স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঙ্গলবার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আগামী রোববার থেকে পাঁচ দিনের টানা অবরোধ কর্মসূচি পালনের ডাক দিতে যাচ্ছে বিএনপির-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ১৮ দল।
তবে গত রোববার থেকে চলা টানা ৬০ ঘন্টার হরতাল শেষে এক দিন বিরতি দিয়ে দুদিনের ‘নরম’ কর্মসূচি পালন করবে বিরোধী জোট। এর মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ এবং শুক্রবার গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি।
সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় অনুষ্ঠিত দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির একাধিক সূত্র।
সূত্র জানান, রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠিত এ উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহসহ কয়েকজন নেতা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতার ফোনালাপ, সংলাপ নিয়ে করণীয় এবং আগামী দিনে আন্দোলনের কর্মসূচি কী হবে তা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
আগামী সপ্তাহে পাঁচ দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে নেতাদের কাছে জানতে চান খালেদা জিয়া। জবাবে নেতারা এ কর্মসূচির বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন।
পরে বিএনপি চেয়ারপারসন জানান, হরতাল শেষেই এ বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও ১৮ দলের নেতাদের সাথে আবার বসে পাঁচ দিনের অবরোধ কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
বৈঠকে গত দুদিনের হরতাল কর্মসূচিতে ১৮ দলের তৎপরতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এ সময় নেতারা খালেদা জিয়াকে অবহিত করেন এরই মধ্যে দেশের ৪০টিরও বেশি জেলার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ১৮ দল। এসব জেলার পুলিশ ও প্রশাসন নিরপক্ষে আচরণ করছে বলেও তারা জানান।
কয়েকটি জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় বিরোধী নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনাগুলো আলোচনা শেষে জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রয়োজনীয় দিকে নির্দেশনা দেন বলে দাবি করেছেন বৈঠক সূত্র।
সূত্র জানান, বৈঠকে ৬০ ঘণ্টার হরতাল শেষে আজ বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
এতে হরতালকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুল ও সরকারদলীয় হামলার বিষয়টি তুলে ধরে বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং শুক্রবার গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ঘোষণা করবেন মির্জা ফখরুল।
এদিকে আরেকটি সূত্র জানান, বৈঠকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে ৬০ ঘন্টার হরতাল শেষে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিরোধী দলীয় নেতার সংলাপের বসার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে সংলাপ করতে গণভবনে খালেদা জিয়াকে পুনরায় আমন্ত্রণের দিনক্ষণ চুড়ান্ত করে ফোন করা না হলে বিএনপির পক্ষ থেকে আগে ফোন না করার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
প্রধানমন্ত্রীর নতুন করে আমন্ত্রণ আর সংলাপের প্রাথমিক উদ্যোগসহ সার্বিক বিষয়ে সরকারের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব দেয়া হয় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে।
তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে প্রাথমিক উদ্যোগে নেবে। এ উদ্যোগ ব্যর্থ হলে চেয়ারপারসন নিজেই দায়িত্ব নেবেন বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
এ সময় মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়াকে জানান, গত রোবার এবং সোমবার বেশ কয়েকবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাথে তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু সৈয়দ আশরাফ তার ফোন ধরেননি। এ জন্য নিজের বিরক্ত হওয়ার কথা বিরোধী দলীয় নেতাকে অবহিত করেন তিনি।