রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তফসিল ঘোষণার প্রেক্ষিতে রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।

সোমবার সন্ধ্যায় বহুল আলোচিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এর আগে জাতির উদ্যেশ্যে ভাষণ দিবেন সিইসি রকিব উদ্দিন আহম্মদ। নির্বাচন কার্যালয়ের একটি বিশ্বস্ত সুত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে।

এই জন্য আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এ আশংকায় রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে ডিএমপি।

রাজধানীর প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে পুলিশের বাড়তি অবস্থান, সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি, গুরুত্বপুর্ণ অফিস আদালতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ও আনসার সদস্যদের দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

বিরোধীদলের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিন আগে বলা হয়েছিল, তফসিল ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে দেশ অচল করে দেয়া হবে। বেগম খালেদা জিয়াও একই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই চুড়ান্ত আন্দোলন শুরু করা হবে। আর এজন্য বিভিন্ন দলের সাথে তিনি একাধিকবার বৈঠকও করেছেন।

পুলিশের একটি সুত্র জানায়, বাড়তি নিরাপত্তা শুধুমাত্র ঢাকাতে নয়। সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দেশে একটি নির্বাচনের লক্ষে কেউ যেন নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সেজন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

পুলিশের উর্ধ্বতন একটি সুত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী জোট থেকে আন্দোলন শুরু করলে শীর্ষ নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হতে পারে। আর কাকে গ্রেপ্তার করা হবে তার একটি লিস্টও হাতে এসেছে তাদের।

তবে ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, তফসিল ঘোষণার পর মুলত আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সারাদেশে একটা সারাশি অভিযান পরিচালনা করা হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে ওই তালিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির আদলে তালিকাটি সম্পন্ন করা হয়েছে। তালিকায় প্রায় ত্রিশ হাজার সন্ত্রাসীর নাম রয়েছে।

এর মধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোর সন্ত্রাসীদের নাম বেশি। নতুন এই তালিকায় রয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের একাধিক ক্যাডারের নাম। তালিকার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। তথ্য আছে, এদের কেউ কেউ প্রকাশ্য ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায়। তালিকায় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরস্কার ঘোষিত একুশ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামও রয়েছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই সারা দেশে সন্ত্রাসীদের ধরতে চালানো হবে চিরুনি অভিযান। সন্ত্রাস দমন অভিযানের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাছাড়া আগামী সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করবেন। অপরাধীদের পারিবারিক পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলার সংখ্যা ও কী কী ধরনের গর্হিত কাজে তারা পারদর্শী এবং তারা কোন কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেসব বিবরণ রয়েছে তালিকায়।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য যা যা করা দরকার তাই করবে মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে ক্রিমিনালদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকাটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তালিকায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নাম থাকলেও কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এক্ষেত্রে পুলিশ ও র‌্যাবকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের ধরার চেষ্টা চলছে। তার পাশাপাশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারও চলবে। তবে বৈধ অস্ত্র সবার কাছ থেকে জমা নেয়া হবে কিনা তা তিনি বলেননি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুরনো সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি নতুন অপরাধীদের আনাগোনা কিছুটা বেড়ে গেছে। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে চুরি, ডাকাতি, হত্যাসহ নানারকমের অপরাধের ঘটনাও কম হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও র‌্যাব বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীদের কিভাবে গ্রেপ্তার করা যায় সেজন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

বিশেষ করে সংসদ নির্বাচন কে সামনে রেখে সন্ত্রাসীদের পুরনো তালিকা হালনাগাদ শুরু করে পুলিশ ও র‌্যাব। তাদের সহায়তা করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। দাগি অপরাধী, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক বিক্রেতা, ডাকাত প্রুপ, পরিবহন চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, গার্মেন্ট সেক্টরে চাঁদাবাজি, ঝুট ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীসহ একাধিক ক্যাটাগরি অপরাধীর তথ্য সংগ্রহ করে গোয়েন্দারা।

এদের মধ্যে যারা রাজনৈতিক ব্যানারে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে সক্রিয় সেই তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পুলিশ সুপারদের কাছে দেয়া হয়। তাছাড়া পুলিশ-র‌্যাব সোর্স পরিচয় দিয়ে যারা অপরাধ চালিয়ে আসছে তাদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তালিকায়।

বড় ধরনের অপরাধ করে গ্রেপ্তার হয়েছে কিনা এবং রাজনৈতিক পরিচয়, কবে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে- তা উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে সন্ত্রাসীদের নাম বেশি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫