স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিনণ গোনা শুরুই হয়ে গেছে। এখন অপো কখন পুরোহিত ভক্তিমনে চণ্ডি থেকে পাঠ করবেন- ‘ও দেবী সর্বেভূতেসু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমোঃ নমোঃ’।
শরৎকালের এ মহাপূজাতে বাঙালির হৃদয়ে দেবীর অধিষ্ঠান হয় কন্যারূপে। বাঙালি হিন্দুরা মনে করেন শারদ উৎসবের মধ্য দিয়ে কন্যাস্থানীয় দেবী যেন সপরিবারে তিনদিনের জন্য পিতার গৃহে আসেন। এর মধ্যে চিরায়ত বাঙালি মননের পরিচয় ফুটে ওঠে। মাতৃরূপে দুর্গাপূজার মাধ্যমে তখন ভক্তরা মাতৃভূমি ও মানবের মঙ্গল কামনায় মগ্ন থাকেন। সমাজের উঁচু, নিচু বিভেদ ভুলে সর্বস্তরের মানুষকে একত্রিত করে মহাসম্মিলন ঘটানো হয় বলেই এ পূজা সার্বজনীন পূজা। উৎসবকে সামনে রেখে ভিন্ন আমেজ বইতে শুরু করেছে। বাঙালি হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ দুর্গোৎসব আগামী ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু এবং ১৪ অক্টোবর সোমবার বিজয়া দশমীর পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচির। পুরাণ অনুযায়ী ‘দুর্গা’ শব্দটির ‘দ’ বর্ণটি দৈত্যনাশক (বিপদ), ‘উ’ বিঘœনাশক, ‘র’ রোগনাশক, ‘গ’ পাপ নাশক, ‘আ’ ভয় ও শত্রুনাশক। এ পূজার মাধ্যমে ভক্তরা জীবনের সমস্ত য় কাটিয়ে মুক্তির প্রার্থনা করেন। দুর্গা প্রতিমার দশ হাত দশ দিকের নির্দেশক। ত্রিনয়ন একটি চন্দ্রস্বরূপ, আর একটি সূর্যস্বরূপ, তৃতীয়টি হলো অগ্নিরূপ।
সারাদেশের সব মণ্ডপে চলছে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রস্তুতি। নর-নারী, তরুণ-তরুণী এমনকি বৃদ্ধ-বৃদ্ধরাও দেবীর আশীর্বাদ পাওয়ার আশায় প্রতিজ্ঞায় প্রহর গুনছে পূজার এ শুভ লগ্নে। এ বছর দেবী দোলায় আগমন করবেন এবং গজে গমন করবেন বলে সূত্রে জানা যায়।
হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার বাকি আর কয়েক দিন। শারদীয় উৎসব জমিয়ে তুলেছে প্রতিমা তৈরি। মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সব মৃৎশিল্পী। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এমনকি শহরের বাসা-বাড়িতে পারিবারিক মন্দিরগুলোতে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।
কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে পূজার ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা গেছে। দেবীকে স্বাগত জানাতে সবখানেই এখন সাজ-সাজ রব। মণ্ডপে মণ্ডপে মাটি আর খড়ের গন্ধ মিলেমিশে একাকার। কোথাও দেবীর হাতের আঙ্গুল বানানো হচ্ছে। কোথাও আবার পরম যতেœ শিল্পী তৈরি করছেন দেবীর মুখের ছাঁচ। নিরাভরণ দুর্গা প্রতিমার দিকে দৃষ্টি ফেললে মনে হচ্ছে শিল্পীর হাতের জাদুতে মহালয়ার আগেই প্রাণ পেয়েছে দেবী দুর্গা।
পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার আর শাঁখারীবাজার ঢাকার সবচেয়ে জনবসতি ও ঘিঞ্জি এলাকা। হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রধান এলাকা। শুধু পুরান ঢাকার নয়, নতুন ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা থেকে প্রতিবছরই পূজা দেখতে ছুটে আসেন হাজারো দর্শনার্থী। তাদের জানানো যাচ্ছে এ দুই এলাকায় তারা একে একে দেখতে পাবেন ২৫/৩০টি প্রতিমা। শুধু শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজার নয়, আশপাশের লক্ষ্মীবাজার, ফরাশগঞ্জ, আরমানিটোলাসহ সব এলাকায় এখন বিরাজ করছে পূজার আমেজ। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নয়, সব ধর্মের মানুষই এখন পূজার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কারণ, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’।
রামকৃষ্ণ মঠেও পালদের ব্যস্ততা। তৈরি হচ্ছে মা দুর্গার প্রতিমা। মালিবাগ, মৌচাক, সিদ্ধেশ্বরীসহ এর আশপাশের এলাকার সবচেয়ে বড় পূজার আয়োজন করে থাকে সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির। মা আনন্দময়ীর হাতে গড়া মন্দির গত প্রায় দুই যুগ ধরে আয়োজন করে আসছে দুর্গাপূজার। সর্বজনীন কল্যাণ কামনায় আয়োজিত শারদীয় উৎসব উপলে মন্দিরটিতে এখন চলছে শেষ প্রস্তুতি। এছাড়া গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডির মতো অভিজাত এলাকাসহ নগরীর বাকি মণ্ডপেও প্রতিমা তৈরির কাজ বেশ চলছে।
প্রতিমা তৈরির মূল উপাদান মাটি ও খড় দিয়ে কাঠামো তৈরি। এরপর শিল্পীর প্রতিমা তৈরির দতা ও শিল্পিত রূপ। এরপর বাকি সাজসজ্জা দিয়ে পূর্ণতা দেয়া হবে দেবী দুর্গার সম্মোহনী শক্তির।