স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করা নিয়ে আইনি জটিলতায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন। কারণ, বেশি আগে নির্বাচন হলে দেশে একই সময়ে দুটি সংসদ বহাল থাকবে। কমিশন মনে করছে, ২০ জানুয়ারির আগে-পরে নির্বাচন হলে দুটি সংসদের সাংঘর্ষিক অবস্থান এড়ানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনা বা অন্য কোনো প্রয়োজনে তফসিল পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে না। কারণ, ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার ব্যাপারে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, ‘নির্বাচন তো করতেই হবে। সুতরাং যে সময়ে করলে সবার জন্য ভালো হয়, সে সময়ে নির্বাচন করা হবে।’ সংবিধানের সাংঘর্ষিক দুটি ধারা এই জটিলতার সৃষ্টি করেছে। কমিশন এখন এই জটিলতা এড়ানোর পথ খুঁজছে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ৭২ অনুচ্ছেদে আছে, আগেই ভেঙে না গেলে সংসদের মেয়াদ হবে প্রথম বৈঠক থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর।
এই দুটি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে। কারণ বর্তমান সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেই হিসাবে বর্তমান সরকার বা সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি। এ ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করেছে সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ। এতে বলা আছে, সাধারণ নির্বাচনের ফল সরকারিভাবে প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচিত সাংসদেরা শপথ নেবেন।
রেওয়াজ অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণের দিনের মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের পার্থক্য থাকে। কমিশন মনে করে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে জানুয়ারির প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে দুই সপ্তাহ বা তার কিছু বেশি সময় বাকি থাকবে। অন্যদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৩০ ধারা অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম পাওয়ার পর কমিশন তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করবে। তবে কত দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে, সে সম্পর্কে আইনে কিছু বলা নেই।
কিন্তু কমিশন অতীতে সব নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তিন দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করেছে। এরপর তিন দিনের মধ্যে নতুন সাংসদদের শপথ নিতে হবে। এমনটি হলে বর্তমান সরকার বা সাংসদদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন সাংসদেরা দায়িত্ব পেয়ে যাবেন।
জানুয়ারির তৃতীয় অথবা চতুর্থ সপ্তাহে ভোট গ্রহণ হলে তিন দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করে ২৪ জানুয়ারি নতুন সাংসদদের শপথ পড়ানো সম্ভব। কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, অতীত অভিজ্ঞতার কারণে কমিশন এই কৌশলকেও ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। কমিশন পর্যালোচনা করেছে, ২০০৮ সালে ৫৯ দিন হাতে রেখে ২ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রথমে ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারিত ছিল ১৮ ডিসেম্বর।
পরে তিন দফা তফসিল পরিবর্তন করে ২৯ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ হয়। সেবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট শুরুতে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হয়নি। পরে তাদের নির্বাচনে আনার জন্য কমিশন তফসিল পরিবর্তন করে। অন্যান্য নির্বাচনেও এক বা তার অধিকবার নির্বাচনের তফসিল পরিবর্তনের নজির আছে।
কমিশন মনে করে, এবারও যদি বিএনপি শেষ সময়ে নির্বাচনে আসতে চায়, সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। কারণ, প্রস্তুতির জন্য তাদের সময় দিতে হবে। কমিশন এই জটিলতাও এড়াতে চায়।
তবে গতকাল একজন কমিশনার বলেন, হাতে সময় নিয়ে তফসিল ঘোষণা করা হলে শেষ মুহূর্তেও বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার সুযোগ থাকবে। আর বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় এবং ভোট গ্রহণ যদি জানুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে হয়, সে ক্ষেত্রে কয়েক দিন বিলম্ব করে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন দিন আগে নির্বাচনের ফল গেজেটে প্রকাশ করলে ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। কিন্তু অন্য কমিশনাররা ভোট গ্রহণের দিন থেকে তিন দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের রেওয়াজ ভাঙতে চান না।