স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফুটবল ফেডারেশন নতুন মওসুমের ঘণ্টা বাজিয়ে দিলেও অবিশ্বাস্যভাবে ক্লাবগুলো কোন সাড়া দিচ্ছে না। গত ২৪শে আগস্ট থেকে দল বদলের সূচি ঘোষিত হলেও এখন পর্যন্ত একজন ফুটবলারও তাতে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেননি। নতুন সূচি অনুযায়ী শেষ সময় এ মাসের ৩০ তারিখ। অথচ গতকাল পর্যন্ত কোনো ক্লাব তার নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করায়নি। দু-একদিনে দল বদলের কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা নেই কোন দলের জানিয়েছেন বাফুফে সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। দল বদলের কার্যক্রমে দলগুলোর ভাটার টানে সঙ্কটে পড়েছে ফেডারেশন কাপ। শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ১০ দল ছাড়া কারও আগ্রহ নেই মওসুমের এ প্রথম টুর্নামেন্টের। দেশের রাজনৈতিক অচল অবস্থা, সন্সর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের নীরবতা, সবকিছু মিলিয়ে মেওসুমের শুরুতেই কঠিন অবস্থার মধ্যে পরেছে দেশের ফুটবল।
রাজনৈতিক অচল অবস্থায় থমকে গেছে পুরো দেশ। এর প্রভাব পড়ছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ছোটখাটো ক্লাবগুলো আর্থিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারছে না। বেশি বেকায়দায় পড়েছে আরামবাগ, রহমতগঞ্জ, ফরাশগঞ্জ, চট্টগ্রাম আবাহনী, ফেনী সকারের মতো ক্লাবগুলো। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থের যোগাড় হচ্ছে না। অর্থের অভাবেই এরা এখনও দল বদলে অংশ নিতে পারছে না। এর সঙ্গে যুক্ত ফুটবলারদের সৃষ্ট জটিলতা। দুই ক্লাব থেকে অর্থ নেয়ার অপরাধে ছয় ফুটবলারকে দাঁড়াতে হয়েছে বাফুফের কাঠগড়ায়। তারা হলেন জাহিদ হোসেন, মামুন মিয়া, নাহিদুল ইসলাম, মিঠুন চৌধুরী, শাকিল আহমেদ এবং সর্বশেষ সংযোজন শরীফুল ইসলাম। প্রথম চারজন গত মওসুমে খেলেছেন শেখ রাসেলের হয়ে, এবার তারা প্রথমে মোহামেডানমুখী হয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু টাকা নিয়ে আবার পুরনো ক্লাবে ফিরে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে সমস্যা। মোহামেডানের তরফে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বাফুফের কাছে। রাসেলের মিঠুন চৌধুরীও একই কাণ্ড করেছিলেন। আবাহনীতে গিয়ে ফিরেছেন পুরানা দলে যদিও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বাফুফের দ্বারস্থ হয়নি। সর্বশেষ অভিযুক্ত শরীফুল ইসলাম, নিজের গত মওসুমের ক্লাব মোহামেডানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি আবাহনীতে গেছেন বলে অভিযোগ করেছে মোহামেডান। গত মঙ্গলবার বাফুফের প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির মুখোমুখি হয়ে দায়ও স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ফুটবলাররা। এরপরেও বিষয়টির সুরাহা করতে পারেনি বাফুফের প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটি। তারা কথা বলতে চেয়েছে আবাহনীর সঙ্গে। এতে থমকে গেছে মোহামেডান, শেখ রাসেল, আবাহনীর দল বদলের রেজিস্ট্র্রেশন প্রক্রিয়া। আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপু জানিয়েছেন আগামী মঙ্গল কিংবা বুধবার তারা জাঁকজমকভাবে দল বদলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। শেষ রাসেলও তাকিয়ে রয়েছে প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির দিকে। যে ছয় ফুটবলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের চারজনই শেখ রাসেলের হয়ে অনুশীলন করছেন। এদের ব্যাপারে সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত দল বদল সারতে পারছে না গতবারের তিনটি শিরোপা জয়ীরা। শেখ রাসেলের মতো অবস্থা মোহামেডানেরও। এমনকি চার ফুটবলার অগ্রীম নিয়ে খেলতে চাচ্ছে না ক্লাবটিতে। তার ওপর যারা দলে রয়েছেন তারা গড়িমসি করছেন। ক্যাম্প শুরুর দ্বিতীয় দিনের মাথায় আর্থিক কারণে অনুশীলন বর্জন করেছেন।
তবে মসৃণভাবেই দল বদলের শেষদিনে আনুষ্ঠানিকতা সারতে চাইছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র। দলটির ম্যানেজার আবদুস সাত্তার জানান, দল গোছানো শেষ হয়েছে, আগামী বুধবার জাঁকজমকভাবেই আনুষ্ঠানিকতা সারবো। তবে আসন্ন মওসুমে শঙ্কা রয়েই গেছে। ক্লাবগুলো দল বদল সেরে ফেলার পরও বাফুফের সব আয়োজন নির্ধারিত সময়ে এবং মসৃণ গতিতে হবে কি না, এ নিয়েই সন্দেহ আছে। গত কয়েক মাস ধরে বাফুফে চলছে স্পন্সরহীন, গত কয়েক বছরের সঙ্গী গ্রামীণফোন এখনও সাড়া দেয়নি। এর মধ্যে আবার বিশাল অঙ্কে দুই ডাচ কোচ এনে তাদের অর্থ জোগাতে গলদঘর্ম অবস্থা বাফুফের। সাফে তারা নিষ্ফল হয়ে আরেক সঙ্কটে ফেলেছে ফুটবলকে। সাফের গ্রুপ পর্ব থেকে বাংলাদেশের বিদায়ের পর স্বাভাবিকভাবে স্পন্সরদের আগ্রহ কমে যাবে ফুটবলে। তাছাড়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অনুকূলে নয় যে পরিকল্পনা করে গুছিয়ে নেয়া যাবে। তাই আসন্ন ফুটবল মওসুমে লীগ এবং তিনটি টুর্নামেন্টের ঠিকঠাক হওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে। শঙ্কাটা বাড়িয়ে দিয়েছে ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়নশিপ লীগের ৭ দলের পিছুটান।