যেভাবে ফাঁস হয় সাকার ফাঁসির রায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় যে কম্পিটারে লেখা হয়েছে সেখান থেকেই পেনড্রাইভে করে তা নিয়ে গেছেন ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী আটক হওয়া নয়ন মিয়া। পুলিশ জানিয়েছে, টাকার লোভেই সে এই কাজ করেছে।

ট্রাইব্যুনালে মাস্টার রোলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি নিয়েছিলেন নয়ন মিয়া। চাকরির সুবাদে ট্রাইব্যুনালের প্রায় সব কক্ষেই যেতে পারতেন তিনি। রায় লেখার কম্পিউটারও ধরতে পারতেন তিনি।

রায় ফাঁস হওয়ার পর এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে কম্পিউটারটি বৃহস্পতিবার জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পুলিশ দেখতে পায় এটাতে ব্লুটুথে ফাইল আদান প্রদানের কোনো সুযোগ নেই। এরপর পুলিশ ধারণা করে পেনড্রাইভে করেই হয়তো ফাইল নেয়া হয়েছে।

এরপর ওই কক্ষের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পুলিশ দেখতে পায় নয়ন মিয়া একটি পেনড্রাইভে করে কম্পিউটার থেকে কিছু একটা নিয়েছে। এরপরই নয়ন মিয়াকে আটক করে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল জানিয়েছেন, নয়নের সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলামের সহকারী মেহেদী হাসানের যোগাযোগ ছিল। মেহেদী হাসান তার কাছে কিছু নথিপত্রের জন্যে আসলে তা ওই পেনড্রাইভে করেই দেন নয়ন। পেনড্রাইভ খুলে মেহেদী হাসান রায়ের অংশবিশেষ দেখতে পান। এরপর তিনি তা নয়নের কাছ থেকে নিয়ে যান।

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ওয়ার্ড ফাইলটি নিয়ে প্রথমে পিডিএফ ফরম্যাটে কনভার্ট করা হয়। এরপর ফাইলটি ইমেইল বা অন্য কোনো উপায়ে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। সেখান থেকেই একটি অনলাইনে রায়টি প্রকাশ করা হয়।

মনিরুল ইসলাম জানান, নয়ন এই কাজে মোটা অংকের টাকা পেয়েছেন মেহেদী হাসানের কাছ থেকে। আরও বিস্তারিত জানতে তাকে শনিবার তাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করবেন তারা।

নয়নের সাথে ট্রাইব্যুনালের স্থায়ী কর্মচারী ফারুকেরও যোগসাজস ছিল বলেও জানান মনিরুল। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জেনে জানানো হবে বলেছেন তিনি।

নয়ন, ফারুক এবং মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণ হলে আসামিদের সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মঙ্গলবার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিএনপি নেতার পরিবার ও আইনজীবীর অভিযোগ, যে রায়টি ফাঁস হয়েছে সেটা আইন মন্ত্রণালয়ের ছয়তলায় ভারপ্রাপ্ত সচিবের কক্ষে একটি কম্পিউটারে লেখা হয়েছে। আলম নামে একজন ওই কম্পিউটার চালাতেন।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের আলম নামে কোনো কর্মচারী নেই।

এদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলায় রায়ের পরদিন ট্রাইব্যুনাল বলেছে, রায়ের একাংশ ফাঁস হয়েছে এবং বিচারকে বিতর্কিত করতে বিপুল পরিমাণ টাকা ঢালা হয়েছে। এরপরই ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন এবং এর সূত্র ধরে তদন্তে নামে পুলিশ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫