স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকারের আমলে রাজপথে সহিংস আন্দোলনে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পড়েছে পুলিশ প্রশাসন। এ কথা নিশ্চিত করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোট সরকার মতায় আসার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে দলটির নেতাকর্মীরা।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলান মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি আবদুল কাদের মোল্লা, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা ইউসূফ, মাওলানা আবদুস সোবহানের মুক্তির দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে জামায়াত-শিবিবের নেতাকর্মীরা রাজপথে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
আর গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত ও দলটির অভিযুক্ত নেতাদের বিচার ঠেকাতে এবং গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বাতিল, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্ত করতে রাজপথে একের পর এক তাণ্ডবলীলা চালাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধও করেনি জামায়াত-শিবির। শুধু তাই নয় সর্বশক্তি নিয়ে আক্রমণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। একে একে সব হামলার পর পুলিশ প্রশাসন কঠিন ধৈর্যের পরিচয় দেয়। কিন্তু তাতেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মার খেয়ে রাজপথে প্রাণ হারাতে হয় ১২ পুলিশ সদস্যকে। আহত হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহু সদস্য। বাধ্য হয়ে সরকার জামায়াত-শিবিরকে রাজপথে দমনের কঠোর নির্দেশ দিলে শুরু হয় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশন।
এ নির্দেশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে সংগঠনের হাজার হাজার নেতকর্মীকে। আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য রিমান্ডে নেয়া হয় শীর্ষ নেতাদের এবং দায়ের করা একাধিক মামলা। তবুও থেমে থাকে না এ সংগঠনের নেতার্কীদের রাজপথে জ্বালাও-পোড়াও এবং ভাঙচুর কার্যক্রম। আটককৃত নেতাকর্মীরা জামিন নিয়ে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্থান পরিবর্তন করে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যায় পরিকল্পনা মাফিক। এ কথা জানিয়েছেন পুলিশের এক এডিসি। তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় পাওয়া যায় এককর্মী অথবা এক নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা।
অপরদিকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জামায়াতের ডাকা হরতালের দিন সকালে পিকেটিং করার সময় পুলিশ আটক করে শিবিরের এক কর্মীকে। অতীত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে রাজধানীর কয়েকটি থানায় রয়েছে একাধিক মামলা। বিভিন্ন সময়ে আটক হওয়ার পর এ কর্মীকে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখার অপরাধে পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয় বহুবার। এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শুধু এই থানায় নয়, পুরো পুলিশ প্রশাসন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের এ ধরনের তৎপরতায় ত্যক্ত-বিরক্ত।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর থকে রাজপথে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগে গত দু’বছরে রাজধানীর সব থানায় শত শত মামলা হয়েছে হাজার হাজার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। আটক করা হয় অনেককে। একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কয়েকটি থানার বিভিন্ন কর্মকর্তা।
অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং উপজেলা পর্যায়ে থানায়ও একই অবস্থা।