আইন ভেঙে বুড়িগঙ্গার তীরে হচ্ছে বর্ধিত টার্মিনাল

বাংরাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ আইন ভেঙে ঢাকার সদরঘাট নদীবন্দরে জনভোগান্তি কমানোর নামে বুড়িগঙ্গা নদীতীরে নির্মাণ করা হচ্ছে বর্ধিত টার্মিনাল ভবন। চারতলা এই ভবনের নিচতলা টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহূত হবে। বাকি তিনটি তলায় হবে বিপণিবিতান।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপরে (বিআইডব্লিউটিএ) দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় ১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে এই ভবন নির্মাণের দরপত্রের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

২০০৯ সালের ২৫ জুন ঢাকা ও আশপাশের নদীর অংশ ও তীরে নির্মিত সব সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে ঢাকা জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাট টার্মিনালসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিবেচনায় রাখার আবেদন জানায়। হাইকোর্ট জনস্বার্থে সরকারি স্থাপনা বহাল রেখে নদীর মূল অংশে (সিএস—ক্যাডেস্টাইল জরিপ) নতুন করে কোনো ধরনের স্থাপনা করা যাবে না বলে নির্দেশ দেন। কিন্তু এ নির্দেশ লঙ্ঘন করে বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাট ও সিমসন ঘাটের মাঝামাঝি স্থানে নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করছে। দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে ‘এক্সটেনশন টার্মিনাল টাওয়ার’ নির্মাণের কথা বলা হলেও বাণিজ্যিক ভবন বা বিপণিবিতানের নাম নেই। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান মো. শামছুদ্দোহা খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর দাবি, টার্মিনাল বর্ধিতকরণের ফলে হাইকোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, বন্দর তো নদীর পাড়েই করতে হবে।

গত শুক্রবার সদরঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো টার্মিনাল ভবনটি নদী ও নদীর তীরভূমিতে পড়েছে। ঠিক পশ্চিম পাশ বরাবর বর্ধিত টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হবে। ওই স্থান বরাবর বাকল্যান্ড বাঁধ এলাকায় নদীর সীমানা চিহ্নিত খুঁটি রয়েছে। যেখানে বর্ধিত ভবন হবে, সেখানে বর্তমানে কিছু টংঘর ও মালামাল ওঠানো-নামানোর জেটি রয়েছে। তবে কিছুদিন আগে এই টংঘর উচ্ছেদ করা হয়েছিল।

টার্মিনাল না বিপণিবিতান?: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদে সদরঘাট টার্মিনালে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক গুণ বেশি যাত্রী হয়। সে জন্য বর্ধিত টার্মিনাল নির্মাণের পেছনে কিছুটা যুক্তি রয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টে বিশেষ আবেদন জানিয়ে বর্ধিত ভবন নির্মাণের অনুমতি নেওয়া দরকার। কারণ নির্মাণস্থলটি যে নদী ও তীরভূমিতে পড়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

ওই কর্মকর্তাদের মতে, বিপণিবিতান করা হচ্ছে একটি চক্রকে বাণিজ্য-সুবিধা দিতে। এতে দোকান থাকবে সোয়া ২০০। তাঁরা বলেন, টার্মিনালের পূর্ব দিকে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিআইডব্লিউটিএ বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলে। সেখানে প্রকৃত হকারদের বাদ দিয়ে দলীয় মন্ত্রী-নেতাদের লোকদের বাণিজ্য করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত উচ্ছেদ করা হয়নি। বর্তমান বর্ধিত টার্মিনাল ভবনেও তা-ই হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্ধিত টার্মিনাল ভবন ও বিপণিবিতান নির্মাণের কাজে বিআইডব্লিউটিএর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, ঘাট ইজারাদার ও ঘাট শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীদের যোগসাজশ রয়েছে। এতে নৌ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির একাধিক সদস্যও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বলেন, ঈদের সময় যাত্রীদের সুবিধা বিবেচনা করে বর্ধিত টার্মিনাল ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৩৫-৪০ হাজার যাত্রী সদরঘাট দিয়ে যাতায়াত করে। ঈদের সময় এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচ লাখ হয়। যাত্রীদের ঠাঁই দেওয়ার জন্যই নতুন টার্মিনাল।

তাহলে ভবনের তিন ভাগ অংশে বিপণিবিতান কেন, জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, হকারদের জায়গা দেওয়াও জরুরি।

তবে সাবেক ঘাট ইজারাদার নুরুল ইসলাম ব্যাপারীর দাবি, বিপণিবিতানে কাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে, সেটি আগেই ঠিক করে রাখা হয়েছে।

শিডিউল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ: গত ১৪ আগস্ট বর্ধিত টার্মিনাল ভবনের দরপত্র আহ্বান করা হয়। শিডিউল বিক্রির সময় ছিল এক মাস। কিন্তু একাধিক ঠিকাদারের অভিযোগ, এ সময় সাধারণ ঠিকাদারদের কাছে শিডিউল বিক্রি হয়নি। বারবার শিডিউল কেনার চেষ্টা করেও তাঁরা পাননি। মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ ভবনের নবম তলায় শিডিউল বিক্রির স্থল থেকে প্রতিবারই তাঁদের বলা হয়েছে যে শিডিউল শেষ হয়ে গেছে। আবার ছাপা হলে পাওয়া যাবে।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫