রাত নামলেই যৌনকর্মীদের দখলে ঢাকা

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ মাদকসেবী এবং যৌনকর্মীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে পুরান ঢাকার কোর্ট-কাচারি এলাকা। সন্ধ্যার পর থেকে জজকোর্ট এবং পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের আশপাশ এলাকায় তাদের উৎপাত বাড়তে থাকে।প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পরই ওই এলাকায় বসে যৌনকর্মী এবং মাদকসেবীদের আড্ডা। রাস্তার দু‘পাশে যৌনকর্মীদের ভিড়ে সাধারণ পথচারীদের প্রতিনিয়ত পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।অপরদিকে মাদকসেবীদের খপ্পরে পরে সর্বস্ব খোয়াতে হচ্ছে অনেকের। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলে আসলেও তা দেখেও না দেখার ভান করছে পুলিশ প্রশাসন। অভিযোগ আছে পুলিশ মাদকসেবী এবং যৌনকর্মীদের কাছ থেকে মাসেহারার বিনিময়ে নির্বিকার।রাজধানীর পুরান ঢাকার জনসন রোডে অবস্থিত জর্জকোট এবং ঢাকা পুলিশ সুপারের কার্যলয়। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ছাড়াও এর পাশেই রয়েছে ঢাকা জেলা পরিষদ, পাসপোর্ট অফিস, বাংলাদেশ ব্যাংক, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের অন্যতম প্রবেশদ্বা ওই রাস্তাটি।এসব প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে ওই এলাকায় প্রতিদিন সহস্রাধিক মানুষের চলাচল রয়েছে। তাছাড়া ওই এলাকায় সেন্ট গ্রেগরি, সেন্ট ফ্রান্সিস, কলেজিয়েট স্কুলসহ বেশ কয়েকটি নামিদামি স্কুল থাকায় ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কোমলমতি শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের চলাচল করতে হয়।

রাজধানীর এই গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যবস্ততম এলাকাটিতে গভীর রাত পর্যন্ত রয়েছে পথচারীদের চলাচল। কিন্তু সন্ধ্যার পর পরই পুরো এলাকাটি চলে যায় মাদকসেবী এবং যৌনকর্মীদের দখলে। তখন ওই এলাকা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে শুধু বিড়ম্বনা নয়; অনেকেই হয়রানীর শিকার হয়। মাদকসেবীদের খপ্পরে পরে মোবাইল, মানিব্যাগসহ সবকিছু খোয়াতে হয়।

সরজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে যৌনকর্মীরা রায়সাহেবের বাজারের মোড়, পুলিশ ক্লাব (১৯/এ, জনসন রোড), জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেটের কার্যালয়, জর্জ কোর্ট, পুলিশ সুপারের কার্যালয় হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত এবং মদিনা হোটেল, পূবালী ব্যাংক, আজাদ ম্যানশন(সিনেমা হল), জেলা পরিষদ হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে যৌনকর্মীদের সবচেয়ে বেশি দেখা মিলবে আজাদ ম্যানশন (সিনেমা হল) এবং পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে।

সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১টা-২টা পর্যন্ত এসব এলাকায় যৌনকর্মী ও তাদের দালালদের অবাধ বিচরণ থাকে ওই এলাকায়। তখন ওই রাস্তার পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে তাকে নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক যৌনকর্মী পথচারীদের রাস্তা আগলে দাঁড়ায়। পথচারীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমত টাকা আদায় করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব যৌনকর্মীরা ভাসমান। দিনের বেলায় এদের অস্থিত্বও খুঁজে পাওয়া যায় না। সন্ধ্যার আগে সস্তা প্রসাধনে সজ্জিত হয়ে ওই এলাকায় তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় যৌনকর্মীদের ঘিরে সক্রিয় হয়ে পড়ে দালাল চক্রও। দালাল চক্রের মধ্যে নারী পুরুষ উভয়ই রয়েছে। মূলত এরাই যৌনকর্মীদের জন্য খদ্দর সংগ্রহ করে।

অনুসন্ধানে আরও যানা যায়, ভাসমান যৌনকর্মীদের সঙ্গে কেউ অভিসারে যেতে চাইলে যৌনকর্মীকে ১০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। তবে কেউ যদি দালালের মাধ্যমে যৌনকর্মীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় তবে এরজন্য দালালকেও আলাদা টাকা দিতে হয়। এরপর খদ্দের তার পছন্দ অনুযায়ী বাসা কিংবা হোটেলে নিয়ে যায় এদের।যৌনকর্মীদের ঘিরে আরেকটি মাদকাসক্ত চক্র সক্রিয় রয়েছে। আবার অধিকাংশ যৌনকর্মী ফেনসিডিল, হিরোইন ও ইয়াবা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত। ফলে শুধু খদ্দের নয়, তাদের হাতে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকেও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

অভিযোগ আছে এসব যৌনকর্মীদের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ চলে যায় কোতোয়ালি থানা ও সূত্রাপুর থানা পুলিশের কাছে। ফলে এলাকাবাসী বহুবার অভিযোগ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, মদিনা হোটেলের তিন তলায় তার চেম্বার। আইনি পরামর্শের জন্য রাতে অনেকেই তার কাছে আসেন। কিন্ত ওই এলাকাটিয় তখন যৌনকর্মী এবং মাদকাসক্তদের অবাধ বিচরণ থাকায় অনেকেই হয়ারানির শিকার হন।এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সূত্রাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম প্রাইমখবর ডটকমকে বলেন, ‘পুলিশ নিয়মিত ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে। ইতিমধ্যে অনেক অপরাধীকে আটকও করেছে। সাধারণ মানুষ যাতে ওই এলাকায় নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সেজন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রায় একই ধরনের বক্তব্য কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলমের।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫