বাংলাভূুমি২৪ ডেস্ক ॥ শনিবার বিজ্ঞান পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্নও ফাঁসযাযাদি রিপোর্ট ফাঁস হওয়া প্রশ্নে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা চলছে। বৃহস্পতিবার দৈনিক যায়যায়দিনে ছাপা হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। খুদে শিক্ষার্থীদের হাতে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন তুলে দেয়ার এ ঘটনা রাষ্ট্রকে মেধাহীন ও পিছিয়ে নিয়ে যাবে বলে অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে বরাবরের মতোই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার দৈনিক যায়যায়দিনে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের দুই সেট প্রশ্ন ছাপা হয়। এর মধ্যে ‘ক’ সেট প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। যা পত্রিকায় ছাপা হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। পরীক্ষায় গ্রামার অংশে ১ নাম্বার প্রশ্নে অৎঃরপষব, ৩ নাম্বার প্রশ্নে ঞধনষব, ৪ নাম্বার প্রশ্নে ওহফরৎবপঃ ংঢ়ববপয, ৬ নাম্বার প্রশ্নে জব-ৎিরঃব/ঈধঢ়রঃধষরুধঃরড়হ, ৭ নাম্বার প্রশ্নে ঝঁভভরীবং ধহফ চৎবভরী. পরীক্ষায় কমপজিশন অংশে ঈড়সঢ়ড়ংরঃরড়হ ছাপা হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া যায়।
এরপর সাংবাদিকরা বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক) এএস মাহমুদের নজরে আনলে তিনি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে বিকালেই তাৎক্ষণিক মিটিং আহ্বান করেন। জানা গেছে, ওই মিটিংয়ে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে ‘নিছক সাজেশন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়। একইসাথে তারা ‘২০ লাখ শিক্ষার্থীবহুল অনেক বড় পরীক্ষা’, ‘চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যথাসময়ে পরীক্ষা শেষ না করতে পারার আশংকা’- ইত্যাদি বিবেচনায় পরীক্ষা বাতিল না করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রসঙ্গে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, পত্রিকায় ছাপা হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নের ৭০ শতাংশ মিলেছে। এতে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তা বোঝায় না। ওই ফাঁস হওয়া প্রশ্নকে তিনি ‘শর্ট সাজেশন’ বলে দাবি করেন।
এদিকে শনিবার সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই প্রশ্নপত্রের ছাপানো কপি বিক্রি করতে দেখা গেছে। রাজধানীতে ফাঁস হওয়া এই প্রশ্ন ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া মুঠোফোনের খুদে বার্তার মাধ্যমে সারাদেশে এই প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়া হয়।
বিকালে সাধারণ বিজ্ঞানের সৃজনশীল প্রশ্নের একটি ছাপানো কপি যায়যায়দিনের কাছেও আসে। ওই প্রশ্নে ৬০ নাম্বারের দুই ঘণ্টা ২০ মিনিটের এই পরীক্ষায় ৯টি প্রশ্নের মধ্যে যে কোনো ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়েছে। ১ নাম্বার প্রশ্নে (ক) তড়িৎ বিশ্লেষ্য কাকে বলে? (খ) প্রশমন বিক্রিয়া ব্যাখ্যা কর। (গ) ু চুনের পানির বিক্রিয়া সমীকরণসহ লিখ। বিক্রিয়ার তুলনা কর। ২ নাম্বার প্রশ্নে (ক) ভিনেগারে কোন এসিড বিদ্যমান? (খ) ‘অ্যামোনিয়া একটি ক্ষারক’ ব্যাখ্যা কর। (গ) অ-এর সাথে ঈধঈড়৩ বিক্রিয়ায় কি উৎপন্ন হয়? সমীকরণসহ লিখ। (ঘ) পাকস্থলীর এসিডিটি দূরীকরণে ই যৌগটির ভূমিকা বিশ্লেষণ কর। ৩ নাম্বার প্রশ্নে একটি চিত্র উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হয়েছে (ক) ছায়াপথ কাকে বলে? (খ) ছ-এর কয়টি উপগ্রহ রয়েছে? (গ) যোগাযোগের ক্ষেত্রে জ-এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উদ্দীপককে জ-এর চলার কৌশল বিশ্লেষণ কর।
৪ নাম্বার প্রশ্নে এক্স ভরের একটি বস্তুকে চাঁদে নিয়ে ওজন মাপা হলে ওজন ৩০ নিউটন পাওয়া গেল। (ক) ভর কাকে বলে? (খ) লিফটে কখন বস্তু বস্তুহীন অনুভব করবে? ব্যাখ্যা কর। (গ) উদ্দীপককে ঢ-এর মান নির্ণয় কর। (ঘ) চাঁদের ওজনের কি পরিবর্তন ঘটল? এর পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
৫ নাম্বার প্রশ্নে ইমান তান বাসায় দুটি বাল্ব ও একটি ফ্যানকে একটি বর্তনীতে যুক্ত করে কিছুদিন ব্যবহার করার পর একদিন সুইচ চালুর পর … (ক) ভোল্টমিটার কাকে বলে? (খ) ওহমের সূত্রটি ব্যাখ্যা কর। (গ) উদ্দীপকের বর্তনীটি একে এর বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা কর। (ঘ) উদ্দীপকের বাল্ব ও ফ্যান বর্তনীতে কিভাবে সংযোজিত হলে ভাল বাল্বটিকে জ্বালানো যেত? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর। ৬ নাম্বার প্রশ্নে ইলিশ মাছ জীবনের সম্পূর্ণ অংশ পানিতে কাটায়… । (ক) অ্যাসিডিয়ার দেহে নটোকর্ডের অবস্থান লিখ। (খ) কেঁচো ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য লিখ? (গ) উদ্ধৃতাংশের উদ্ভিদে কোন ধরনের অঙ্কুরোদ্গম ঘটবে? ব্যাখ্য কর। (ঘ) ফলটি উৎপাদনে নিষেক কৌশল বিশ্লেষণ কর।
৮ নাম্বার প্রশ্নে চিত্র উল্লেখ করে (ক) ফল পাকাকে কোন জৈব পদার্থ সাহায্য করে? (খ) উদ্ভিদ জীবনে ফ্লোরিজেন এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। (গ) অ অংশ সূর্যালোকের প্রতি কোন ধরনের চলন প্রদর্শন করবে ব্যাখ্যা কর। (ঘ) অ অংশে উপস্থিত হরমোনটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। ৯ নাম্বারের প্রশ্নে আছে ব্যাঙাচি, সবুজ উদ্ভিদ, বক, মানুষ, শামুক, হাঁস, টাকি মাছ, শেওলা।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এই সমাপনী পরীক্ষায় এবার দেশের ২৭ হাজার ৭৪৮টি স্কুল ও মাদ্রাসার ১৯ লাখ ২ হাজার ৭৪৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে জেএসসিতে ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩১৩ জন এবং জেডিসিতে তিন লাখ ১৫ হাজার ৪৩৩ জন শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর খান বলেন, পত্রিকায় ছাপানো প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে এটা দুঃখজনক। এতে মেধাবীরা আশাহত হবে। তিনি বলেন, ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়ে পাসের হার বাড়িয়ে জাতিকে শিক্ষিত করা সম্ভব নয়। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মঞ্জুআরা বেগম বলেন, এ ধরণের ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভ্রান্ত হবে। এটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরণের কাজ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
অভিভাবকদের সংগঠন ‘অভিভাবক ফোরামের’ আহ্বায়ক জিয়াউল কবির দুলু বলেন, যেসব খুদে শিক্ষার্থীর হাতে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন তুলে দেয়া হচ্ছে তারাই তো আগামীতে দেশের কা-ারি হবে। প্রশ্ন ফাঁস করে পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীদের থেকে রাষ্ট্র কি পেতে পারে তা ভেবে দেখতে হবে? এ ব্যাপারে সরকারকে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।