টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলে ট্রেনযাত্রীদের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে টিকিট নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি হয়েছে। টিকিট হাতে পেয়ে কেউ আনন্দে বাড়ি ফিরেছেন। আবার অনেকে নিরাশ হয়ে পড়েছেন টিকিট না পেয়ে। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে ছিল টিকিট প্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু কাউন্টার থেকে টিকিট দিতে বিলম্ব, প্রত্যাশিত গন্তব্যস্থলের টিকিট না পাওয়া, তাপানুকূল এবং প্রথম শ্রেণীর টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করায় টিকিট প্রত্যাশীরা কমলাপুর রেল কর্তৃপরে ওপর ােভ প্রকাশ করেন। আবার প্রকাশ্য টিকিট কালোবাজারির অনেক সদস্য স্টেশন এলাকায় টিকিট বিক্রি করায় অনেকেই কিনতে পারেনি অগ্রিম টিকিট। এবারও মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি কাউন্টার রাখার ফলে টিকিট সংগ্রহকারী মহিলাদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।

রেল মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষিত সূচি মোতাবেক গতকাল সকাল নয়টা থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে পাঁচ দিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে বিক্রি করা হয় ১১ই অক্টোবরের ভ্রমণ টিকিট। আজ বিক্রয় করা হবে ১২ই অক্টোবরের টিকিট। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট আগামী ৬ই অক্টোবর পর্যন্ত বিক্রি করা হবে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের রাজধানীতে ফেরার জন্য ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রয় শুরু হবে আগামী ৯ই অক্টোবর। টিকিট বিক্রি চলবে ১৩ই অক্টোবর পর্যন্ত। কমলাপুর রেলস্টেশন সূত্র জানায়, প্রতিদিন বিভিন্ন রুটের ট্রেন যাত্রীদের জন্য কাউন্টার থেকে ১৭ হাজার টিকিট যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে।

ভ্রমণ তারিখের ঈদ অগ্রিম টিকিট রিটার্ন বা ফরোয়ার্ড পদ্ধতিতে ইস্যু করা হবে না। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটে টিকিট ক্রয় করা যাবে। ভিআইপিদের জন্য ৫ শতাংশ, রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ, মোবাইল এসএমএস ২৫ শতাংশ কোটা সংরতি রয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টারে উন্মুক্ত। নিরাপদ ট্রেন ভ্রমণের জন্য র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা, এপিবিএন, রেলওয়ে পুলিশ, আনসারসহ সংশ্লিষ্ট সকল সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। ভ্রমণ সুবিধার্থে ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজনসহ ঈদ-পূর্ব তিন দিন থেকে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা-পার্বতীপুর ও ঢাকা-খুলনা রুটে তিনটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। ঈদের একদিন পর থেকে ঢাকা-পার্বতীপুর পাঁচ দিন এবং ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ ও ঢাকা-খুলনা সাত দিন ট্রেন চলাচল করবে। ঈদের যাত্রীর চাপ বৃদ্ধি এবং ভ্রমণ সুবিধার কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত বগি ও বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু থাকবে।

সকাল নয়টা থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে টিকিট প্রত্যাশীরা কমলাপুর রেলস্টেশনের বিভিন্ন কাউন্টার সামনে অবস্থান নেন। ট্রেনের টিকিট পেতে সারারাত সেখানে, কেউ গান গেয়ে আনন্দ উৎসব করে জেগেছিলেন। অনেকেই আবার টিকিট কাউন্টারের জায়গা দখল হয়ে যাওয়ার ভয়ে পত্রিকা বিছিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, তাপানুকূল ও প্রথম শ্রেণীর টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিটি টিকিট ছাড়তে কমপে ১৫ থেকে ২৫ মিনিট সময় নেয়া হয়। টিকিট ছাড়তে না ছাড়তে কাউন্টার মাস্টার জানান (তাপানুকুল ও প্রথম শ্রেণীর) টিকিট নেই।

পুরুষের পাশাপাশি মহিলা ও প্রতিবন্ধী (কাউন্টার নম্বর-১৭) টিকিট কাউন্টারে টিকিট কাটতে আসা মহিলাদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। কাউন্টারের সামনে মহিলাদের দীর্ঘ লাইন অথচ একটি মাত্র কাউন্টার। মধ্যরাত থেকে ট্রেনের টিকিট কেনার জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে অপোরত মিনহাজ ও মাসুদ বলেন, বেলা তখন পৌনে দশটা। দুটি পরিবারের জন্য দরকার আটটি টিকিট। কিন্তু তারা টিকিট পেয়েছেন মাত্র দু’টি। কাউন্টার থেকে তাদের জানানো হয় প্রথম শ্রেণীর টিকিট শেষ। নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলের টিকিট এবং তাপানুকূল ও প্রথম শ্রেণীর টিকিট ফুরিয়ে যাওয়ায় ােভ ও অভিযোগের শেষ ছিল না টিকিট কিনতে আসা ট্রেন যাত্রীদের। রাজশাহীর সিল্ক সিটি এক্সপ্রেসের টিকিট কিনতে আসা জগন্নাথ কলেজ শিার্থী হাসনা হেনা বলেন- সকাল আটটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। বেলা ১১টা বাজে। অথচ এ পর্যন্ত কাঙিত টিকিট পাওয়া তো দূরের কথা কাউন্টার মাস্টারের জানালার সামনে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি নি।

গৃহিণী সাথী আক্তার বলেন, বৃদ্ধা শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে গ্রামে ঈদ করতে যাবো। এ জন্য তাপানুকূল কামরার টিকিট কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। চার ঘণ্টা পর কাঙিত টিকিট না পেয়ে শোভন টিকিট কিনতে বাধ্য হয়েছি। সকাল থেকে মহিলা কাউন্টারের সামনে প্রচণ্ড ভিড় হয় বলে জানান নিরাপত্তা মহিলা পুলিশ। দীর্ঘ সময় অপোর পর টিকিট বঞ্চিত মনিরা খাতুন জানান, বাসে খুলনা যেতে সময় লাগে। রাস্তায় যানজট। অনেক সময় বেশি নষ্ট হয়। তাই ভেবে ছিলাম ট্রেনে যাবো। কিন্তু এখন দেখছি পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে হলে বাসের টিকিট কাটতে হবে। ময়মনসিংহের যাত্রী ঝর্ণা বেগম জানান, সকাল সাড়ে নয়টা থেকে টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন, বেলা ১টা- দেড়টা বাজে। টিকিট পাইনি।

কমলাপুর স্টেশন মাস্টার খায়রুল বশির বলেন, রেলওয়ে সকল সময় তার ভ্রমণকারী যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত। ঈদসহ বিশেষ দিন উপলে বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে অভূতপূর্ব ট্রেন যাত্রীদের আগমন ঘটেছে। টিকিট পেতে বিলম্বিত অথবা কোন ধরনের কালোবাজারি নেই। যাত্রীদের চাহিদা মোতাবেক টিকিট সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন- এবারের ঈদে সমগ্র দেশে (ট্রেন রুটে) অতিরিক্ত ১১৮টি ট্রেন চলাচল করবে। প্রতি ঈদের মতো বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫