পোস্টার-ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করা যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলীয় মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার ও ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা জিয়াউর রহমানের ছবি ব্যবহার করা যাবে না। সরকারে থাকলেও প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, অনুদান ও প্রকল্প বরাদ্দ করা বন্ধ।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদল ও জোট অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচনকালীন আচরণবিধি সবাইকেই অনুসরণ করতে হবে। এর প্রয়োগ প্রশাসনিকভাবেই করা হবে। নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা আচরণবিধিতে আগে থেকেই রয়েছে। আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণের তিন সপ্তাহ আগে কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

নির্বাচিত সরকারের অধীনে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এবারের আচরণবিধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংসদ সদস্য, মন্ত্রী বা সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সঙ্গে অন্যদের সমান সুযোগ তৈরির জন্য আচরণবিধির সংশোধিত গেজেট এরমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার ইসি সচিবালয় এই আচরণবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করে। আচরণবিধি তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

সংশোধিত আচরণবিধিতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ′সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি′ হিসেবে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাসহ এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সরকারি সুবিধা নিয়ে রোববার রাতে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত সময় ′নির্বাচনপূর্ব′ সময় বলে গণ্য হবে।

এতে সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, অনুদান ও প্রকল্প বরাদ্দ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারা সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নিজেদের নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকান্ড যুক্ত করে তাতে যোগ দিতে পারবেন না। নির্বাচনের সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নিজেদের প্রয়োজনেও সরকারি গাড়ি, প্রচারযন্ত্র ও জনবল ব্যবহার করতে পারবেন না। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ সরকারি যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে তারা প্রাপ্যতা অনুযায়ী নিরাপত্তা পাবেন।

নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যরা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় যোগ দিতে পারবেন না। তাদের ইচ্ছাধীন তহবিল বা তাদের অধীন অন্য কোনো তহবিল থেকে তারা কোনো অর্থ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে পারবেন না।

নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহৃত পোস্টার, সাদা-কালো রঙের এবং আয়তন সর্বোচ্চ ৬০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ ও ৪৫ সেন্টিমিটার প্রস্থ হতে হবে। সাদা-কালো রঙের ব্যানার সর্বোচ্চ তিন মিটার দীর্ঘ ও এক মিটার প্রস্থ হতে হবে। পোস্টার ও ব্যানারে প্রার্থীর প্রতীক ও নিজের ছবি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির ছবি ছাপাতে পারবেন না। তবে প্রার্থী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত হলে দলীয় প্রধানের ছবি ছাপানো যাবে। মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও মুদ্রণের তারিখবিহীন কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না।

সংশোধিত আচরণবিধির ধারা-২-এর বিধি-৩-এ বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী নির্বাচনী এলাকার কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানে চাঁদা বা অনুদান দিতে পারবেন না। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো প্রার্থী মিছিল ও শোডাউন করতে পারবেন না। তোরণ নির্মাণ ও দেয়াললিখন করা যাবে না। দলীয় প্রধান ছাড়া কোনো প্রার্থী হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন না।

বিধি- ৮ক তে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় অন্য কোনো প্রার্থী বা কোনো ব্যক্তি কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেন না। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনী এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতে কর্তৃত্ব করতে পারবেন না এবং এ-সংক্রান্ত সভায়ও যোগ দিতে পারবেন না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কে কোন পদে আছেন, তা দেখা হবে না। তিনি কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ করলেন কি-না, শুধু সেটাই দেখা হবে এবং সে অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কোনো নির্বাচনের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আচরণের ওপর।

তিনি আরও বলেন, আগের আচরণবিধিটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা ছিল। তাই অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রী ও অন্যান্য সরকারি সুবিধাভোগী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনপূর্ব সময়ে কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুতের নিমিত্তে আচরণবিধিতে কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু সংসদীয় গণতন্ত্র অনুসরণকারী দেশের নির্বাচন আচরণবিধির আলোকে এ সংশোধন আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫