কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পর্যটকরা

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার ॥ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে পর্যটকরা দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে। যাতায়াত সমস্যা, আবাসিক হোটেল ও খাবারের রেস্টুরেন্ট মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, পর্যটন স্পটে দালালের দৌরাত্ম্য এবং নিরাপত্তার অভাবের কারণে পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

একই সঙ্গে ময়লা-আবর্জনায় শ্রীহীন হয়ে পড়েছে সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য।

পর্যটক, ব্যবসায়ী ও কক্সবাজারের সচেতন মহল মতে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্রতিবছর স্বাভাবিকভাবে বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার আসলেও গত ৫ বছর ধরে এ পরিস্থিতি উল্টো হয়েছে। ক্রমাগত পর্যটকরা কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

এর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার-ঢাকা সড়ক পথে যাতায়াত সমস্যা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সরু ও ভাঙা সড়কের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল মোটেল মালিকরা নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। রেস্টুরেন্ট গুলোতেও আদায় করা হয় অতিরিক্ত বিল। এর জন্য পর্যটকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে প্রায়শ।

এছাড়াও দালালদের দৌরাত্ম্য পর্যটকদের বিরক্তের অন্যতম কারণ। পর্যটন স্পটে ছিনতাইকারীসহ মাদকসেবীদের আনাগোনার কারণে পর্যটকরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে অভিযোগ পর্যটকদের। একই সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি ঘিরে তৈরি হয়েছে এক ধরণের বস্তি আকারে ঝুপড়ি দোকান। এসব স্পটে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এতে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।

পর্যটন কর্পোরশনের কক্সবাজার কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম জানান, বিগত সময়ের তুলনায় কক্সবাজারে পর্যটকের উপস্থিতি কমেছে। সড়ক পথে কক্সবাজার আসার সময় চট্টগ্রামের সাতকানিয়াসহ কিছু এলাকায় দুষ্কৃতিকারীরা নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। একই কারণে আগত পর্যটকের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তবে বিমানে পর্যটকদের যাতায়াত ব্যবস্থা পুরোপুরি নির্বিঘ্ন। সম্প্রতি বেসরকারি বিমানের ফ্লাইট বাড়ানোর কারণে আকাশপথে পর্যটকরা ভ্রমণে আসতে পারছেন সহজেই।

হোটেল কক্স টু ডে’র ব্যবস্থাপক আবু তালেব জানান, সমুদ্র সৈকতের ময়লা আবর্জনা, অবৈধ ঝুপড়ি দোকান ও ভ্রাম্যমাণ হকারদের উৎপাতের কারণে পর্যটকরা কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে নামতে বিব্রত বোধ করে। এছাড়াও বিদেশি পর্যটকরা সূর্যস্নানে অভ্যস্থ। কিন্তু কক্সবাজারে সূর্যস্নান করার মতো পরিবেশ না থাকায় দিন দিন বিদেশি পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটক বাড়ানোর জন্য সমুদ্র সৈকতকে পরিচ্ছন্ন ও হকার মুক্ত রাখার পাশাপাশি সরকারের পরিকল্পনাধীন এক্সক্লুসিভ জোনের প্রকল্পটি অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সহ সভাপতি সৈয়দ নুরুল বাসির জানান, সমুদ্র সৈকতের সব অবৈধ স্থাপনা ও ভ্রাম্যমাণ হকারদের উচ্ছেদে ইতোপূর্বে অনেকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য রক্ষার্থে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যত্রতত্র গড়ে উঠা ঝিনুকের দোকানগুলোকে সুশৃঙ্খল ও আকর্ষণীয় করতে বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঝিনুকের দোকানগুলোর আকর্ষণ বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অতি দ্রুতই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে। এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজারের প্রতি আরো আকৃষ্ট হবে।

আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পর্যটন স্পটে অপরাধী ও মাদক সেবীদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। তারা হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় পতিতা, মাদক, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধকর্ম চালাচ্ছে। আবারে তাদেরমধ্যে অনেক বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রশাসনের লোক বলে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার আজাদ মিয়া জানান, মাদক ও বিভিন্ন ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় টহল জোরদার রয়েছে। আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫