স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ছয় মাস রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। দাতা সংস্থাটি বলছে, সামনের নির্বাচনকে নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করবে, যা জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাধা হিসেবে কাজ করবে। এ কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে থাকবে। তবে ছয় মাস পর আগের মতোই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কে সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের প্রধান রডরিগো কুবারো এসব তথ্য জানান।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) পর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করল এ দাতা সংস্থা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হ্রাস, পোশাকশিল্প খাতে শ্রমিক অসন্তোষ ও বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকা এ শঙ্কার কারণ বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বর্ধিত ঋণসহায়তার (ইসিএফ) চতুর্থ কিস্তির ঋণ ছাড়ের জন্য গত ২২ সেপ্টেম্বর আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। এ সময় প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রী, অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ আর্থিক খাতের শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে সাাৎ করে। সফরের শেষ দিন গতকাল তারা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় আইএমএফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইতেরি কেভিনত্রাডজে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হওয়ায় প্রতিনিধি দলটি ইসিএফের চতুর্থ কিস্তির ১৪০ মিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে; যা আগামী ডিসেম্বরের আগে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড সভায় অনুমোদনের পর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। শর্তানুযায়ী তিন বছরে সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের প্রধান রডরিগো কুবারো বলেন, সরকার শর্ত অনুযায়ী নতুন ভ্যাট আইন ও ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস করেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের মাধ্যমে এ খাতের আইনি কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতে নজরদারি ও সুশাসন বাড়াতে সহায়তা করবে।
সরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলো দুর্বল অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে রডরিগো আরো বলেন, এসব ব্যাংকে আমানত স্থিতিশীল আছে, তারল্যেরও একই অবস্থা। তবে মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সরকার মূলধন জোগান দেয়ার যে পরিকল্পনা করছে, তাতে আইএমএফের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে এেেত্র শর্ত দিয়ে করপোরেট সুশাসন, ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
তেল ও সারে ভর্তুকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ভর্তুকির বিরুদ্ধে। তবে এখনই ভর্তুকি প্রত্যাহার নয়, ক্রমান্বয়ে তা করতে হবে। ভর্তুকির অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অবকাঠামো কাজে ব্যয় করতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ থাকা প্রসঙ্গে প্রতিনিধি দলের প্রধান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তদারক করবে আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মালিক হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ও নজরদারি করবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইনের ফলে নজরদারি ও তদারকি আরো বেড়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে, তাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমদানি, রফতানি, ঋণ প্রবৃদ্ধি ও কর আহরণের চিত্রে আগামী ছয় মাসের জন্য দেশের অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে পোশাকশিল্পের চলমান শ্রমিক অসন্তোষও অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।