জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ ॥ সিরাজগঞ্জ শহর বাঁধ হার্ড পয়েন্টে প্রতি বছর ভাঙ্গনের কারণে ত বিত এই বাঁধের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে শহরবাসী। গত দুই মাসের ব্যবধানে শহর রা বাঁধের ২টি পয়েন্টে ২শ ২০মিটার বাঁধ যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পানি উন্নয়নের কর্মকর্তারা এই ধসের জন্য প্রকৃতিকে দায়ী করছেন।
এ যমুনার পরিবর্তিত গতিপথ সিরাজগঞ্জের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রতি বছর অসময়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয় বন্যা বিধ্বস্ত বাঁধ স্পার ও গ্রোয়েন সমূহের মেরামত কাজের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা নদী তীর প্রতিরা ও বন্যা মোকাবেলায় তেমন সুফল বয়ে আনছে না।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের উজান ও ভাটি অঞ্চলে নদী ভাঙনের যে প্রকৃতি দেখা যাচ্ছে এতে জেলা সদর যমুনার অতল গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতি বছরের অসময়ে বন্যা প্রতিরোধের নামে কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ হলেও তা খরচ হয় ঠিকই, কিন্তু ভাঙন বন্ধ হয় না।
অব্যাহত ভাঙন ও বারংবার বন্যা মোকাবেলায় সরকারের অপরিকল্পিত নদী শাসন সুদূর প্রসারী পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার অভাবই দায়ী। তাছাড়া নদী তীর সংরণে সময়মত টেশসই প্রতিরা অবকাঠামো নির্মাণে অবহেলা যমুনাপাড়ের লাখে মানুষের জানমাল অরতি হয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, বহুবিধ প্রাকৃতিক বিবর্তনের প্রক্রিয়া ও নদীর উজান থেকে আসা পলিমাটির কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হওয়াই গতিপথ পরিবর্তনের মূল কারণ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান হতে প্রায় ৩৫ লাখ কিউসেক পানি যমুনা বে প্রবাহিত হয় এবং প্রতি বছর ৫শ’ মিলিয়ন টন সেন্টিমেন্ট (চিকন বালি স্তর) যমুনা নির্মিত বহুমুখী সেতুর তলদেশে আটকা পড়ে।
নদী বিশেষজ্ঞদের মতে পলিমাটির এলাকা দিয়ে প্রবাহিত সকল নদনদী পরিবর্তনশীল। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের উজান ও ভাটি অঞ্চলে নদী প্রবাহের যে আকৃতি-প্রকৃতি দেখা যাচ্ছে এতে পরিকল্পিত নদী শাসন ও রাণীগ্রাম-সিমলা সরাসরি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করলে জেলার অধিকাংশ অঞ্চল যমুনার অতল গর্ভে হারিয়ে যাবে।
সিরাজগঞ্জ শহর রার জন্য ১৯৯৬-৯৭ অর্থ বছরে এই হার্ডপয়েন্ট নির্মাণ করা হয়। এর আগে সিরাজগঞ্জ শহর রায় প্রায় ৩০ বছর প্রমত্তা যমুনার সাথে নিরন্তর যুদ্ধ করা হয়েছে। ইট ও বালির বস্তা ভর্তি করে বাঁশের পারকোপাইন ফেলা হয়েছে। রেলওয়ের ওয়াগন, সি.সি বক, এমনকি আমেরিকার চিকাগো নদী শাসনের আদলে লোহার এঙ্গেল বসানো হয়েছিলো। কিন্তু কিছুতেই অপ্রতিরোধ্য যমুনাকে বশে আনা যায়নি। করালগ্রসী যমুনা পার ভেঙ্গে সিরাজগঞ্জ শহরের সরকারি বেসরকারি অসংখ্য স্থাপনা গ্রাস করেছে।
সিরাজগঞ্জ মুল শহর যমুনাপার থেকে ৩ কিঃ মিঃ পশ্চিমে সরে আসে। ১৯৯৬-৯৭ অর্থ বছরে সরকারি বি.এল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে রানীগ্রাম গ্রোয়েন পর্যন্ত আড়াই কিঃ মিঃ এই বাঁধ নির্মাণের জন্য বিদেশী পরামর্শক, ডিজাইন ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়।
কোরিয়ার হুন্দাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাঁধ নির্মাণ করে। এতে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা। নির্মাণ শেষে হার্ডপয়েন্টের স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছিল এক শ’ বছর। কিন্তু এক যুগ যেতে না যেতেই ২০০৯ সালের জুলাই মাসে শহর রা বাঁধে ধ্বস নামে। গত ৪ বছরে ৭ বার বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ধ্বস নামে। শহর রা বাঁধের ২ কিলোমিটা ঝুকিপূর্ণ্য থাকায় শহরবাসীর মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরই) শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজিদুর রহমান সরদার বলেন, শহর রা বাঁধের ধ্বস ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। নদী তলদেশে ঘৃর্ণাবর্তটি এতই শক্তিশালী যে তাকে রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ব্যথমেটিক সার্ভে করে নদীর গতিপথের দিকে ল্য রেখে ব্লক ও বালুর বস্তা নিপে করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গনরোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই।