম্মেল হক বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এছাড়া বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে ১৮ দলীয় জোট কর্মীদের সংঘর্ষ ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় রেল লাইন উপড়ে ফেলেছে অবরোধকারীরা। সড়ক অবরোধ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার না মেনে দশম জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করার প্রতিবাদে সোমবার রাতে ১৮ দলীয় জোট মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘন্টার রেল, নৌ-পথ ও সড়ক পথ অবরোধের ঘোষণা দেয়। কিন্তু দুদিন অবরোধে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের হত্যা, গ্রেফতার ও দমনপীড়নের প্রতিবাদে শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত আরও ২৩ ঘন্টা অবরোধ কর্মসূচি বৃদ্ধি করা হয়।
তিনদিনের অবরোধে রেল যোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ট্রেন চলাচলের সিডিউলে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে নওগার আত্রাইয়ে রেল লাইন উপড়ে ফেলায় উত্তরাঞ্চলের সাথে ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রাজশাহী-ঢাকা-খুলনার সাথে সৈয়দপুর রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বগুড়ার ছাতিমপুরে ৭০ ফুট রেল লাইন উপড়ে ফেলায় রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে নেয়ায় ময়মনসিংহ-ঢাকা, কিশোরগঞ্জ-কুলিয়ারচর, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ-ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কুমিল্লার অশোকতলায় ফিসপ্লেট তুলে নেয়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে কুমিল্লার সাথে সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে পটুয়াখালীর বদরপুর এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে ১৮ দলীয় জোট নেতাদের সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধ ও পাঁচ পুলিশসহ আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। রাজশাহীর
চট্টগ্রামের কাজীর দেউরি থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকারসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এছাড়া মেহেরপুর, নাটোর, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহের ভালুকায়, শরিয়তপুর, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ, নোয়াখালীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক অবরোধ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, ককটেলের বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
অপরদিকে রাজধানীর শাহজানপুর, হাতিরঝিল-রামপুরা, রাজধানী মার্কেট, কাফরুল, ধোলাইপাড়, সাভারের আরিচা মহাসড়ক ও নারায়ণগঞ্জের কাচপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতকর্মীদের ধাওয়া পল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় অবরোধকারীরা কয়েকটি যানবাহনে আগুন, ভাংচুর করেছে। বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় তারা।
রাজধানী ঢাকায় প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বিপুল পরিমাণ আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এছাড় টহলে রয়েছে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের বিশেষ টিম।