বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ ভারত রাষ্ট্রটি ধীরে ধীরে যেন নারীদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। ভারতে নারী নির্যাতনের একের পর এক রোমহর্ষক ঘটনা ঘটেই চলছে। গণমাধ্যমের কল্যাণে সেগুলো বিশ্ববাসীর কাছে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,বাসা-বাড়ি, গণপরিবহন এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয়েও নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
সম্প্রতি ভারতের হায়দ্রাবাদে এক প্রকৌশলী তরুণী কয়েকজন বিকৃত রুচির পাষণ্ডের লালসার শিকার হয়েছেন। তাকে ছাত্রীনিবাসে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে এক জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে।
গণধর্ষণের শিকার ওই তরুণী পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি আইটি ফার্মের জন্য বিখ্যাত হায়দ্রাবাদের সায়বেরাবাদের একটি ফার্মে কর্মরত।
ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ৩২ বছর বয়সী সতিশকে পুলিশ জিজ্ঞাসা করছে। সতিশের কাছে পুলিশের জিজ্ঞাসা ছিল,‘নির্যাতিতা ওই তরুণী অভিযোগ করলে আপনাকে ও আপনার সঙ্গীকে দিল্লিতে গণধর্ষণকারীদের মতোই ভাগ্যবরণ করতে হবে এমন চিন্তা কী মাথায় আসেনি?’ জবাবে তিনি বলেন,‘আমরা মনে করেছিলাম, তিনি (তরুণী) অভিযোগ করবেন না।’
হাস্যকর হলেও সতিশের ধারণা অনেকাংশে মিলে যায়। ধর্ষণের শিকার তরুণীটি প্রথম প্রথম পুরো ঘটনা গোপনও করেছিলেন। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনি এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলেননি। পরে পুলিশের জেরার মুখে তিনি ঘটনা খুলে বলেন।
প্রকৃত ঘটনা হলো-সতিশ ও তার সহযোগী ২৮ বছর বয়সী ভেনকাটেসওয়ারুলু প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ওই তরুণীকে অপহরণ এবং পরে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই তরুণী বাসা থেকে বের হন এবং সায়বেরাবাদে একটি বিপণিবিতানে কেনাকাটা ও অন্য একটি জায়গা ঘুরে রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি ছাত্রীনিবাসে ফিরতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় ওই দুই ভণ্ড বিলাস বহুল একটি প্রাইভেটকারে করে তরুণীকে ছাত্রীনিবাসে পৌঁছে দেয়ার জন্য ৫০ রুপি দাবি করে। শেষ পর্যন্ত ৪০ রুপিতে ফয়সালা হয় ।তারা তরুণীকে তার গন্তব্যে পৌঁছে না দিয়ে মেদাক জেলা সংলগ্ন একটি জঙ্গলে নিয়ে যায় এবং সেখানে গাড়ির মধ্যেই তাকে ধর্ষণ করে।
বিপণিবিতান থেকে জঙ্গলে পৌঁছাতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। মাঝপথে তরুণী তাদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে তাদের বার বার জিজ্ঞাসা করলেও তারা এতে কোনো কর্ণপাত করেনি। রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ওই তরুণী বেঙ্গালুরেু তার এক বন্ধুর মোবাইল ফোনে কল করার চেষ্টা করেন।
কিন্তু সতিশ ও তার সহযোগী বিষয়টি টের পেয়ে তার মোবাইলফোনটি কেড়ে নেন। এরই মধ্যে তরুণীর ছেলে বন্ধু বুঝতে পারে তার বান্ধবী কোনো বিপদে পড়েছে। তিনি হায়দ্রাবাদে অন্য বন্ধুদের পুলিশকে জানাতে বলেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্তে নামে। এর মধ্যেই ধর্ষকরা তরুণীকে রাত ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে তার ছাত্রীনিবাসে রেখে যান।
তরুণীটি পুলিশ এমনকি তার ছেলে বন্ধুর কাছেও ধর্ষণের কথা বলেননি। কিন্তু তার পোশাকে লেগে থাকা রক্ত দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়।
সায়বেরাবাদ পুলিশ কমিশনার সি ভি আনান্দ বলেন, ‘তরুণীটি দুই আসামির সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা ছিল। তথ্য-প্রমাণ দেখে এটাই প্রমাণিত যে, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরদিন সন্ধ্যায় তরুণী ঘটনা খুলে বলেন। পুলিশ তখন বিরলা স্কুলের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে। ঘটনার দিন রাতে ওই স্কুলের পাশ দিয়েই গাড়িটি গিয়েছিল। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মধ্যরাতের পর গাড়িটি ওই স্কুলের সামনে দিয়ে যায়। ’
পুলিশ কমিশনার বলেন,‘ভিডিও ফুটেজটি অস্পষ্ট ছিল। এজন্য আমরা গাড়িটির মডেল শনাক্ত করতে জাতীয় সংস্থার সহায়তা নেই। সবশেষে আমরা ওই ভলভো গাড়ির ছবি আঁকতে সক্ষম হই যে গাড়িতে করে তরুণীটিকে অপহরণ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে গাড়িটির নম্বর প্লেট ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না। এজন্য পুলিশ হায়দ্রাবাদের সব ভলভো মডেলের গাড়ি চেক করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অপহরণ ও ধর্ষণে ব্যবহৃত গাড়িটি ছিল খুবই বিলাসবহুল। গাড়িটির মূল্য ৪০ লাখ রুপি। জনৈক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে গাড়িটি একটি ভ্রমণ সংস্থা থেকে লিজ নেয়া হয়েছিল। গাড়িটির মালিক যখন স্টেশনে ছিলেন না তখন আসামিরা এটাকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন।’
আনান্দ বলেন, ‘তরুণীর সামাজিক মর্যাদা ও ঘটনার গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে তাকে ‘আবহায়া’ নাম দেয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যামকে এ ঘটনা গোপন রাখার কথা বলা হয়েছে। কেননা আমরা তার মৃত্যু দেখতে চাই না। তরুণীটি তার বাবা-মাকেও ঘটনা বলতে চাননা। কারণ এতে তার বাবা-মা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন।’
এরই মধ্যে তরুণীটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এতে তাকে ধর্ষণ করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. পূর্ণিমা নাগারাজা বলেন, ‘ভারতে ধর্ষণের শিকার নারীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে না। এ ধরণের এক হাজার ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনায় অভিযুক্তরা শাস্তির মুখোমুখি হয়।’
তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা তাদের ভবিষ্যত, বাবা-মা ও স্বামীর কথা চিন্তা করে ঘটনা প্রকাশ করে না। কারণ এতে তারা আঘাত পেতে পারে। আর এ বিষয়টিই ধর্ষকদের এ ধরনের অপরাধে উৎসাহিত করে।’