জেলা প্রতিনিধি, ॥ খুলনায় রোববার আসছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
তার আগমণ উপলে নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন প্রত্যাশার পারদ তৈরি হয়েছে, তেমনি প্রত্যাশা রয়েছে খুলনাবাসীর মনেও।
তবে সবারই দাবি একটাই বৃহত্তর খুলনার উন্নয়ন।
নেতাকর্মীরা নেতাকে কাছে পাওয়ার আশায় রয়েছেন আর খুলনাবাসী দেখতে চান খালেদা জিয়া কী কী প্রতিশ্রুতি দেন খুলনা নগরীর উন্নয়নে।
শিল্পনগরী খ্যাত খুলনার বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ‘আমরা দল বুঝি না। চাই এলাকার উন্নয়ন। তারা অনেকটা ােভের সঙ্গেই বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা উন্নয়নের জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু, তার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি; যার ফলে খুলনা রয়ে গেছে এক অবহেলিত নগরীতেই। ফলে, তারা নিরাশ হয়েছেন।
তারা জানান, পদ্মাসেতু থেকে শুরু করে শহর-গ্রামের সরু রাস্তাঘাট নির্মাণ হয়নি। অথচ এ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল পদ্মাসেতু থেকে শুরু করে এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের।
এ এলাকার মানুষের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে, খুলনায় আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ, পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ, পদ্মাসেতু নির্মাণ, মংলা বন্দরের অবকাঠামোর উন্নয়ন, খানজাহান আলী বিমান বন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ করা, শেখ আবু নাসের হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া, খুলনা-মংলা রেললাইন স্থাপন, নিউজপ্রিন্ট-দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি চালু, মংলা বন্দর থেকে ভোমরা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালু, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ, ১১০ ও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার, ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে এমনকি এই সরকারের শাসনামলেও তিনি দুইবার খুলনায় এসে খুলনাবাসীর এই সব দাবি বাস্তবায়নের কথা বলেছিলেন। কিন্তু, কিছুই হয়নি। তাই, খুলনাবাসী দেখতে চায় কী বলতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া! যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, এটা খালেদা জিয়ার নির্বাচনী সভা নয়।
খুলনাবাসীর প্রত্যাশা নিয়ে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক শেখ মো. গাউসুল আজম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জনসভায় খুলনার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি চাই। বিশেষ করে বিমান বন্দর, মংলা বন্দরের উন্নয়ন ও পদ্মাসেতু নির্মাণের।’
একটি বেসরকারি স্কুলের শিক মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা রাজনীতি বুঝি না। চাই এলাকার উন্নয়ন।’
তিনি দাবি করেন, ‘আগামীতে খালেদা জিয়া যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তবে তিনি যেন অবহেলিত খুলনার উন্নয়ন করেন।’
তবে তিনি এও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কাছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মতো গালভরা ফাঁকা বুলি শুনতে চাই না। কিছু উন্নয়ন চাই।’
রিকশাচালক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কাছে হাসিনার মতো প্রতিশ্রুতি চাই না। আমরা চাই, কাজ। ভালো রাস্তাঘাট, যেখানে রিকশা-গাড়ি ভালোভাবে চালানো যাবে।’
তিনি বলেন, ‘হাসিনা যদি কাজ করতো খুলনা ঝকঝক করতো।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থী শরীফা খাতুন বলেন, ‘বরাবরই খুলনা অবহেলিত। আশা করি, আগামীতে খালেদা জিয়া যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তবে খুলনার উন্নয়ন করবেন, এমন প্রতিশ্রতিই রোববারের জনসভা থেকে শুনতে পাবো।’
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ‘পৃথিবীর সব থেকে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের মধু এবং বঙ্গোপসাগরের উর্বর ভূমি, বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত পাট, সমুদ্র বন্দর, দেশের সর্ববৃহৎ ইপিজেড, দেশের উপকূলের সব থেকে গভীর এলাকা সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড থাকা সত্ত্বেও খুলনাঞ্চল আজও অনুন্নত।’
শেখ আশরাফ উজ জামান আরো বলেন, ‘আশা করি, আগামীতে যদি খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহারে এ অঞ্চলের উন্নয়নের প্রতিশ্রতি রাখবেন এবং বাস্তবায়ন করবেন।’