জেলা প্রতিনিধি, খুলনা ॥ দেশ আজ ডাকাতের হাতে পড়েছে মন্তব্য করে বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশকে বাঁচাতে হলে হাসিনাকে হঠাতে হবে। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তার আহ্বান ‘হঠাও হাসিনা বাচাও দেশ’, হঠাও আওয়ামী লীগ বাঁচাও দেশ। ঈমান রার জন্য তিনি একই আহ্বান জানান। গণতন্ত্র ও দেশরায় প্রশাসন এবং সশস্ত্রবাহিনীর ঐক্য আর সহযোগিতাও চেয়েছেন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া। আলোচিত রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে দেবেন না বলে খুলনাবাসীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন। খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে বিএনপি চেয়ারপার্সন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমতে মতায় গেলে আমরা নতুনধারার সরকার পরিচালনা করব। আমাদের নতুনধারার সরকারের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। দলের বাইরের ভালো লোকদেরও সে সরকারে আনা হবে। প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, ঐক্য ও উন্নয়নের রাজনীতিই হবে সে সরকারের বৈশিষ্ট্য। এ সময় তিনি বর্তমান সরকারের কড়া সমালোচনা করে বলেন, এই আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে দেশকে অন্যের হাতে তুলে দিতেও পারে। গার্মেন্ট সেক্টরে ষড়যন্ত্র চলছে। বৃষ্টির মধ্যেও দীর্ঘ ৫৫ মিনিটের বক্তব্যে তিনি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।
শুরুতে বৃষ্টিভেজা লাখো জনতাকে ধন্যবাদ জানান বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, যশোর থেকে খুলনা আসতে দেখেছি রাজপথে মানুষের অভাবিত সমাগম। সারাদেশেই এমন চিত্র। যেদিকে গেছি, মানুষের ঢল দেখেছি। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা আমাদের বলেছে, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আপনারা তাদের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। এমনকি প্রতিদিন টকশো-তে আলোচকরাও সবাই বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, এখনও সময় আছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করুন। নইলে দেশের মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছে। রাস্তায় মানুষের মধ্যে যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেখেছি তা নেভানোর সাধ্য আপনাদের নেই। বাইরের কারো সহযোগীতা নিয়ে নির্বাচন করে জিতবেন? সেটা হবে না। দেশের জনগন যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যাবে। জনগনের পে থেকে তারাও নিজেদের স্বার্থ রা করতে চেষ্টা করবে। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা পরিস্কার বলে দিতে চাই- শেখ হাসিনা ও বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। আমরা আগামী ২৫শে অক্টোবর পর্যন্ত অপো করব। তারমধ্যে সরকার নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে না নিলে আমরা কর্মসূচি দেব। ১৮দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেন, আমি কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে আসিনি। বলতে এসেছি, হঠাও আওয়ামী লীগ বাঁচাও দেশ। হঠাও হাসিনা বাঁচারও দেশ। দেশ, দেশের মানুষ ও ঈমান রায় আওয়ামী লীগ হঠাতে হবে। এজন্য জোরদার আন্দোলন করতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমাদের দেখা হবে রাজপথে। হয় খুলনায়, নয় ঢাকায়।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের ব্যাপারে ১৮দলের দাবির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে খালেদা জিয়া বলেন, কেন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছি আমরা তার ব্যাখ্যা দিয়েছি। তিনি বলেন, বর্তমান বিচার বিভাগ দলীয়করণ করা হয়েছে। পুরো প্রশাসন দলীয়করণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, ডিসি, এসপি, টিএনওসহ সব জায়গায় দলীয়করণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা যদি মতায় থেকে নির্বাচন করে তারা তো শেখ হাসিনার কথাই শুনবে। পুলিশ এখন রাস্তায় মিটিং করার জন্য আমাদের জায়গা দেয় না। নির্বাচন এলে তো ঘরের মধ্যেও মিটিংই করতে দেবে না। তারা তাদের চাকরি বাচাতে শেখ হাসিনার কথায় চলবে। খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি অথর্ব ও মেরুদ-হীন। তাদের সত্য কথা বলার সাহস নেই। এ কমিশনকে দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। প্রধানমন্ত্রী বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন। যা ডাহা মিথ্যা কথা। তারা পারবে না। আমরা ভুয়া ভোটারের কথা বলেছিলাম। এখনও পত্রপত্রিকায়ও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু কমিশন কোন উদ্যোগ নেয়নি। ১৮দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া খুলনাবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনাদের মনে আছে? ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন নির্বাচন কেন হলো না? আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও শেষ মুহূর্তে বয়কট করেছিল। সেদিন আওয়ামী লীগ বিচারপতি কেএম হাসানকে মেনে নেয়নি। তিনি তো দলীয় লোক ছিলেন না। এখন আওয়ামী লীগ যদি বিচারপতি কেএম হাসানের অধীনে নির্বাচন মেনে নিতে না পারেন তবে আমরা কিভাবে আওয়ামীলীগ বা শেখ হাসিনাকে মেনে নেব? তার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না, করতে দেয়া হবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ অনেক আন্দোলন করেছিল। তারা বলেছিল, বিএনপির অধীনে নির্বাচন করবে না। তাই তত্ত্বাবধায়ক দরকার ছিল। তারা যখন চেয়েছিল তখন তো সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিল না। কিন্ত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সেদিন মেনে নিয়েছিলাম। সংবিধানে এ বিধান সংযোজন করেছিলাম। তারা তখন দাবি করেছিল, এটা তাদের আন্দোলনের ফসল। তারা তো সবকিছুকেই তাদের আন্দোলনের ফসল দাবি করে। এখন কেন তারা বলছেন, এ বিধান সংবিধানে নেই। তারা তো নিজেদের মতো করে এটা পরিবর্তন করেছে। আদালতের দোহাই দিলেও এ েেত্র আদালতের কথা মানে নি। আদালতও বলেছিল আগামী দুইটি নির্বাচন এ বিধানের অধীনে হতে পারে।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেন, খুলনার রামপালে সরকার বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে চাইছে। আমরাও বলেছি, দেশে বিদ্যুৎ সমস্যা প্রবল। আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন। আমরাও বিদ্যুৎ কেন্দ্র চাই। তবে রামপালের মতো জায়গায় হবে না, হতে দেয়া হবে না। কারণ রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ও জীববৈচিত্র্যের তি হয়ে যাবে। তাই কোনভাবেই রামপালের মতো জায়গায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে দেয়া হবে না। তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ-বিদ্যুৎ-বন্দররা জাতীয় কমিটির প্রতিবাদের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। যখন যে সহযোগিতা লাগে আমাদের বলবেন। আমরা আমাদের সহযোগিতা করব। দেশের স্বার্থে এক সঙ্গে কাজ করব। সরকারের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের অজুহাতে সরকার কুইক রেন্টাল করেছে। মানুষ কুইক বিদ্যুৎ পায়নি, কিন্তু সরকারের লোকজন কুইক দুনীর্তি করেছে, কুইক অর্থ পাচার হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার নিজেরা একদলীয় নির্বাচন করতে চাচ্ছে। তারা জনগণকে ভয় পাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীরা নানা রকম কথা বলছেন। তবে ২৪শে অক্টোবর পর্যন্ত এ সরকারের মেয়াদ রয়েছে। তারা ভদ্রলোক হয়, তবে নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিয়ে তারপরই মতা ছেড়ে দেবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে, দেশের মানুষ এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেবে না। তাই একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন না করলে তাদের ঘরে চলে যেতে হবে। আমি সরকারি কর্মকর্তাদের বলতে চাই, নির্ভয়ে কাজ করুন। আপনাদের চাকরি যাবে না। অন্যায়ভাবে কারও চাকরি গেলে আমরা তাদের চাকরি ফেরত দেব। খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের সেই নেতার উদ্দেশে বলেন, তাকে বলতে চাই, সরকারি কর্মকর্তাদের ঘরে যেতে হবে না আপনাদেরই ঘরে যাবার সময় হয়েছে। বিএনপি মতায় গেলে সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ে চাকরি খাবে এমন অপপ্রচারের জবাব দিয়ে বলেন, আমরা কারও চাকরি খাব না। আমরা প্রতিশোধ প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করি না। খালেদা জিয়া পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, সরকার দাবি না মানলে আগামী ২৫শে অক্টোবরের পরে কর্মসুচি দেব। আমরা দেশের স্বার্থে আন্দোলন করছি। জুলুম-অত্যাচার করবেন না। এমন কোন কাজ করবেন না যাতে দেশের গণতন্ত্র নষ্ট হয়। দেশের মানুষের সমর্থন আমরা পেয়েছি। আমি দেশের সিভিল প্রশাসন, মিলিটারি, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি সবার সহযোগীতা চাই। সবার ঐক্য চাই। দেশ রা, গণতন্ত্র রা ও দেশের মঙ্গলের জন্য।